‘সংযুক্ত কিসান মোর্চা’ নেতৃত্ব। —ফাইল চিত্র।
তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেই চাষিদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন। তা সত্ত্বেও উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাবের ভোটে চাষিদের ক্ষোভের খেসারত দিতে হতে পারে বলে বিজেপি নেতৃত্বের আশঙ্কা রয়েছে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারির বাজেটে তাই মোদী সরকার চাষিদের ক্ষতে যতটা সম্ভব প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। জনমোহিনী কোনও প্রকল্প না হলেও, গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নতি, চাষিদের আয় বাড়ানোকে পাখির চোখ করে কিছু পদক্ষেপ ঘোষণা করা হতে পারে।
অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, ইতিমধ্যেই উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব-সহ সহ পাঁচ রাজ্যের ভোটের ঘোষণার ফলে নির্বাচনী আচরণবিধি জারি হয়ে গিয়েছে। তাই নির্দিষ্ট ভাবে উত্তরপ্রদেশের জন্য কিছু ঘোষণা করা হবে না। তবে উত্তরপ্রদেশের অধিকাংশই যে গ্রামীণ এলাকা, সে কথা মাথায় রেখে বাজেটে চাষি, পশুপালক তথা গ্রামীণ অর্থনীতির জয়গান শোনা যাবে। রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডের কিছু চালু পরিকাঠামো প্রকল্পের উল্লেখ থাকবে বাজেটে। এতে ভোটারদেরও বার্তা দেওয়া হবে। নির্বাচনী আচরণবিধিও লঙ্ঘন হবে না। উত্তরপ্রদেশের ভোটের দশ দিন আগে, কোভিডের ধাক্কায় নাজেহাল ভোটারদের জন্য আশাব্যঞ্জক, ইতিবাচক আবহ তৈরির চেষ্টা হবে।
কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ-সহ পাঁচ রাজ্যের ভোটের আগে গত বছরের বাজেট পেশ হয়েছিল। এমন নয় অর্থমন্ত্রী আলাদা করে পশ্চিমবঙ্গের জন্য বিশেষ কোনও প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন। তবে বাজেটে কলকাতা-শিলিগুড়ি ৬৭৫ কিলোমিটার জাতীয় সড়কের জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকা খরচের উল্লেখ করেছিলেন। তামিলনাড়ু, কেরল, অসমের মতো অন্যান্য ভোটমুখী রাজ্যের সড়ক প্রকল্পেরও বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছিল। এ বারও একই ভাবে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পঞ্জাব, গোয়া, মণিপুরের কিছু প্রকল্পের উল্লেখ বাজেটে থাকবে বলে ধরে নেওয়া যায়।’’
কৃষি ক্ষেত্রে বাজেটের বরাদ্দের একটা বড় অংশ পিএম-কিসান ও প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনায় খরচ হয়। সরকারি সূত্রের খবর, এর সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের ভোটের কথা মাথায় রেখে বাজেট বক্তৃতায় কৃষক, পশুপালক-সহ গ্রামের মানুষের আয় বাড়ানোর দিকে সরকার কী ভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে, তা তুলে ধরা হবে। কৃষি ক্ষেত্রে বেসরকারি লগ্নি, কৃষি পণ্যের রফতানি, বিপণন, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে উৎসাহ দিতে বেসরকারি শিল্পের জন্য কিছু উৎসাহ ভাতা ঘোষণা করা হতে পারে। চাষিদের আয় বাড়ানোর পদক্ষেপ হিসেবেই তা তুলে ধরা হবে।
চাষআবাদের পাশাপাশি গ্রামের মানুষকে অন্যান্য কাজকর্ম থেকে রোজগারে উৎসাহ দিতেও পদক্ষেপ করার কথা ভাবা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তার ব্যাখ্যা, ‘‘আপাত ভাবে এই সব পদক্ষেপ গোটা দেশের জন্যই ঘোষণা হবে। কিন্তু বাজেটের পরেই তা নিয়ে উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, উত্তরাখণ্ডের মতো কৃষি নির্ভর রাজ্যে রাজনৈতিক প্রচারের সুযোগ তৈরি হয়ে যাবে।’’
অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ২০১৭-তে উত্তরপ্রদেশ ভোটের আগেও ঠিক একই কৌশল নেওয়া হয়েছিল। সে বারও তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি উত্তরপ্রদেশের ভোটের ঠিক দশ দিন আগে বাজেট পেশ করেছিলেন। সেই বাজেটেও তিনি চাষিদের আয় বাড়ানো, গ্রামের পরিকাঠামো নির্মাণ, রোজগারের সুযোগ তৈরি, গ্রামের মানুষের জন্য বাড়ি তৈরি, দারিদ্র দূরীকরণে বেশি খরচের কথা বলেছিলেন। তা নিয়েই বিজেপি প্রচার করেছিল।