উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।—ছবি পিটিআই।
লখনউয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করলে পুলিশ আগেই আটক করত। তাই উত্তরপ্রদেশ ঘুরে এসে সমাজকর্মীদের একটি দল আজ দিল্লিতেই সাংবাদিক সম্মেলন করে অভিযোগ তুললেন, যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে ‘আতঙ্কের শাসন’ চলছে। সিএএ-এনআরসি’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গুঁড়িয়ে দিতে রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন মুসলিম, বিক্ষোভকারী ও সমাজকর্মীদের ‘খোলাখুলি’ আক্রমণ করছে।
আজ উত্তরপ্রদেশ সরকার জানিয়েছে, ১০ ডিসেম্বর থেকে সিএএ-এনআরসি’র বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে এখনও পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২৮৮ জন পুলিশকর্মী আহত। পুলিশ ৩২৭টি এফআইআর দায়ের করেছে। ১,১১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আটক ৫,৫৫৮ জন। কিন্তু যোগেন্দ্র যাদব, হর্ষ মন্দার, কবিতা কৃষ্ণণ ও নাদিম খান-এর তথ্যানুসন্ধানী দল উত্তরপ্রদেশের ৯টি জেলা ঘুরে এসে দাবি করছে, শুধু ওই ন’টি জেলাতেই ৬১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৭০টি মানবাধিকার ও সমাজ সংগঠনের মঞ্চ ‘হম ভারতকে লোগ’-এর রিপোর্ট প্রকাশ করে তাঁদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের ‘ব্যক্তিগত নির্দেশ, অনুমোদন ও নজরদারি’তে পুলিশ মুসলিম, বিক্ষোভকারী, সমাজকর্মীদের নিশানা করছে।
যোগেন্দ্র এ দিন বলেন, ‘‘উনি তো প্রকাশ্যে বদলার কথা ঘোষণা করেছেন। উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসারকে বলতে শোনা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন রয়েছে। দুঃখের কথা হল, প্রধানমন্ত্রী খোলাখুলি এই নৃশংসতাকে সমর্থন জানিয়েছেন।’’ মেরঠ থেকে ঘুরে আসা কবিতার অভিযোগ, ‘‘পুলিশের গুলিতে মেরঠে এক কমবয়সি ই-রিকশা চালকের মৃত্যু হয়েছে। ছোটবেলায় সে দিল্লিতে থেকেছিল। তার পরে বাবা-মায়ের সঙ্গে মেরঠেই থাকত। পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর পর এখন পুলিশ তাকে গন্ডগোল পাকানোর প্রধান চক্রী বলছে। পুলিশ বলছে, সে নাকি দিল্লি থেকে বাইরের লোক জুটিয়ে এনেছিল।’’ গোটা ঘটনার তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। সাংবাদিক সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন বলিউডের দুই শিল্পী স্বরা ভাস্কর ও জিশান আয়ুব। স্বরা বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশের পরিস্থিতি আমাদের ভিতর থেকে নাড়িয়ে দিয়েছে। মুজফ্ফরনগরের মতো জেলায় সাধারণ মুসলিম, তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির উপরে হামলা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী ফিল্মি গল্পের মতো বদলার কথা বলছেন। স্বাধীন বিচারবিভাগীয় তদন্ত হোক।’’
নগ্ন করে মার নাবালকদের
নাবালকদের জেলবন্দি করে নির্যাতনের অভিযোগ উঠল যোগী আদিত্যনাথের পুলিশের বিরুদ্ধে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিক্ষোভের সময়ে যোগীর পুলিশ বিজনৌর থেকে একুশ জন নাবালককে বন্দি করে। এর মধ্যে পাঁচ নাবালকের অভিযোগ, বিক্ষোভে শামিল না হওয়া সত্ত্বেও শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ধরা হয়েছিল তাদের। থানায় আটক করে বেধড়ক মার, জোর করে নগ্ন করে দেওয়া থেকে শুরু করে অকথ্য অত্যাচার সইতে হয়েছে তাদের। পাঁচ কিশোরই উত্তরপ্রদেশের নাগিনা শহরের বাসিন্দা। বয়স ১৩ থেকে ১৭-র মধ্যে। সকলেই মুসলিম। গত ২০ ডিসেম্বর
এদের আটক করে পুলিশ। সে দিন বিকেলে নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে একটি মিছিল বেরোয় বিজনৌরে। বিক্ষোভকারীরা পাথর ছুড়লে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ও টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে। ১০০ জনকে আটক করেছিল পুলিশ, যার মধ্যে ২১ জন নাবালক।