বিপর্যস্ত ওয়েনাড়ে চলছে উদ্ধারকাজ। ছবি: এক্স।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দাবি এ বার খারিজ করে দিলেন কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীণা জর্জও। বুধবার সংসদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, ভূমিধস নিয়ে কেরল সরকারকে আগেই সতর্ক করেছিল কেন্দ্র। তিনি জানান, কেরলে অত্যধিক বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল। তার প্রভাবে যে ধস নামতে পারে, আগেই তা বোঝা গিয়েছিল। কিন্তু সতর্কতা সত্ত্বেও সময়ে ব্যবস্থা নেয়নি কেরল সরকার। শাহের সেই দাবি খারিজ করে বীণা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কেরল নিয়ে কেন্দ্রের তরফে আদৌ কোনও লাল সতর্কতা জারি করা হয়নি। বীণার মতে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি ‘দুর্ভাগ্যজনক’ তো বটেই, সেই সঙ্গে ‘বিভ্রান্তিকর’। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কেন্দ্রের তরফে আসা সমস্ত সতর্কতা আরও এক বার ঘেঁটে দেখেছি। ভূমিধসের বিষয়ে কোনও লাল সতর্কতা ছিল না। কেবল মাত্র বৃষ্টির জন্য কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছিল, যার মাত্রা যা বাস্তবে হয়েছে, তার তুলনায় অনেক কম। সেই কমলা সতর্কতার ভিত্তিতেই কাজ করেছে জেলা প্রশাসন।’’
বুধবার রাজ্যসভার অধিবেশনে অমিত শাহ জানান, ওয়েনাড়ে ভূমিধসকাণ্ডের অন্তত এক সপ্তাহ আগে, গত ২৩ জুলাই কেন্দ্র কেরলের পিনারাই বিজয়ন সরকারকে এ নিয়ে সতর্ক করেছিল। ছিল ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস। তাই আগেভাগেই নাকি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ন’টি দল। শাহ বলেন, ‘‘কেরলে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ন’টি দলকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কেরল সরকার সময় থাকতে মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানোর বন্দোবস্ত করেনি। তা হলে প্রাণহানি কিছুটা হ্রাস পেত।’’
শাহ আরও জানিয়েছিলেন, সারা বিশ্বে মাত্র চারটি এমন দেশ রয়েছে, যারা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের এক সপ্তাহ আগে থেকেই তা নিয়ে সতর্কতা জারি করতে পারে। ভারত তার মধ্যে অন্যতম। কেরলের ক্ষেত্রে সেই সুবিধা নেওয়া যায়নি। তবে কেরল সরকারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন শাহ। বলেন, ‘‘ওয়েনাড়ের বিপর্যয়ের মোকাবিলার জন্য নরেন্দ্র মোদী সরকার কেরল সরকারের এবং কেরলের মানুষের পাশে রয়েছে। প্রয়োজনীয় সব রকমের সাহায্য করা হবে।’’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি আগেই খারিজ করে দিয়েছিলেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। বুধবারই বিজয়ন স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘‘ওয়েনাড়ে ধসের সম্ভাবনা নিয়ে কেন্দ্রের তরফে কেরলকে কোনও সতর্কবার্তা পাঠানো হয়নি। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর (আইএমডি)-এর তরফে ভূমিধসের কোনও পূর্বাভাসও দেওয়া হয়নি। শুধু ওয়েনাড় জেলায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা সংক্রান্ত কমলা সতর্কতা ছিল। কিন্তু বাস্তবে বৃষ্টিপাত ৫০০ মিলিমিটার ছাড়িয়েছে। যা পূর্বাভাসের তুলনায় অনেক বেশি।’’ এর পরেই বিজয়ন যোগ করেন, ‘‘মঙ্গলবার ভোরে ভূমিধসের ঠিক পরেই অবশ্য ওই জেলার (ওয়েনাড়) জন্য একটি লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছিল!’’
ওয়েনাড়ে মঙ্গলবারের ভূমিধসের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২৭৬ জনের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, নিখোঁজের সংখ্যা দেড়শোরও বেশি। এখনও নিখোঁজদের সন্ধান এবং উদ্ধারের কাজ চলছে। আক্ষরিক অর্থেই নিশ্চিহ্ন বয়ে গিয়েছে পশ্চিমঘাট পর্বতের জঙ্গলঘেরা গোটা চারেক গ্রাম। বাড়িঘর, কফির বাগান হাজার হাজার টন পাথর এবং কাদার স্তূপের নীচে। সেনাবাহিনী, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ), কেরলের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর এবং রাষ্ট্রীয় জরুরি পরিষেবার কর্মীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দিন রাত এক করে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও।