মাত্র কয়েক বছর হল রাজনীতির ময়দানে প্রবেশ করেছেন তিনি। প্রচারের আলোকবৃত্তে এসেছেন আরও পরে। সেই অর্থে নামের মতোই রাজস্থান তথা দেশের রাজনীতিতে তিনি ‘বালক’। তিনি মহন্ত বালকনাথ যোগী।
রাজস্থানের রাজনীতিতে বালকনাথের আগমন হঠাৎ করে। কিন্তু সেই আগমনের নির্ঘোষ এতটাই যে, তা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। সদ্য শেষ হওয়া রাজস্থান বিধানসভা নির্বাচনে তিজারা কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী ছিলেন বালকনাথ। জিতেওছেন। তাঁর নাম উঠে আসছে রাজস্থানের ভাবি মুখ্যমন্ত্রী হিসাবেও।
তবে তাঁর সঙ্গে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সির দাবিদার হিসাবে নাম উঠে এসেছে রাজস্থানের পাঁচ বারের সাংসদ তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজের। তিনি আবার গোয়ালিয়র রাজপরিবারের কন্যা এবং ঢোলপুরের রাজ পরিবারের পূত্রবধূও বটে। এ ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন জয়পুরের রাজপরিবারের কন্যা দিয়া কুমারী।
রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা রাজপুত নেতা গজেন্দ্র সিংহ শেখাবত, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘাওয়াল, রাজস্থান বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি সতীশ পুনিয়া, বিজেপি সাংসদ সিপি জোশী এবং অলিম্পিক্স পদকজয়ী বিজেপির লোকসভা সাংসদ রাজ্যবর্ধন রাঠৌরও। পাশাপাশি, প্রাক্তন মন্ত্রী তথা প্রবীণ রাজ্যসভা সাংসদ কিরোরীলাল মিনার নামও মুখ্যমন্ত্রীর নাম হিসাবে উঠে আসছে।
কিন্তু বাকিদের থেকে দৌড়ে দু’টি জায়গায় এগিয়ে বালকনাথ। প্রথমত, বিজেপির ‘যোগী’ মডেল উত্তরপ্রদেশে সফল হয়েছে। দ্বিতীয়ত, সন্ন্যাসী হওয়ায় তিনি সংসার ধর্ম গ্রহণ করেননি। ফলে পরিবার বলতে যা বোঝায়, তা তাঁর নেই। ফলে নিজের পুরো সময়টাই প্রশাসনে দিতে পারবেন বালকনাথ।
তবে রাজস্থানের এই যোগীর সম্পর্কে অনেকেরই অজানা। ১৯৮৪ সালের ১৬ এপ্রিল অলওয়ারের কোহরানা গ্রামে এক যাদব পরিবারে বালকনাথের জন্ম।
বালকনাথের বাবা সুভাষ যাদব ছিলেন কৃষক। তাঁর শৈশব কেটেছিল দারিদ্রে। সুভাষ ছিলেন, নীমরানার বাবা খেতনাথ আশ্রমের সেবাইত। বাবা খেতনাথের সেবায় তিনি অনেক সময় ওই আশ্রমে কাটাতেন। বাবার সঙ্গে বালকনাথও সেই আশ্রমে ছোটবেলা থেকে যেতেন।
আশ্রমে যেতে যেতে বালকনাথও খেতনাথের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। মাত্র সাড়ে ছ’বছর বয়সে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন তিনি। বাড়ি ছেড়ে আশ্রমে থাকতে শুরু করেন।
বালকনাথের জন্ম হয়েছিল বৃহস্পতিবার। তাই তিনি সন্ন্যাস গ্রহণের পর খেতনাথ তাঁর নাম দেন ‘গুরুমুখ’। আরও পরে তাঁর নাম হয় বালকনাথ। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের মতো বালকনাথও ‘নাথ’ সম্প্রদায়ভুক্ত।
বালকনাথ শিক্ষা পেয়েছিলেন মহন্ত সোমনাথের কাছে। তবে তাঁর আধ্যাত্মিক যাত্রায় মোড় আসে ২০১৬ সালের ২৯ জুলাই। ব্রহ্মলিন মহন্ত চন্দনাথ যোগী, যোগী আদিত্যনাথ, যোগগুরু বাবা রামদেব এবং অন্যান্য বিশিষ্ট জনদের উপস্থিতিতে তাঁকে অষ্ঠাল বোহরের অষ্টম উত্তরসূরি ঘোষণা করা হয়।
২০১৭ সালে মহন্ত চন্দনাথ যোগীর মৃত্যুর পর নাথ সম্প্রদায়ের বৃহত্তম মঠ অষ্টম বোহরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন বালকনাথ। বর্তমানে তিনি বাবা মস্তনাথ মঠের মহন্ত হিসাবে কাজ করছেন। হরিয়ানার রোহতকে মস্তনাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর পদেও রয়েছেন তিনি।
গোরক্ষনাথ মঠের প্রয়াত পীঠাধীশ্বর তথা গোরক্ষপুরের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ মহন্ত অবৈদ্যনাথ রাজনীতিতে এনেছিলেন যোগী আদিত্যনাথকে। বালকনাথের রাজনৈতিক গুরু ছিলেন প্রয়াত মহন্ত চন্দ্রনাথ। চন্দ্রনাথ অলওয়ারের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ তথা বাবা মস্তনাথ মঠের পীঠাধীশ্বর ছিলেন।
২০১৬ সালে মঠের মহাসম্মেলনে আনুষ্ঠানিক ভাবে বালকনাথকে নিজের উত্তরসূরি মনোনীত করেছিলেন চন্দ্রনাথ। সেই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন যোগী আদিত্যনাথ স্বয়ং! শোনা যায়, বালকনাথের রাজনৈতিক যাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে যোগগুরু রামদেবেরও।
বালকনাথকে নিয়ে কিঞ্চিৎ বিতর্কও রয়েছে। রাজস্থান বিধানসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেস অভিযোগ করেছিল যে, বালকনাথ কানাডার কাল্টাস লেকে ৫২ কোটি টাকা দিয়ে ৩২ একর জমি কিনেছেন। তবে সেই অভিযোগকে ভিত্তিহীন এবং ভুয়ো বলে উড়িয়ে দেন বালকনাথ।
এই প্রসঙ্গে বালকনাথ বলেছিলেন, ‘‘তিজারায় বিজেপির জনসমর্থন দেখে ভয় পাচ্ছে কংগ্রেস। তাই প্রমাণ ছাড়াই তারা মিথ্যা অভিযোগ করছে। অপশাসন এবং সন্ত্রাসবাদের ইস্যু থেকে সরে যেতে অপপ্রচার চালাচ্ছে তারা।’’
প্রচার চলাকালীন তিজারায় কংগ্রেসের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে ‘ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ’ হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন বালকনাথ। রাজস্থানের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে প্রচার চালানোর সময় বালকনাথের সঙ্গে মঠের অন্য সন্ন্যাসীরাও ঘুরেছিলেন।
তিজারায় বালকনাথের বিপক্ষে কংগ্রেস দাঁড় করিয়েছিল ইমরান খানকে। ইমরান স্থানীয় হলেও সেই অর্থে তিজারার ভোটের বালকনাথ ছিলেন ‘বহিরাগত’। কিন্তু সেই যোগীর ঝড়ে ইমরান উড়ে গিয়েছেন খড়কুটোর মতো।
শুধু রাজনীতির ময়দানে নয়, সমাজমাধ্যমেও বালকনাথের অনুরাগীর সংখ্যা বিপুল। ইনস্টাগ্রামে ফলোয়ারের সংখ্যা প্রায় ১৫ লক্ষ।