২০১৩ সালে গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন মহিলা। প্রতীকী ছবি।
প্রতিটি মুহূর্তে ভয় লাগত তাঁর। ধর্ষণের মামলা তুলে নেওয়ার জন্য মাঝেমধ্যেই হুমকি ফোন আসত। ভয় লাগলেও দাঁতে দাঁত চেপে বিচারের আশায় লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। অবশেষে ১০ বছর পর সেই লড়াইয়ে জিতলেন তিনি।
সাল ২০১৩। উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগরের এক হিংসায় ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন ১২ জনেরও বেশি মহিলা। বছরের পর বছর কেটে গিয়েছে, ন্যায়বিচার মেলেনি। অধিকাংশ নির্যাতিতাই পরিস্থিতির চাপে পড়ে মামলা তুলে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। বছর ছত্রিশের এই নির্যাতিতাকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল তিন জনের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি সেই তিন জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে উত্তরপ্রদেশের আদালত। সেই রায় শোনার পর নির্যাতিতা এক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “সত্যের জয় হয়েছে।”
যে তিন জন দোষী সাব্যস্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে কুলদীপ নামে এক অপরাধী তিন বছর আগেই জেলে মারা গিয়েছে। বাকি দুই অপরাধী মহেশবীর এবং সিকন্দরকে ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। নির্যাতিতা বলেন, “১২ জনেরও বেশি মহিলা ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালাচ্ছিলেন। কিন্তু আজ আমি একাই সেই মামলার শেষ দেখতে পেলাম। অনেকেই মামলা তুলে নিতে বাধ্য হয়েছে পরিস্থিতির চাপে।”
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে ওই নির্যাতিতা বলেন, “এটি বিশাল বড় জয়। কিন্তু অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আজ এ দিন দেখতে পেলাম। এই ঘটনার জন্য আমার স্বপ্ন, কেরিয়ার সব কিছু নষ্ট হয়ে গিয়েছে। স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয়েছে। এই মুহূর্তে আমার সন্তানদের কিছু বলতে চাই না। এক দিন ওরা ঠিক বুঝবে ওদের বাবা-মা কী দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। এটুকুই বলব, আর যেন কারও সঙ্গে এমন ঘটনা না ঘটে।”
২০১৩ সালে যখন হিংসা ছড়িয়েছিল মুজফ্ফরনগরে, সেই সময় প্রাণে বাঁচতে ছোট সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেন এই মহিলা। তাঁর কথায়, “ওই দিনের কথা কোনও দিন ভুলব না। সন্তানকে নিয়ে ঘর ছেড়ে পালাচ্ছিলাম। তখনই আমাকে ঘিরে ধরে তিন জন। সন্তানের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে তার সামনেই আমাকে গণধর্ষণ করা হয়।” সেই ঘটনার পর শহর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু আরও কয়েক জন মহিলার কথা জানতে পারেন যে, তাঁরাও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর পর তাঁদের নিয়েই লড়াইয়ে নামেন এই নির্যাতিতা। তার পর দীর্ঘ বছর পেরিয়েছে। বাকি নির্যাতিতারা পরিস্থিতির চাপে পড়ে মামলা তুলে নিতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু তিনি একাই লড়ে গিয়েছেন এই মামলা।