রুদ্রনীল ঘোষ, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের বন্ধুত্ব অটুট। নিজস্ব চিত্র।
আমি, কাঞ্চন মল্লিক, রাজ চক্রবর্তী আর রুদ্রনীল ঘোষ— বলা যায় ‘চার ইয়ারি’ কথা। বন্ধুত্ব বেড়েছে, নাম ছোট হয়েছে ‘রুদ্র’ বা ‘রুডি’। চার জনেই বিনোদন দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য লড়ছি। সেই সময় রুদ্রর কিছু গুণ ভাল লেগেছিল। ওর অকপট মনোভাব, স্পষ্ট কথা, সহজাত অভিনয় ক্ষমতা, ছায়াছবির প্রতি ভালবাসা— টেনেছিল আমায়। সেই সমমনস্কতা থেকে আমাদের ‘ইয়ারি কথা’র শুরু।
আমার সঙ্গে যখন ওর আলাপ, তখন আমি খুবই ছোট, রুদ্র-ও। ও আমার থেকে ৯ বছরের বড়। তবু ওকে নাম ধরেই ডেকেছি। বলতে পারেন, আমরা এক সঙ্গে বড় হয়েছি। আর দুটো অল্পবয়সি ছেলে এক সঙ্গে থাকলে দুষ্টুমি করবেই। আমরাও করেছি। এখন সে সব মনে পড়লে হাসি পায়। কখনও আড্ডায় মুখোমুখি হলে সে সব নিয়ে হাসাহাসি করি।
ক্রমে বড় হয়েছি দু’জনে। পরিণতমনস্ক হয়েছি, বদল ঘটেছে মনে। যার ফলে, আমাদের রাস্তা হয়তো আলাদা হয়েছে কিছু ক্ষেত্রে। এটা ঘটেছে কারণ, বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা নিজেরা এবং পরস্পরকে আরও ভাল ভাবে চিনতে শিখেছি বলে। আমরা একসঙ্গে কিছু কাজ করার চেষ্টা করেছি। সেটা সব সময় সফল হয়েছে, এমনও নয়। কিন্তু পর্দায়, ‘হাওয়া বদল’ ছবিতে আমাদের জুটি অত্যন্ত সফল। যে কারণে ওর সিক্যুয়েলও তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি আমরা তার শুটিং সেরেছি। এবং সেটা করতে গিয়ে দেখলাম, অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ এখনও আগের মতোই ক্ষুরধার। কিন্তু অন্য কিছু বিষয়ে, হতে পারে সেটা ব্যবসা বা অন্য কিছু— সে সবে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আর এক নেই।
রইল বাকি আমাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ। ওখানে অবশ্যই ভিন্ন মত রয়েছে। এই মুহূর্তে রুদ্র যে রাজনৈতিক দলের সমর্থক, সেই দলের সঙ্গে বা সেই দলের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে কোনও দিনই নিজেকে মেলাতে পারব না। কিন্তু যে যে কারণে আমাদের বন্ধুত্ব হয়েছিল সেগুলো কিন্তু নষ্ট হয়ে যায়নি। তখনও যে সব কারণে রুদ্রকে ভাল লাগত, এখনও সেই সব কারণ রয়ে গিয়েছে। তার সঙ্গে কিছু উপলব্ধিও রয়েছে। সেই সব উপলব্ধি বলছে, জীবনের কিছু বাঁকে বদল ঘটলেও সেই বদলের কারণে বন্ধুত্বের পরিসর কিন্তু সঙ্কুচিত হয়ে যায়নি। সহ-অভিনেতা হিসাবে, এত দিনের পরিচিত মানুষ হিসাবে যে শ্রদ্ধা বা ভাল লাগা থাকা দরকার সেই অনুভূতি যথেষ্টই রয়েছে। এগুলো আমাদের মধ্যে থেকে যাবেও।