ইএমএস-ভিএস দ্বন্দ্বে তপ্ত ছিল দল, সামনে আসছে পুরনো কাহিনি

কেরল সিপিএমে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভি এস অচ্যুতানন্দনের গোষ্ঠী-লড়াইয়ের কথা বহুচর্চিত। কিন্তু তারও আগে ইএমএস এবং ভিএস-কে জড়িয়ে কেমন সংঘাতের বাতাবরণ ছিল দলে, ইতিহাসের পর্দা সরিয়ে সেই কাহিনি এ বার সামনে এনেছেন সিপিএমেরই এক প্রবীণ নেতা।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:৫৭
Share:

ইএমএস নাম্বুদিরিপাদ ও ভি এস অচ্যুতানন্দন

স্বাধীন দেশে প্রথম অ-কংগ্রেস এবং কমিউনিস্ট সরকার ক্ষমতায় এসেছিল তাঁর হাত ধরে। ইতিহাস বলছে, আমৃত্যু সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য ছিলেন তিনি। কিন্তু জীবদ্দশায় সেই ইএমএস নাম্বুদিরিপাদকেও পলিটব্যুরো থেকে বাদ পড়ার মুখে দাঁড়াতে হয়েছিল! নেপথ্যে দলের মধ্যেকার ক্ষমতার বিভাজন ও বিবাদ।

Advertisement

কেরল সিপিএমে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভি এস অচ্যুতানন্দনের গোষ্ঠী-লড়াইয়ের কথা বহুচর্চিত। কিন্তু তারও আগে ইএমএস এবং ভিএস-কে জড়িয়ে কেমন সংঘাতের বাতাবরণ ছিল দলে, ইতিহাসের পর্দা সরিয়ে সেই কাহিনি এ বার সামনে এনেছেন সিপিএমেরই এক প্রবীণ নেতা। কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে তাঁর সাত দশকের জীবন মেলে ধরে বই লিখছেন কেন্দ্রীয় কমিটির প্রাক্তন সদস্য এম এম লরেন্স। কেরল সিপিএমে ৯৬ বছরের ভিএসের পরে ৯০ বছরের লরেন্সই সব চেয়ে প্রবীণ নেতা। তাঁর বইয়ের যে অংশ আগাম প্রকাশ্যে এনেছেন লরেন্স, সেখানেই পাওয়া যাচ্ছে দলের শীর্ষ স্তরে বিবাদের অজানা কাহিনি। ‘দলের অভ্যন্তরীণ সংগ্রাম’ বলে যা আড়ালে রাখতেই অভ্যস্ত বাম নেতারা।

চেন্নাইয়ে ১৯৯২ সালের পার্টি কংগ্রেসে ইএমএস সরে দাঁড়ান সিপিএমের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে। নতুন সাধারণ সম্পাদক হন হরকিষেণ সিংহ সুরজিৎ। লরেন্স জানাচ্ছেন, সেই পার্টি কংগ্রেসের কক্ষেই নতুন পলিটব্যুরোর যে প্যানেল ঘোষণা হয়েছিল, সেখানে সদ্যপ্রাক্তন সাধারণ সম্পাদকের নাম ছিল না। যা দেখে অধিবেশনেই প্রতিবাদ করেন লরেন্স-সহ কেরলের বেশ কিছু পার্টি নেতা। হইচইয়ের মুখে পার্টি কংগ্রেসের প্রেসিডিয়ামের (পরিচালকমণ্ডলী) তরফে প্রথমে বলা হয়, ভগ্নস্বাস্থ্যের জন্যই সরে যেতে হচ্ছে ইএমএস-কে। মানতে চাননি প্রতিবাদীরা। তাঁরা দাবি তোলেন, ইএমএসের নিজের মুখের বয়ান শুনতে চান তাঁরা। বাকিদের চমকে দিয়ে ইএমএস বলেন, তিনি পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটিতে কাজ করতে আগ্রহী! তখন জ্যোতি বসু, সুরজিৎরা হস্তক্ষেপ করে বলেন, ইএমএস নিজে এই কথা বলার পরে আর অন্য কিছু ভাবা যায় না।

Advertisement

লরেন্সের দাবি, চেন্নাইয়ের সেই প্রতিবাদে শরিক হননি ভিএস। বরং, উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। খোঁজ নিয়ে তাঁরা জেনেছিলেন, ইএমএসকে দিয়ে আর চলছে না, এই যুক্তি দলের উপর মহলে প্রতিষ্ঠা করতে সব চেয়ে সক্রিয় ছিলেন ভিএস-ই। কেরলের জনপ্রিয় নেতা ভিএসের কথা ফেলতে পারেননি সুরজিৎরা। পরিহাস এমনই যে, শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে ভিএস নিজেই পলিটব্যুরো থেকে বাদ পড়েন ২০০৭ সালে!

কিন্তু ইএমএস-ভিএস এমন দ্বন্দ্ব বেধেছিল কেন?

চেন্নাইয়ের সেই পার্টি কংগ্রেসের আগে কোঝিকোড়ে কেরল সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনে দলের রাজ্য সম্পাদক পদ হারাতে হয়েছিল ভিএস-কে। লরেন্স যে তথ্য সামনে আনছেন, তাতে জানা যাচ্ছে: সম্মেলনে ভোটাভুটি হয় এবং দু’ভোটে ই নায়নারের কাছে হারেন ভিএস। তিনি বুঝেছিলেন, ইএমএসের অঙ্গুলিহেলনেই এমন ঘটনা। তখন থেকেই ইএমএস-কে ‘শিক্ষা’ দিতে আসরে নামেন ভিএস। যদিও ১৯৯৮ সালে লোকসভা ভোটের প্রচার পর্যন্ত দলের হয়ে কাজ করে ভোটের পরে প্রয়াত হন ইএমএস। লরেন্সের মতে, কেরলে আন্দোলেনর মুখ এবং জনপ্রিয় নেতা হলেও রাজ্য সম্পাদক হিসেবে ভিএসের কাজের ধরনে অনেকেই অসন্তুষ্ট ছিলেন। সেই খবর ইএমএস রাখতেন।

কিন্তু দলের ভিতরের কথা বইয়ে লিখে এবং তার আগে প্রকাশ্যে আনছেন কেন পুরনো এক নেতা? লরেন্সের যুক্তি, ‘‘কথাগুলো বলতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে বলে মনে করি না। দলের মধ্যে কোনও সমস্যা হলেই আমাদের নেতারা সংবাদমাধ্যমকে দোষ দেন! কিন্তু উৎসাহীদের জন্য এই তথ্য সামনে থাকুক যে, আমাদের দলে অনেক অপ্রিয় ঘটনাও ঘটে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement