মানহানির মামলা করলেন হিমন্তবিশ্ব শর্মার স্ত্রী রিণিকি ভুইয়াঁ শর্মা।
কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈয়ের বিরুদ্ধে ১০ কোটি টাকার মানহানির মামলা করলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার স্ত্রী রিণিকি ভুইয়াঁ শর্মা। অভিযোগ, রাজ্য সরকারের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্পে দুর্নীতির ‘ভুয়ো’ অভিযোগ তুলেছেন গগৈ।
রিণিকির আইনজীবী দেবজিৎ সাইকিয়া জানান, শুক্রবার কামরূপের নগর দায়রা আদালতে গগৈয়ের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করা হয়েছে। এক্স হ্যান্ডলে একাধিক পোস্টের জন্য গগৈয়ের বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়েছে।
গগৈয়ের অভিযোগ ছিল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কৃষকদের জন্য ‘কিষাণ সম্পদ’ প্রকল্পে ভর্তুকির কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু অসমের মুখ্যমন্ত্রী প্রভাব খাটিয়ে নিজের পরিবারের জন্যেও ভর্তুকির বন্দোবস্ত করে ফেলেছেন। হিমন্ত এই অভিযোগ খারিজ করে জানিয়েছিলেন, তাঁর স্ত্রী যে সংস্থার সঙ্গে যুক্ত, তার কেউই সরকারের থেকে ভর্তুকি নেননি। এর পরেই গৌরব কেন্দ্রীয় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রকের ওয়েবসাইটের লিঙ্ক প্রকাশ করে এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) লেখেন, ‘‘খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে স্পষ্ট ভাবে ব্যক্তিটির নাম এবং তিনি যে কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত তা বলা হয়েছে। ১০ কোটি সরকারি অনুদানও অনুমোদনের কথা জানানো হয়েছে। ওয়েবসাইটটি হ্যাক হয়ে থাকলে দয়া করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে রিপোর্ট করুন।’’
২০২১ সালে হিমন্তের স্ত্রী রিণিকি এবং তাঁদের পুত্র নন্দিলের নির্মাণ সংস্থার বিরুদ্ধে অবৈধ ভাবে ২৯ বিঘা সরকারি জমি দখলের অভিযোগ এনেছিল একটি সমীক্ষা সংস্থা এবং সংবাদমাধ্যমের একাংশ। এর পর চলতি মাসেই ‘ক্রসকারেন্ট’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের তরফে আরটিআই করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দেখানো হয়, হিমন্ত মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেই নগাঁও জেলায় কলিয়াবরে দারগাজি গ্রামের পাঁচ বাসিন্দার কাছ থেকে ৫০ বিঘা ২ কাঠা কৃষিজমি কেনেন হিমন্তের স্ত্রী রিণিকি। কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তন করে সেখানে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের সংস্থা স্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্পদ যোজনা থেকে ১০ কোটি টাকার সরকারি সাহায্যও আদায় করে রিণিকির সংস্থা ‘প্রাইড ইস্ট এন্টারটেনমেন্ট’।
বেশ কিছু সংবাদ এবং বিনোদন চ্যানেল, চা বাগান, হোটেল, রিসর্ট, স্কুল, সংবাদপত্র-সহ বহু ব্যবসায় জড়িত রিণিকির মালিকানাধীন ওই প্রতিষ্ঠান। কিন্তু নিয়ম হল, সিলিং আইনানুযায়ী কেউ ৪৯.৫ বিঘার বেশি কৃষিজমির মালিক হতে পারেন না। ‘ক্রসকারেন্ট’-এর দাবি, তাই মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী জমি কেনার পরেই তার শ্রেণি বদলে শিল্পোদ্যোগে ব্যবহারযোগ্য জমি করে দেওয়া হয়। তার ভিত্তিতে ‘প্রাইড ইস্ট এন্টারটেনমেন্ট’ সেখানে ‘অ্যাগ্রো প্রসেসিং ক্লাস্টার’ নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে কেন্দ্রীয় সাহায্যের আবেদন করে এবং ১০ কোটি টাকা পেয়েও যায়। গোটা প্রক্রিয়া মাত্র ১০ মাসের মধ্যে সম্পন্ন হয়।
কংগ্রেস, তৃণমূল, রাইজর দল, অসম জাতীয় পরিষদের মতো বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর পরিবার প্রভাব খাটিয়ে কৃষিজমির চরিত্র বদলে দিচ্ছে, কেন্দ্রের সাহায্য আদায় করছে। কৃষকদের জমি গায়ের জোরে দখল করছে। রিণিকির সংস্থার বিরুদ্ধে অতীতেও আরটিআইয়ের মাধ্যমে জোগাড় করা তথ্যে কামরূপের বঙ্গোরা এলাকায় ভূমিহীনদের জন্য বরাদ্দ ১৮ একর জমি দখল করার ‘প্রমাণ’ মিলেছিল। বিভিন্ন প্রমাণ তুলে ধরে হিমন্ত এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে কোভিডের সময়ে স্যানিটাইজ়ার এবং পিপিই কিট কেনা নিয়ে কেলেঙ্কারির অভিযোগও এনেছিল ‘ক্রসকারেন্ট’। যদিও প্রতি বারেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হিমন্ত।