রাজস্থানের সিপিএম রাজ্য সম্পাদক অমরা রাম। —গ্রাফিক সনৎ সিংহ।
শনিবার বেশি রাতে সিপিএমের এক পলিটব্যুরোর সদস্য ঘরোয়া আলোচনায় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলছিলেন, রাজস্থানে গত বারের দু’টি আসন এ বার তাঁরা তো জিতবেনই। ঝুলিতে আরও একটি আসন যোগও হতে পারে। যদিও রবিবার ফলপ্রকাশের পর দেখা গিয়েছে, মরুরাজ্যেও বাংলার মতোই ‘শূন্য’ হয়ে গিয়েছে সিপিএম। সেই হারের ২৪ ঘণ্টা কাটার আগেই রাজস্থান সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক অমরা রাম আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়ে দিলেন হারের মূল কারণ কী। বাংলায় হলে অবশ্য রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী, জেলা কমিটি ইত্যাদি স্তরের পর্যালোচনার বিষয় থাকত। কিন্তু রাজস্থানের সিপিএম রাজ্য সম্পাদক অমরা সে সব ‘আমলাতান্ত্রিকতা’য় গেলেন না।
হারের মূল কারণ কী? অমরার স্পষ্ট কথা, ‘‘মেরুকরণের রাজনীতির সামনে আমরা হেরে গিয়েছি। সেই মেরুকরণ কোথাও ধর্মীয়, কোথাও আবার জাতপাতের। আমরা আমাদের কথা বলে ভোট চেয়েছিলাম। কিন্তু জয়ের জায়গায় পৌঁছতে পারিনি।’’ ২০১৮ সালের বিধানসভা ভোটে রাজস্থানে দু’টি আসন জিতেছিল সিপিএম। দুঙ্গারগঢ় থেকে গিরিধারীলাল মাহিয়া এবং ভদ্রা থেকে বলবন পুনিয়া। এ বার দু’টি আসনেই দ্বিতীয় হয়েছেন দু’জন।
কংগ্রেসের সঙ্গে কি বোঝাপড়া করলে ভাল হত? রাজস্থানের সিপিএম রাজ্য সম্পাদক ভোটের আগেও বলেছিলেন, তিনি কোনও আসন সমঝোতায় যেতে চান না। ভোটের পরেও তাঁর অবস্থান বদল হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করলে আমাদের আরও খারাপ হত।’’ কেন? তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘এখানে (রাজস্থানে) তো আমরা কংগ্রেস আর বিজেপির সঙ্গেই সারা বছর লড়াই করি! কংগ্রেস গত পাঁচ বছর এখানে শাসক ছিল। তাদের সঙ্গে কী ভাবে বোঝাপড়া হতে পারে?’’
এর পরেই ৬৮ বছর বয়সি কমিউনিস্ট নেতা বলে দিলেন, ‘‘নিজেদের দমে ভোটে লড়েছি। কারও সাহায্য নিইনি। ভোট বেড়েছে আমাদের। উত্তর ভারতে রাজস্থান ছাড়া আর কোনও রাজ্যে লালঝান্ডার এত ভোট নেই। এ বারে আমরা ১৭টি আসনে লড়ে দু’লক্ষ ৮২ হাজার ভোট পেয়েছি।’’ প্রসঙ্গত, উত্তর ভারত তথা হিন্দিবলয়ে কেন দলের শক্তি বাড়ছে না, তা নিয়ে গত পার্টি কংগ্রেসেও বিস্তর আলোচনা করেছে সিপিএম। অথচ, একটা সময়ে বিভিন্ন সময়ে উত্তর ভারতে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে মাথা তুলেছিল সিপিএম। কানপুর থেকে সাংসদ হয়েছিলেন দলের অধুনা পলিটব্যুরোর সদস্য সুহাসিনী আলি। অমরা রামের এই কথা কি দলের সর্বভারতীয় নেতৃত্বকেই উদ্দেশ্য করে? তার জবাব অবশ্য দেননি তিনি। তবে এই প্রবীণ সিপিএম নেতা জানিয়েছেন, দল যে লাইনে রাজস্থানে চলেছে, সেই আন্দোলনের লাইনেই ভবিষ্যতেও চলবে। তাঁর কথায়, ‘‘শূন্য থেকে এক বার তিন হয়েছিলাম। এবার দুই থেকে শূন্য হয়েছি। ভোট আসবে, ভোট যাবে। কিন্তু পার্টি যাতে আরও শক্তি সঞ্চয় করে, সে দিকেই লক্ষ্য থাকবে।’’ তবে অমরা মেনে নিয়েছেন, মেরুকরণের রাজনীতি, বামেদের কাজকে অনেক প্রতিকূল করে তুলেছে। পেরে ওঠা যাচ্ছে না অর্থবলেও।