অশনি সঙ্কেত মিলেছিল ৮ বছর আগেই। ২০১৪-র লোকসভা ভোটে একা লড়তে গিয়ে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছিল মায়াকে। এর পর ২০১৭-র বিধানসভা ভোটেও একা লড়তে গিয়ে বিপর্যয় হয় তাঁর দলের। মাত্র ১৯টিতে জেতে। যদিও সে বার ২২ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল বিএসপি। এ বার তা ১৩ শতাংশেরও নীচে নেমে এসেছে।
মুছেই গেল মায়ার দল। ফাইল চিত্র।
শূন্যতার মায়াবনে বিহারিণী হয়ে গেলেন মায়াবতী। একেবারে শূন্য না হলেও, উত্তরপ্রদেশের ৪০৩ বিধানসভা আসনের মধ্যে মাত্র একটিতে জিততে পেরেছে তাঁর বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি)। মাত্র দেড় দশক আগে এই মায়াবতীই উত্তরপ্রদেশে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে হয়ে উঠেছিলেন দেশের দলিত রাজনীতির প্রতীক।
রাজনীতি বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, দেশের বৃহত্তম রাজ্যের (জনসংখ্যার নিরিখে) ভোট-রাজনীতিতে যে কাদায় হাতি (বিএসপি-র নির্বাচনী প্রতীক) পড়েছে, তাতে উঠে দাঁড়ানো কঠিন। ভোটের ফল বলছে, ১৯৮৪ সাল থেকে কাঁসিরামের তৈরি দলিত ভোটব্যাঙ্কে ধস নেমেছে দেশের প্রথম (এবং একমাত্র) দলিত মহিলা মুখ্যমন্ত্রী মায়ার জমানায়। সংখ্যালঘু এবং সবর্ণ (উচ্চবর্ণ) ভোটও জোটেনি। অথচ এই মায়াবতীই তাঁর বিখ্যাত ‘সামাজিক ইঞ্জিনিয়ারিং’ তত্ত্ব খাটিয়ে ২০০৭ সালে উচ্চবর্ণ, দলিত এবং সংখ্যালঘু ভোটের মিশ্রণ ঘটিয়ে ১৮ বছর পরে নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠ সরকার গড়েছিলেন লখনউয়ে। এমনকি, ২০১৯-এও অখিলেশের দল সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে জোট গড়ে উত্তরপ্রদেশে ১০টি লোকসভা আসনে জিতেছিল বহেনজির দল। বিধানসভা-ভিত্তিক হিসেবে ৬৫ আসনে এগিয়ে ছিলেন হাতি চিহ্নের প্রার্থীরা।
অশনি সঙ্কেত মিলেছিল ৮ বছর আগেই। ২০১৪-র লোকসভা ভোটে একা লড়তে গিয়ে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছিল মায়াকে। এর পর ২০১৭-র বিধানসভা ভোটেও একা লড়তে গিয়ে বিপর্যয় হয় তাঁর দলের। মাত্র ১৯টিতে জিতেছিল তাঁর দল। যদিও সে বার ২২ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল বিএসপি। এ বার তা ১৩ শতাংশেরও নীচে নেমে এসেছে।
গত পাঁচ বছর উত্তরপ্রদেশের রাজনীতির ময়দানে মায়া অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিলেন। অমিত শাহ ডিসেম্বরে উত্তরপ্রদেশে গিয়ে বলেছিলেন, মায়াবতী ঘরে বসে রয়েছেন। আবার এসপি, কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, মায়ার মুখ্যমন্ত্রিত্বের সময়ে নানা দুর্নীতির ‘জুজু’ দেখিয়েই তাঁকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলেছে পদ্ম-শিবির।
ভোট ঘোষণার পর মায়াকে একটা দীর্ঘ সময় প্রচারেই দেখা যায়নি। পরের দিকে প্রচার শুরু করলেও জনসভার সংখ্যা ছিল অনেক কম। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মায়াবতী এ বার প্রার্থী নির্বাচনে দলিত-মুসলিম সমীকরণের উপরে নির্ভর করেছিলেন। বিএসপি প্রার্থীদের এক তৃতীয়াংশই ছিলেন মুসলিম। ভোটের আগেই উত্তরপ্রদেশে আওয়াজ উঠেছিল, বিজেপি-কে সুবিধা করে দিতেই এই কৌশল নিয়েছেন বহেনজি।
উত্তরপ্রদেশের ভোট-ইতিহাস বলছে, ১৯৮৯ সালে প্রথম বার কাঁসিরামের নেতৃত্বে সে রাজ্যের বিধানসভা ভোটে লড়ে ১৩টি আসনে জিতেছিল বিএসপি। পরের বিধানসভা ভোটে (১৯৯১) একটি আসন কমলেও ১৯৯৩ থেকে ধারাবাহিক ভাবে ভোট এবং আসন বাড়ে বিএসপি-র। সেই প্রভাব বৃদ্ধির সুবাদে মুলায়ম সিংহ যাদব সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন মায়া। দু’বার হয়েছিলেন বিজেপি সমর্থিত জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী। শেষ পর্যন্ত ২০০৭-এ ২০৬ আসনে জিতে নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পেয়ে তৃতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। পাঁচ বছরের মেয়াদও পূর্ণ করেছিলেন প্রথম বার।
ঘটনাচক্রে, তার পর থেকেই তাঁর দলের ভোট-লেখচিত্র নিম্নমুখী হতে শুরু করে। ২০১২-র বিধানসভা ভোটে বিএসপি-র আসন নেমে এসেছিল ৮০-তে। যদিও প্রধান বিরোধী দলের তকমা পেয়েছিল তারা। কয়েক বছর আগে মায়ার পুরনো সঙ্গী লালজি বর্মা দল ছাড়ার সময় বলেছিলেন, ‘‘২০০৭-এর জয়ের পর বাড়তি গুরুত্ব দিতে শুরু করেছিলেন উচ্চবর্ণকে। ২০১২ থেকে তার দাম দিতে হচ্ছে বিএসপি-কে।’’
উচ্চবর্ণ এবং সংখ্যালঘু ভোট হাতছাড়া হতে শুরু করেছিল আগেই। বৃহস্পতিবার ভোটের ফল জানাল, বহেনজির উপর ভরসা হারিয়েছেন দলিত ভোটদাতারাও।