আটক হওয়া সেই পণ্য। ছবি: সংগৃহীত।
ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। পারমাণবিক নয়, বাণিজ্যিক পণ্যই নিয়ে আসা হচ্ছিল মুম্বই বন্দরে আটক জাহাজে। শনিবার ভারতীয় গোয়েন্দারা দাবি করেছিলেন, নব সেবা বন্দরে আটক জাহাজে পারমাণবিক পণ্য উদ্ধার হয়েছে। যেগুলি পারমাণবিক প্রকল্প এবং ক্ষেপণাস্ত্র গবেষণায় কাজে লাগানো হতে পারে। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রবিবার পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রক থেকে পাল্টা দাবি করে জানানো হল, আটক জাহাজটিতে বাণিজ্যিক পণ্যই রয়েছে। কোনও পারমাণবিক পণ্য নয়।
গত ২৩ জানুয়ারি মাল্টার পতাকা লাগানো ‘সিএমএ সিজিএম অ্যাটিলা’ নামে চিনের একটি পণ্যবাহী জাহাজ আটক করে মুম্বইয়ে শুল্ক দফতর। পাকিস্তানের করাচিতে যাচ্ছিল সেটি। সন্দেহজনক পণ্য পাচার করা হচ্ছে, গোপন সূত্রে এই খবর পাওয়ার পরই জাহাজটিকে আটকানো হয়। তার পর থেকেই জাহাজের ওই পণ্য খতিয়ে দেখার কাজ চলছিল। শনিবার ডিআরডিও-র একটি বিশেষজ্ঞ দল আসে ওই পণ্য পরীক্ষা করতে। ওই বিশেষজ্ঞ দলটি জানিয়েছে, জাহাজে করে ‘কম্পিউটার নিউমেরিক্যাল কন্ট্রোল’ মেশিন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। উল্লেখযোগ্য যে, এই যন্ত্র পারমাণবিক প্রকল্পের কাজে ব্যবহার করা হয়।
তবে ভারতের সেই দাবিকে নস্যাৎ করে পাকিস্তান এক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, করাচির এক সংস্থায় লেদ নিয়ে যাচ্ছিল জাহাজটি। এটি সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক বিষয়। রফতানি সংক্রান্ত বিষয়। পাকিস্তানের গাড়িশিল্পের জন্য যন্ত্রাংশ নিয়ে আসা হচ্ছিল। শুধু তাই-ই নয়, পাকিস্তান এটাও দাবি করেছে যে, যে পণ্য নিয়ে আসা হচ্ছিল ওই জাহাজে, তার সঠিক নথিপত্রও রয়েছে। যদিও ভারতীয় গোয়েন্দারা আগেই দাবি করেছিলেন, আটক জাহাজের পণ্যের নথিপত্রেও গরমিল রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা আরও জানাচ্ছেন, যে সিএনসি যন্ত্রগুলি ওই জাহাজে পাওয়া গিয়েছে, এই ধরনের যন্ত্র তাদের পারমাণবিক প্রকল্পের জন্য ব্যবহার করেছিল উত্তর কোরিয়া। সূত্রের খবর, জাহাজ এবং পণ্যের নথি খতিয়ে দেখার পর জানা গিয়েছে, জাহাজটি সাংবাই জেএক্সই গ্লোবাল লজিস্টিক্স নামে একটি সংস্থার। পণ্য পাঠানো হচ্ছিল পাকিস্তান উইংস প্রাইভেট লিমিটেড নামে সিয়ালকোটের একটি সংস্থায়। তবে আরও তদন্ত করে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে, জাহাজটি তাইউয়ান মাইনিং ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট নামে একটি সংস্থার। পাকিস্তানের কসমস ইঞ্জিনিয়ারিং নামে একটি সংস্থায় ওই পণ্য পাঠানো হচ্ছিল।
এই প্রথম নয়, এর আগেও চিন থেকে পাকিস্তানে পাঠানো সেনাসামগ্রী বাজেয়াপ্ত হয়েছিল ভারতের জলসীমায়। ঘটনাচক্রে, সেই সময় থেকেই কসমস ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থাটি নজরে ছিল গোয়েন্দাদের। এই সংস্থাটি প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত পণ্য সরবরাহ করে পাকিস্তানে। ইটালির তৈরি থার্মোইলেক্ট্রিক সরঞ্জাম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়ার সময় ২০২২ সালের ১২ মার্চ একটি জাহাজ বাজেয়াপ্ত হয়। গোপনে সেই পণ্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু তার আগেই জাহাজটিকে নব সেবা বন্দরে আটকে দেওয়া হয়।