নরেন্দ্র মোদী এবং নীতীশ কুমার। —ফাইল চিত্র।
দল থেকে মাত্র একজনকে পূর্ণ মন্ত্রী করার প্রস্তাব দিয়েছিল বিজেপি। যে কারণে শেষ মুহূর্তে শপথ থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন নীতীশ কুমার। এ বার আরও কড়া অবস্থান নিল সংযুক্ত জনতা দল (জেডিইউ)। ভবিষ্যতে আর কখনও এনডিএ নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় শামিল হবে না বলে জানিয়ে দিল তারা।
দলের হয়ে রবিবার এই ঘোষণা করেছেন জেডিইউ-এর সাধারণ সম্পাদক তথা প্রধান মুখপাত্র কে সি ত্যাগী। সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় শুধুমাত্র একজনকে পূর্ণ মন্ত্রী করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। জেডি (ইউ)-এর পক্ষে যা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। তাই ভেবেচিন্তে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। ভবিষ্যতে আর কখনও এনডিএ নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় অংশ নেব না। এটাই আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।’’
দল থেকে মাত্র একজনকে পূর্ণ মন্ত্রী করার প্রস্তাব যে তাঁর মনঃপুত হয়নি, তা আগেই খোলাখুলি জানিয়েছিলেন নীতীশ কুমার। ৩০ মে দলীয় সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘জেডি (ইউ) থেকে মাত্র একজনকে মন্ত্রী করার প্রস্তাব দিয়েছিল বিজেপি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় এই নামমাত্র উপস্থিতি আমাদের চাই না বলে ওদের জানিয়ে দিয়েছি।’’
আরও পড়ুন: সোশ্যাল মিডিয়ায় কী করেন, মার্কিন ভিসা পেতে এ বার দিতে হবে তারও হিসেব
ওই দিন সন্ধ্যায় রাইসিনা হিলে নরেন্দ্র মোদীর শপথগ্রহণে হাজির হলেও, তার একদিন পর ফের সংবাদামাধ্যমে মুখ খোলেন নীতীশ। তিনি বলেন, ‘‘মন্ত্রিসভায় নামমাত্র উপস্থিতির চেয়ে বাইরে থেকে সরকারকে সমর্থন করব আমরা। তা ছাড়া একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বিজেপি। জেডি (ইউ)-এর সমর্থন নিয়ে দুশ্চিন্তার প্রয়োজনই নেই ওদের।’’
মোদী সরকারের প্রথম দফাতেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অংশ ছিল না নীতীশ কুমারের জেডি (ইউ)। ২০১৭-য় রাষ্ট্রীয় জনতা দল ও কংগ্রেসের জোট থেকে বেরিয়ে এসে বিহারে বিজেপির হাত ধরে তারা। বিজেপির সুশীলকুমার মোদী বিহারের উপ মুখ্যমন্ত্রী হন। এ বছর লোকসভা নির্বাচনে ১৬টি আসনে জয়লাভ করে জেডি (ইউ)। ১৭ আসনে বিজয়ী হয় বিজেপি। তার পরই মন্ত্রিত্ব নিয়ে টানাপড়েন শুরু হয়।
অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে নাম তুলে নেওয়ার পর রবিবার বিহার মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ ঘটান নীতীশ কুমার। লোকসভা নির্বাচনে বেশ কয়েকজন বিধায়ক সাংসদ নির্বাচিত হওয়ায়, শূন্যস্থান পূরণ করতে এ দিন ৮ জন নতুন মন্ত্রী নিয়োগ করেন তিনি। কিন্তু এই নয়া ৮ মন্ত্রীর সকলেই সংযুক্ত জনতা দলের নেতা। শরিক দল বিজেপির কেউ নেই সেখানে। জায়গা হয়নি জোটের আর এক শরিক লোক জনশক্তি পার্টিরও। তবে সুশীলকুমার মোদীর দাবি, বিজেপির একজনকে মন্ত্রী করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন নীতীশ কুমার। এ দিন টুইটারে সুশীল লেখেন, ‘বিজেপিকে শূন্যস্থান পূরণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন নীতীশ কুমার। তবে বিজেপি ভবিষ্যতে তা পূরণ করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ পরে নয়া মন্ত্রীদের শপথগ্রহণের ছবিও টুইট করেন তিনি।
সুশীল মোদীর টুইট।
আরও পড়ুন: হাঁসফাঁস গরম থেকে মুক্তি, কলকাতা-সহ রাজ্যের নানা প্রান্তে স্বস্তির বৃষ্টি
রাজ্য মন্ত্রিসভায় কে, ক’টা আসন পাবে তা আগে থেকেই স্থির ছিল বলে এ দিন জানান নীতিশ কুমারও। তাঁর দাবি, ‘‘যখন জোট হয়েছিল, তখনই কে, ক’টা আসন পাবে স্থির হয়ে গিয়েছিল। জেডি (ইউ) এর আসন খালি হয়ে গিয়েছিল। তাই বাড়ানো হয়েছে।’’
তবে তাঁরা বিষয়টিকে হালকা ভাবে দেখালেও, রাজনৈতিক মহলে ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আশানুরূপ জায়গা না পেয়েই কি রাজ্যে শরিকদলের প্রতি বিরূপ আচরণ করছেন নীতীশ? উঠে আসছে এমন প্রশ্নও।