বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে বিজেপি সদর দফতরে মোদী। নিজস্ব চিত্র
পাঁচে-চার। এমন ফলপ্রাপ্তির দিনকে ‘ঐতিহাসিক দিন’ বলে দাবি করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দলের এমন জয় নিয়ে বলতে গিয়ে বৃহস্পতিবার থেকেই দেশে হোলি উৎসব শুরু হবে বলেও মন্তব্য প্রধানমন্ত্রীর। তাঁর দাবি, বিজেপি-র ‘নীতি ও নির্ণয়ের জয় হয়েছে’।
পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে চারটিতেই বিজেপি-র জয় (যদিও গোয়া এখনও ত্রিশঙ্কু) সম্পর্কে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে বিজেপি-র সদর দফতরে মোদী বলেন, ‘‘দেশের চার দিক থেকে বিজেপি সমর্থন পেয়েছে। বিজেপি-র প্রতি মানুষের অপার বিশ্বাসের জয় হয়েছে।’’ সেই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, ‘‘গরিবের জন্য কেন্দ্রে কিংবা ক্ষমতায় থাকা রাজ্যে কাজ করছে বিজেপি। এত দিন প্রকল্প ঘোষণা হলেও সেই কাজ বাস্তবায়িত হত না। আমি চাই একশো শতাংশ গরিব মানুষ সব সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পান।’’
এর পরেই তিনি টেনে আনেন উত্তরপ্রদেশ জয়ের আসল তাৎপর্যের কথা— পরের লোকসভা ভোটে জয়। মোদীর কথায়, ‘‘২০১৯ সালে যখন দ্বিতীয়বার আমি লোকসভা নির্বাচনে জয় পাই, তখন অনেকে বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন, এই জয়ে আর কী আছে? এটা তো ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল। সেই হিসেবেই আমি বলছি, ২০২২ সালে উত্তরপ্রদেশের ফল ঠিক করে দিল ২০২৪ সালে ফের বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসতে চলেছে।’’
সন্ধ্যা ৭টার কিছু আগে বিজেপি সদর দফতরে আসেন মোদী। সঙ্গে ছিলেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গের বিজেপি দফতরে তখন ঘনঘন ‘মোদী-মোদী’ ধ্বনি। ভিড় ছিল উপচে পড়া। সেই ভিড়কে প্রণাম জানিয়ে মঞ্চ ওঠেন মোদী ও নড্ডা। আগে থেকেই সেখানে ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা দুই প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ, রাজনাথ সিংহ। ছিলেন দলের আরও এক প্রাক্তন সভাপতি নীতিন গড়কড়িও।
প্রথমেই নড্ডা বলেন, ‘‘এই জয়ের জন্য চার রাজ্যের জনতাকে ধন্যবাদ। আর নরেন্দ্র মোদীকে অভিনন্দন। কারণ, তাঁর নেতৃত্বেই এত বড় জয় এসেছে।’’ নড্ডার গোটা বক্তৃতা জুড়েই ছিল মোদীর প্রশংসা। মাঝেমাঝেই যেই বক্তব্য চাপা পড়ে যাচ্ছিল সমর্থকদের ‘মোদী-মোদী’ স্লোগানে। স্লোগানের মধ্যেই নড্ডার পরেই বলতে ওঠেন মোদী। নড্ডা তাঁর প্রশংসা করেছিলেন। মোদী পাল্টা বলেন, ‘‘এই জয়ের জন্য সভাপতি নড্ডা’জির অভিনন্দন প্রাপ্য।’’ সেই সঙ্গে মোদী দাবি করেন, বিজেপি এ বার মহিলাদের ভোট বেশি পেয়েছে। আর যেখানে যেখানে সেটা হয়েছে, সেখানেই বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছে দল।
২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচন। তার আগে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচন বড় পরীক্ষা ছিল বিজেপি-র কাছে। যোগী সরাসরি পরীক্ষায় বসলেও ফলের দিকে পরীক্ষার্থীর মতোই তাকিয়ে ছিলেন মোদী। এক অর্থে এই রাজ্য মোদীরও। কারণ, তিনি বারাণসীর সাংসদ। ২০২১ সালের দুর্গাপুজোর পর থেকেই উত্তরপ্রদেশে প্রচারে নেমে গিয়েছিলেন তিনি। যোগী যেমন অযোধ্যাকে কেন্দ্র করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তেমনিই বারাণসীকে ভর করে গোটা উত্তরপ্রদেশের দিকে নজর রেখেছিলেন মোদী।
সেই উত্তরপ্রদেশের জয় নিয়ে মোদী বলেন, ‘‘এই রাজ্যের মানুষকে জাতিবাদ দিয়ে ভাগ করা হয়েছে এতকাল। বলা হয়েছে, জাতপাতের হিসেবে নির্বাচন হয় এখানে। এর মাধ্যমে সেই নাগরিকদের এবং গোটা উত্তরপ্রদেশের বদনাম করা হয়েছে। কিন্তু রাজ্যের মানুষ পর পর নির্বাচনে দেখিয়ে দিলেন, উত্তরপ্রদেশের মানুষ উন্নয়নে ভরসা রেখেই ভোট দিয়েছেন। পর পর চারটি নির্বাচনে রাজ্যে মানুষ জবাব দিয়েছেন।’’
তবে উত্তরপ্রদেশের ফলকে ‘গেরুয়া ঝড়’ বলা যাবে না। বড়জোর ‘গেরুয়া হাওয়া’ বলা যেতে পারে। কারণ, পাঁচ বছর আগে যে শক্তি নিয়ে যোগী ক্ষমতায় এসেছিলেন, তার চেয়ে বিজেপি-র আসন কমেছে। তবে উত্তরপ্রদেশের সঙ্গে সঙ্গে উত্তরাখণ্ড, গোয়া, মণিপুরে ক্ষমতা ধরে রাখার কৃতিত্বও দেখিয়েছে বিজেপি। গোয়ায় জাদু সংখ্যার দোরগোড়ায় থাকা বিজেপি ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় একটি আসনের সমর্থন তারা পেয়ে যাবে।
পরিসংখ্যান বলছে, এর মধ্যে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড ও গোয়ায় পরপর একই রাজনৈতিক দলের সরকার গঠনের নজির নেই। এটাও বিজেপি-র পক্ষে শ্লাঘার বিষয়। সে কথাও বারবার উঠে এসেছে মোদীর বক্তব্যে। তিনি বলেছেন, ‘‘পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পরে কোনও মুখ্যমন্ত্রীকে ফিরিয়ে আনাটা ইতিহাস। উত্তরপ্রদেশে ৩৭ বছর পরে পরপর দু’বার কোনও মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমতায় এলেন। গোয়ায় টানা তিনবার ক্ষমতায় এল বিজেপি। দশ বছর ক্ষমতায় থাকার পরেও রাজ্যে বিজেপি-র আসন বেড়েছে। উত্তরাখণ্ডেও বিজেপি ইতিহাস গড়েছে। রাজ্যে এই প্রথম কোনও দল পরপর দু’বার ক্ষমতায়।’’
ইতিমধ্যেই গেরুয়া শিবির বলতে শুরু করেছে, চার রাজ্যের মানুষই দলের স্লোগান ‘ডবল ইঞ্জিন সরকার’-এর পক্ষে রায় দিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে যে পরিসংখ্যান সামনে এসেছে, তাতে এটাও পরিষ্কার যে, এই ফলাফলে বিজেপি-র পক্ষে গিয়েছে ধর্মীয় সমীকরণ। যদিও মোদী বৃহস্পতিবার দাবি করেছেন, এই জয় আসলে উন্নয়ন ও সুশাসনের পক্ষে রায়। একই সঙ্গে ‘ডবল ইঞ্জিন’ প্রসঙ্গও টেনেছেন মোদী। বলেছেন, ‘‘যেখানে যেখানে ডবল ইঞ্জিন সরকার চলছে সেখানেই উন্নয়নের কাজ চলছে।’’