ফের বিপাকে পড়লেন বিজয় মাল্য। ছবি: সংগৃহীত।
সুপ্রিম কোর্টে বড় ধাক্কা বিজয় মাল্যর। আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত মাল্যর ওই রায় পুর্নবিবেচনার আর্জি খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট। সোমবার শীর্ষ আদালত এই রায় দেয়।
এ দিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ইউ ইউ ললিত এবং বিচারপতি অশোক ভূষণের বেঞ্চ বলেছে, “(বিজয় মাল্যর) আবেদনটি পুর্নবিবেচনার যোগ্য নয়। তাই এই আবেদন খারিজ করা হল।”
২০১৭ সালে ৯ মে আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন কিংফিশারের প্রাক্তন কর্ণধার বিজয় মাল্য। ব্রিটিশ সংস্থা ডিয়াজিয়োর থেকে প্রাপ্ত চার কোটি ডলার নিজের সন্তানদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে হস্তান্তরিত করার জন্য আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে।
আরও পড়ুন: করোনার জের, জিডিপি কমতে পারে ১৯ শতাংশ, বলছে সমীক্ষা
আরও পড়ুন: আদালত অবমাননায় ১ টাকা জরিমানা প্রশান্ত ভূষণের, না দিলে তিন মাসের জেল
মাল্যর বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই)। এসবিআই-এর নেতৃত্বাধীন ব্যাঙ্কগুলির কনসর্টিয়ামের কাছে সে সময় মাল্যর অনাদায়ী ঋণ ছিল ৯ হাজার কোটির টাকারও বেশি। তবে ঋণ ফেরতের বদলে নিজের ছেলেমেয়ের অ্যাকাউন্টে ডিয়াজিয়োর চার কোটি ডলার হস্তান্তর করেন মাল্য। এসবিআইয়ের অনুরোধ সত্ত্বেও ওই অ্যাকাউন্টগুলির তথ্য দেননি তিনি। এর পর মাল্যর বিরুদ্ধে আদালতে যায় এসবিআই। ওই মামলা ছাড়াও ব্যাঙ্কগুলির থেকে ঋণের ৯ হাজার কোটিরও বেশি টাকা সরিয়ে নেওয়ায় মাল্যকে দোষী সাব্যস্ত করে শীর্ষ আদালত। এর পর সুপ্রিম কোর্টে ওই রায় পুর্নবিবেচনার জন্য আবেদন করেন মাল্য। একটি হলফনামায় মাল্যর দাবি, ওই চার কোটি ডলার তাঁর নিজের সম্পত্তির অংশ নয়। তা ছাড়া, সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করলে আদালতে আবেদনের অধিকার হারাবেন বলেও দাবি করেন মাল্য।
চলতি বছরের জুনে ওই মামলার শুনানি শুরু হয় সুপ্রিম কোর্টে। মাল্যর পুর্নবিবেচনার আবেদনের শুনানিতে অযথা দেরি হচ্ছে কেন, তা নিয়েও জবাবদিহি তলব করে শীর্ষ আদালত। শেষমেশ ৬ অগস্ট শুনানি শুরু হলে দেখা যায়, মামলার কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অবশেষে ২৭ অগস্ট ফের শুনানি শুরু হয়। সে সময় এই মামলার রায় সংরক্ষিত রেখেছিল সুপ্রিম কোর্ট। এ দিন সেই রায়ই বার হল।
দেশের অন্তত ১৪টি ব্যাঙ্ক বেঙ্গালুরুর ডেট রিকভারি ট্রাইব্যুনাল (ডিআরটি)-এ মাল্যর বিরুদ্ধে আবেদন করেছে। ২০১৬ সালে মাল্যর বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে তাদের পাওনা রয়েছে ৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকারও বেশি। ওই ঋণ অনাদায়ে মাল্যর পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করে তাঁকে গ্রেফতারির জন্য ডিআরটি-র কাছে আবেদন করেছিল ব্যাঙ্কগুলি। তবে ডিআরটি-র কাছ থেকে ওই আবেদনে সাড়া মেলেনি। এর পর মাল্যর বিরুদ্ধে কর্নাটক হাইকোর্টে যায় তারা। তবে হাইকোর্ট এ বিষয়ে কোনও রায় দিতে অস্বীকার করায় সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় ব্যাঙ্কগুলি। এর পর থেকেই দেশ ছেড়ে ব্রিটেনে পালিয়ে যান মাল্য। সে বছরের মে মাসে ভারত সরকারকে একটি নির্দেশে মাল্যকে দেশে ফিরিয়ে আদালতে হাজির করতে বলে সুপ্রিম কোর্ট। যাতে তাঁর আদালত অবমাননার সাজা শোনানো যায়। এর পর সেই ২০১৭ সাল থেকেই মাল্যকে ভারতে প্রত্যর্পণের চেষ্টা শুরু করে ভারত সরকার। তাঁকে প্রত্যর্পণের মামলা চলছে ব্রিটেনের বিভিন্ন আদালতে। তবে আপাতত জামিনে মুক্ত হলেও এ দিন সুপ্রিম কোর্টে তাঁর আর্জি খারিজ হওয়ায় ফের বিপাকে পড়লেন বিজয় মাল্য।