যতি নরসিংহানন্দ গিরি। ছবি: সংগৃহীত।
হাজারখানেক লোকের দলবল নিয়ে ভারত থেকে ইজ়রায়েলে গিয়ে হামাসের বিরুদ্ধে একেবারে বিনে পয়সায় যুদ্ধ লড়তে তৈরি তিনি। শুধু ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কাছ থেকে অনুমতি আর সে দেশে ঢোকার ভিসা পাওয়াটা দরকার। সে জন্য অবশ্য নেতানিয়াহুর কাছে আর্জিও জানিয়েছেন তিনি।
তিনি উত্তরপ্রদেশের উগ্র হিন্দুত্ববাদী নেতা তথা একাধিক ঘৃণাভাষণের মামলায় অভিযুক্ত যতি নরসিংহানন্দ গিরি। ছড়িয়ে পড়া একটি ভাইরাল ভিডিয়োয় যতির এই যুদ্ধে যোগদানের ইচ্ছের কথা শোনা গিয়েছে। এবং সেখানে নিজের তীব্র মুসলিম-বিদ্বেষকে গোপনও করেননি এই উগ্র হিন্দুত্ববাদী নেতা। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের দু’জনেরই শত্রু এক।’’
ক’দিন আগেই উত্তরপ্রদেশ পুলিশের হাতে মারধর খেয়ে ক্যামেরার সামনেই বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে রীতিমতো গালিগালাজ করেছিলেন তিনি। এ বারে যুদ্ধে যোগদানের ইচ্ছের কথা জানিয়ে সঙ্গীসাথীদের পিছনে দাঁড় করিয়ে রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠকও করেছেন যতি। জানিয়েছেন, নেতানিয়াহুর অনুমতি পেতে ১৬ অক্টোবর দিল্লিতে ইজ়রায়েলের দূতাবাসে গিয়ে সে দেশে যাওয়া এবং যুদ্ধে নামার আর্জি জানাবেন।
চলতি ইজ়রায়েল বনাম হামাস যুদ্ধে ভারতে এ রকম যতির সংখ্যা অবশ্য কম নয়। তীব্র মুসলিম বিদ্বেষ থেকেই ইজ়রায়েলকে সমর্থন করার পাশাপাশি অনেকে যেমন ইজ়রায়েলের হামলার নিহত প্যালেস্টাইনি শিশুর মৃতদেহ নিয়ে মশকরা করছেন, তেমনই অনেকে আবার সরাসরি সে দেশে নিয়ে যুদ্ধে নামার অনুমতি চেয়ে নিয়মিত সামাজিক মাধ্যমে কাকুতিমিনতি করে চলেছেন। এ দেশের সেনা-পুলিশ-আধা সামরিক বাহিনীতে যোগ না দিলেও ইজ়রায়েলে গিয়ে সেনার উর্দি গায়ে চাপিয়ে যুদ্ধে নামার প্রবল ইচ্ছে তাঁদের।
ভারতীয়দের একাংশের এমন কাকুতিমিনতিতে চমকে গিয়েছেন ভারতে ইজ়রায়েলের রাষ্ট্রদূত নাওর গিলন। এমনিতে চলতি যুদ্ধে পশ্চিমের বেশির ভাগ দেশের সরকার ইজ়রায়েলকে অর্থ এবং অস্ত্র দিয়ে দেদার সাহায্য করলেও সে সব দেশের আমজনতার বড় অংশ এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলি ইজ়রায়েলের যথেচ্ছ যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে নিয়মিত সুর চড়াচ্ছেন। নিয়মিত পথে নামার পাশাপাশি সরকারের নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে
তাঁরা অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করার দাবিও জানাচ্ছেন। ব্যতিক্রম ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা।
না চাইতেই এমন সমর্থনে অভিভূত ইজ়রায়েলের রাষ্ট্রদূত। প্যালেস্টাইন নিয়ে ভারতের পুরনো অবস্থানকে অগ্রাহ্য করে যুদ্ধে যে ভাবে ইজ়রায়েলকে সমর্থন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর দলের লোকেরা, তাতে কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি একটি সংবাদমাধ্যমকে গিলন বলেই দিয়েছেন, ‘‘ভারত থেকে এত লোক স্বেচ্ছাসেবক হতে চেয়েছেন যে ইজ়রায়েল আরও একটা আলাদা সেনাবাহিনী তৈরি করে ফেলতে পারে!’’ সে মন্তব্য অবশ্য কৃতজ্ঞতা না কটাক্ষ, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। কিন্তু আপাতত সে সব থেকে চোখ সরিয়ে পেগাসাসের দেশে যেতে চান যতিরা।