(বাঁ দিকে) অজিত ডোভাল। জ্যাক সালিভান (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
ওয়াশিংটনে পালাবদলের তোড়জোড়ের মধ্যেই রবিবার ভারত সফরে আসছেন সে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সালিভান। আমেরিকার বিদেশ দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, দু’দিনের ভারত সফরে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল-সহ নরেন্দ্র মোদী সরকারের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। দিল্লি আইআইটিতে বিদেশনীতি সংক্রান্ত একটি আলোচনাসভাতেও যোগ দেবেন।
সরকারের একটি সূত্র জানাচ্ছে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, আদানিদের বিরুদ্ধে ঘুষের মামলা, আমেরিকা ও কানাডার মাটিতে খলিস্তানপন্থীদের তৎপরতা, ফৌজদারি মামলায় ডোভালকে আমেরিকার আদালতের সমনের পাশাপাশি আলোচনায় আসতে পারে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিও। দুই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার আলাপচারিতায় ‘ইনিশিয়েটিভ অন ক্রিটিকাল অ্যান্ড এমার্জিং টেকনোলজি’ (আইসিইটি)-র ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল সংক্রান্ত দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এবং পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রসঙ্গও আসবে বলে জানা গিয়েছে।
আগামী ২০ জানুয়ারি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে দ্বিতীয় বার দায়িত্ব নিচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিদায়ী ডেমোক্র্যাট সরকার নিযুক্ত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসাবে সালিভানের এটাই শেষ বিদেশ সফর। ২০ জানুয়ারি ওই পদে বসবেন ট্রাম্পের মনোনীত মাইকেল ওয়াল্টজ়।
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছে, নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আগেই সালিভানকে পাঠানোর মূল উদ্দেশ্য শিল্পপতি গৌতম আদানির বিরুদ্ধে ওঠা ঘুষের মামলা এবং খুনের চেষ্টার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে ডোভালকে সমন পাঠানোর ‘আঁচ’ যাতে ভারত এবং আমেরিকার সামগ্রিক কৌশলগত সম্পর্কে না পড়ে, তা নিশ্চিত করা। প্রসঙ্গত, সোমবারই আদানিদের বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কের ইস্টার্ন ডিসট্রিক্ট কোর্টে ঘুষকাণ্ডের ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলার বিচার শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্য দিকে, নিষিদ্ধ খলিস্তানপন্থী সংগঠন শিখ ফর জাস্টিস (এসএফজে)-এর নেতা গুরুপতবন্ত সিংহ পান্নুনকে ‘হত্যার চেষ্টার ষড়যন্ত্রে’ জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েক মাস আগে তলব করেছে দক্ষিণ নিউ ইয়র্ক সাদার্ন ডিসট্রিক্ট কোর্ট।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন, রাজনৈতিক সঙ্কটের মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশ পরিস্থিতির উপরে কী প্রভাব ফেলবে, তা ইতিমধ্যেই কূটনৈতিক চর্চার কেন্দ্রে চলে এসেছে। প্রতিবেশী হিসাবে দীর্ঘতম সীমান্ত ভাগ করে নেওয়া ভারতের জন্যও বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে আগামী দিনে। কূটনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, ডেমোক্র্যাট-ঘনিষ্ঠ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস চাপে পড়েছেন ট্রাম্প ফিরে আসায়। গত সেপ্টেম্বরে ইউনূস আমেরিকা সফরে গিয়ে বারাক ওবামা, বিল ক্লিন্টন-সহ ডেমোক্র্যাট নেতাদের সঙ্গে দেখা করলেও ট্রাম্প বা কোনও রিপাবলিকানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। কারণ, সম্পর্ক মধুর নয়। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের (হিলারি ক্লিন্টনকে হারিয়ে) পর, বাংলাদেশ থেকে একটি প্রতিনিধিদল তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে ওয়াশিংটনে গিয়েছিল। সূত্রের খবর, প্রথম সাক্ষাতেই ট্রাম্প বলেছিলেন, “ঢাকার মাইক্রোফাইন্যান্সের সেই ব্যক্তি কোথায়? শুনেছি, তিনি আমাকে হারাতে চাঁদা দিয়েছিলেন।” এ বার প্রেসিডেন্ট ভোটের প্রচারপর্বে প্রকাশ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের জমানায় বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছিলেন ট্রাম্প।