বিতর্কিত পূজা খেড়কর। ছবি: এক্স (পূর্বতন টুইটার)।
বিতর্কিত আইএএস পূজা খেড়করের নিয়োগ বাতিল করে দিল ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (ইউপিএসসি)। আর কখনও কোনও ইউপিএসসি পরিচালিত পরীক্ষায় বসতে পারবেন না পূজা।
বুধবার একটি বিবৃতিতে ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন জানিয়েছে, সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন পূজা। সেই মতো গত ১৮ জুলাই তাঁকে শোকজ় নোটিসও পাঠানো হয়েছিল। অভিযোগ ছিল, ইউপিএসসি পরীক্ষায় সংরক্ষণের সুবিধা নিতে শংসাপত্র জাল করে একাধিক বার পরীক্ষায় বসেছিলেন বছর চৌত্রিশের পূজা। প্রাথমিক ভাবে তাঁকে ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে কারণ দেখাতে বলা হয়েছিল, তাতে আগামী ৪ অগস্ট পর্যন্ত সময় দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন পূজা। কিন্তু সেই আবেদন নাকচ করে ইউপিএসসি ৩০ জুলাই, বুধবার পর্যন্ত সময় দিয়েছিল তাঁকে। জানানো হয়েছিল, পূজার কাছে এটিই শেষ সুযোগ। এর পর তাঁর কোনও উপরোধ-অনুরোধ আর শোনা হবে না।
বুধবারের বিবৃতিতে ইউপিএসসি জানিয়েছে, বাড়তি সময় দেওয়া সত্ত্বেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কারণ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন পূজা। তাই ২০২২-এর আইএএস নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তাঁর নির্বাচন বাতিল করা হল এবং আজীবনের জন্য তাঁকে বহিষ্কার করা হল। ভবিষ্যতে আর কখনওই এই পরীক্ষায় বসতে পারবেন না তিনি। ইউপিএসসি জানিয়েছে, পূজাকাণ্ডের পর ২০০৯ থেকে ২০২৩-এর মধ্যে নিযুক্ত ১৫০০০-এরও বেশি আমলার যাবতীয় নথি আবার খতিয়ে দেখেছে তারা। তাতে এখনও পর্যন্ত পূজা ছাড়া অন্য কোনও আমলার বিরুদ্ধে এ রকম জালিয়াতির প্রমাণ মেলেনি।
আগেই পূজার বিরুদ্ধে দিল্লি পুলিশের কাছে ভুল তথ্য এবং ভুয়ো পরিচয়পত্রের সাহায্যে সংরক্ষণের সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছিল ইউপিএসসি। অপরাধদমন শাখা সেই ঘটনার তদন্ত করছে। একই সঙ্গে বুধবার জানা গিয়েছে, ওই শিক্ষানবিশ আমলার আগাম জামিনের আবেদন প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার রায় দিতে পারে দিল্লি হাই কোর্ট।
আগে থেকেই জামিনের অগ্রিম আবেদন করে রেখেছিলেন পূজা। তাঁর আইনজীবীর যুক্তি ছিল, পূজাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে যে, যে কোনও সময় তাঁকে গ্রেফতার করা হতে পারে। বুধবার হাই কোর্টের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক দেবেন্দ্রকুমার জাঙ্গালা পূজার আবেদনের যুক্তি শুনেছেন। শুনেছেন ইউপিএসসির আইনজীবীর সওয়ালও। এর পরেই আদালত জানায়, এখনই সিদ্ধান্ত জানাচ্ছে না দিল্লি হাই কোর্ট। বৃহস্পতিবার এই বিষয়ে রায় ঘোষণা করা হতে পারে।
প্রসঙ্গত, কয়েক সপ্তাহ আগে মহারাষ্ট্রের পুণের সহকারী জেলাশাসক হিসাবে নিযুক্ত পূজার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের ব্যক্তিগত ব্যবহারের গাড়িতে মহারাষ্ট্র সরকারের স্টিকার, লালবাতি ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া অতিরিক্ত জেলাশাসকের কক্ষ ‘দখল’ করা এবং জেলাশাসকের সহকারীর কাছে বেআইনি দাবিদাওয়া পেশ করে সেই দাবি পূরণের জন্য হুমকি দেওয়ার অভিযোগও ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। সেখান থেকে বিতর্কের সূত্রপাত। তার পর পূজার একের পর এক ‘কীর্তি’ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে।
ক্রমে জানা যায়, ইউপিএসসি পরীক্ষা দেওয়ার আগে এমবিবিএস পড়ার সময়ে ভুয়ো শংসাপত্র দাখিল করে নিজেকে ‘অনগ্রসর’ (ওবিসি) শ্রেণিভুক্ত বলে দেখিয়েছিলেন পূজা। ২০০৭ সালে মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সময়ে জাতিগত সংরক্ষণের সুবিধা নিতে ওবিসি নোম্যাডিক ট্রাইব-৩ ক্যাটেগরিতে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি, যা শুধুমাত্র ‘বানজারি’ সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত থাকে। সংরক্ষণের সুবিধা পেতে ভুয়ো জাতিপরিচয়গত শংসাপত্রের পর এ বার ভুয়ো প্রতিবন্ধী শংসাপত্রের আবেদন করেন তিনি! দু’বার ইউপিএসসি পরীক্ষায় সেই ভুয়ো মেডিক্যাল সার্টিফিকেট জমাও দেন— এক বার দৃষ্টিশক্তির সমস্যার কথা উল্লেখ করে, আর এক বার মানসিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে। তবে নিয়োগের আগে ২০২২ সালে এমস-এ প্রতিবন্ধকতার পরীক্ষার বন্দোবস্ত করা হলেও ছ’বার নানা অজুহাতে পূজা তা এড়িয়ে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। এত গলদ সত্ত্বেও তিনি কী ভাবে চাকরি পেলেন, তা নিয়েই উঠেছিল প্রশ্ন।