১৬২ মিনিট! বক্তৃতা দিতে গিয়ে অসুস্থ নির্মলা

আজ রাজধানী গুলজার নির্মলার বক্তৃতার দৈর্ঘ্য নিয়েই!

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:৩৮
Share:

অসুস্থ: বাজেট বক্তৃতার ফাঁকে নির্মলা। শনিবার। পিটিআই

গত বছর তিনিই রেকর্ড গড়েছিলেন। আজ সেই রেকর্ডকে নিজেই ছাপিয়ে গেলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। সংসদের ইতিহাস বলছে, এখনও পর্যন্ত দীর্ঘতম বাজেট বক্তৃতার নজিরটি গড়েছিলেন নির্মলা, গত বছর দু’ঘণ্টা ১৭ মিনিট বক্তৃতা দিয়ে। এ বার সেটি ছাপিয়ে দু’ঘণ্টা ৪২ মিনিট বক্তৃতা দিয়েছেন তিনি। তবে এই দীর্ঘ কথনের ধাক্কায় লিখিত বক্তৃতার শেষ পাতা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি অর্থমন্ত্রী। তার আগেই অসুস্থ বোধ করায় বসে পড়তে দেখা যায় তাঁকে। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে চাঙ্গা হন।

Advertisement

আজ রাজধানী গুলজার নির্মলার বক্তৃতার দৈর্ঘ্য নিয়েই! বিরোধীদের টিপ্পনী, লোকসভা কক্ষে হাই-তোলার প্রতিযোগিতা, মন্ত্রিসভার সতীর্থদের আড়ালে সমালোচনা আর শেষ পর্যন্ত খোদ অর্থমন্ত্রীরই অসুস্থ হয়ে পড়া— এই আলোচনায় আরও হাওয়া জুগিয়েছে। সংসদীয় ইতিহাস বলছে, এনডিএ আমলে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী যশোবন্ত সিংহের বক্তৃতা (দু’ঘণ্টা ১৫ মিনিট) ছিল সে পর্যন্ত দীর্ঘতম। গত বছর তাকে ছাপিয়ে যায় নির্মলারই বক্তৃতা। ২০১৪ সালে প্রয়াত কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেছিলেন দু’ঘণ্টা দশ মিনিট। ১৯৯১ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিংহের প্রখ্যাত বক্তৃতাও দীর্ঘ বাজেট বক্তৃতাগুলির তালিকায় পড়ে। কিন্তু সেই মনমোহনকেও যেন বিভ্রান্ত দেখাল। বাজেট পেশ করার পরে প্রত্যেক বছরই দু’কথা বলে সংসদ ছাড়েন তিনি। কিন্তু এ বার প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়ায় মনমোহন বললেন, ‘‘এত দীর্ঘ বাজেট! সবটা ভাল করে হজম করতে সময় লাগবে!’’

আজ বক্তৃতার প্রথম দু’ঘণ্টা তেত্রিশ মিনিট নির্জলা চালিয়ে গিয়েছেন নির্মলা। পাশ থেকে তাঁর সতীর্থরা জল খেতে অনুরোধ করলেও তিনি জানান, সমস্যা নেই। দু’ঘণ্টা চৌত্রিশ মিনিটের মাথায় প্রথম জল খেতে দেখা যায় তাঁকে। তিন মিনিটের মাথায় আবার জল আসে। পাশ থেকে রাজনাথ সিংহ তাঁকে বসে পড়তে বলেন। কিন্তু তখনও নির্মলা জানান যে, আর মাত্র কয়েক পাতা রয়েছে। তিনি সামলে দিতে পারবেন। নিতিন গডকড়ীকে দেখা যায় তাঁকে একটি স্ট্রেপসিল-জাতীয় ট্যাবলেট দিতে। কিন্তু এর পরেই অসুস্থ বোধ করায় স্পিকারের অনুমতি নিয়ে বসে পড়েন নির্মলা। বিরোধী বেঞ্চ থেকে দৌড়ে আসেন কাকলি ঘোষ দস্তিদার। তাঁকে স্পিকার ফিরে যেতে বললে তিনি জানান যে শুধু সাংসদ নন, তিনি ডাক্তারও! পরে কাকলি জানান, ‘‘একটানা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে রক্ত পায়ে নেমে আসে। মাথায় রক্তচলাচল কম হতে থাকে। সে কারণেই অসুস্থ হয়ে পড়েন নির্মলা।’’ গ্যালারিতে বসা তাঁর কন্যা ভাঙ্গময়ী পরাকলাকে বেশ কয়েক বার বাইরে উঠে আসতে দেখা যায়। পরে তিনি নীচে মায়ের ঘরে চলে যান। কিছু ক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ফের বাজেট পেশ করে যান অর্থমন্ত্রী।

Advertisement

বক্তৃতার এই দৈর্ঘ্যের জন্য অন্যতম দায়ী ব্যক্তিটি এক বঙ্গসন্তান! তিনি মন্ত্রকের অর্থনীতি বিষয়ক সচিব অতনু চক্রবর্তী। পরে সাংবাদিক সম্মেলনে নির্মলাই বলেন, ‘‘মানছি যে বক্তৃতাটি অত্যন্ত লম্বা ছিল। আমি সচিবকে বলেওছি যে এত লম্বা কেন লিখেছেন!’’ পাশাপাশি অবশ্য তিনি এ কথাও বলেন যে, যুবসম্প্রদায়ের কর্মসংস্থান কী ভাবে হতে পারে তার বিশদ উল্লেখ ছিল বলেই বক্তৃতা দীর্ঘ হয়েছে। বিরোধীদের অবশ্য বক্তব্য, বাজেটে সারবত্তা কিছু ছিল না বলেই তা আড়াল করতে এত বেশি কথা বলতে হয়েছে। রাহুল গাঁধীর কথায়, ‘‘সংসদীয় ইতিহাসের সম্ভবত দীর্ঘতম বাজেট বক্তৃতা। কিন্তু ফাঁপা।’’ মোদী সরকারের এক প্রমীলা মন্ত্রীর মতে, এত লম্বা বক্তৃতা কোনও মহিলা মন্ত্রীকে দিতে দেওয়া উচিত হয়নি। এত দাঁড়িয়ে থাকা শারীরিক ভাবে সমস্যা তৈরি করতে পারে মহিলাদের। কিন্তু পাশাপাশি এ কথাও তিনি বলছেন, একটু বুদ্ধি খরচ করে মাঝের কয়েক পাতা বাদ দিয়ে এগোতে পারতেন নির্মলা। তা হলে অন্তত বক্তৃতাটি শেষ করতে পারতেন তিনি। বাজেট বক্তৃতা দিতে দিতে অসুস্থ হয়ে পড়ে তা শেষ না করতে পারাও নজিরবিহীন বলেই জানাচ্ছে রাজনৈতিক শিবির। এর আগে অরুন জেটলি অসুস্থ বোধ করায় স্পিকারের অনুমতি নিয়ে বসেই বাকিটা শেষ করেছিলেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement