অর্থনৈতিক মন্দার অন্ধকার থেকে কি আসন্ন অর্থবর্ষেই আলোয় ফিরতে পারব আমরা? সংসদে শনিবার কেন্দ্রীয় বাজেট-প্রস্তাব পেশের আগের দিন সেই ইঙ্গিত দিল আর্থিক সমীক্ষা। জানাল, আগামী ১ এপ্রিল থেকে যে অর্থবর্ষটা (২০২১-এর ৩১ মার্চ পর্যন্ত) শুরু হচ্ছে, তাতে আমাদের জিডিপি বৃদ্ধির হার বেড়ে দাঁড়াবে ৬ থেকে সাড়ে ৬ শতাংশে। যদিও জিডিপি বৃদ্ধির হার বাড়লেই মন্দার অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব কি না, তা নিয়ে যথেষ্টই সংশয় রয়েছে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।
২০১৯ সালের জুলাইয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে দাবি করা হয়েছিল, চলতি অর্থবর্ষে (যা শেষ হচ্ছে ৩১ মার্চ) জিডিপি বৃদ্ধির হার হবে ৭ শতাংশ। কিন্তু এ বারের সমীক্ষার পূর্বাভাস, তা ৫ শতাংশের বেশি হবে না। যা গত ১১ বছরে সর্বনিম্ন। জানুয়ারির গোড়ায় একই পূর্বাভাস ছিল কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রকেরও।
চলতি অর্থবর্ষে ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার নিয়ে এ বারের আর্থিক সমীক্ষায় যে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, মাসখানেক আগেই সেই ইঙ্গিত মিলেছিল বিশ্বব্যাঙ্ক ও আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার (আইএমএফ)-এর দেওয়া পরিসংখ্যানে। আইএমএফ জানিয়েছিল, চলতি অর্থবর্ষে ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার থাকবে ৫ শতাংশেরও নীচে। ৪.৮ শতাংশ।
কী ভাবে আগামী অর্থবর্ষে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার ঊর্ধ্বমুখী হবে, তার একটি রূপরেখাও দেওয়া হয়েছে আর্থিক সমীক্ষায়। বলা হয়েছে, অগ্রাধিকার দেওয়া হবে ‘সম্পদ সৃষ্টি’র উপর। আর তার জন্য নতুন ১০টি উপায়ের কথাও বলা হয়েছে সমীক্ষায়।
আরও পড়ুন- চাঙ্গা চাহিদাই চাকরির চাবি, বাজেটে সরকারি খরচ বাড়ানোর পরামর্শ
আরও পড়ুন- এক ঝলকে আর্থিক সমীক্ষা
কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রক ও এ বারের আর্থিক সমীক্ষার পূর্বাভাস যদি মিলে যায় মাসদু’য়েক পর, তা হলে আর্থিক বৃদ্ধির হারের নিরিখে আগের অর্থবর্ষের (২০১৮-’১৯) চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে পড়বে চলতি অর্থবর্ষ। আগের অর্থবর্ষে দেশের জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৬.৮ শতাংশ।
তার পর থেকেই হু হু করে কমতে থাকে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার। গত বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের ত্রৈমাসিকে সেই হার কমে গিয়ে হয় মাত্র সাড়ে ৪ শতাংশ। ২০১৩ সালের পর কখনও এতটা নামেনি দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনৈতিক মন্দার জেরে কেন্দ্রীয় সরকারকে গত বছরে তার সংস্কারের পরিকল্পনায় কাটছাঁট করতে বাধ্য করেছে। আগামী দিনেও একই পথে থাকতে হবে কেন্দ্রকে। সাধারণ মানুষের কাঁধে করের বোঝা কিছুটা কমাতে গিয়েই সংস্কারের পরিকল্পনাগুলি বাস্তবায়িত করার প্রয়াসগুলিকে আপাতত আরও কিছু দিন বন্ধ রাখতে হবে। নির্মাণ শিল্পের শ্রমিকদের দিতে হবে কিছু বাড়তি সুযোগসুবিধা।
তার ফলে, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে এ বার আমজনতার আয়করে কিছুটা ছাড় দিতে হবে, ব্যবসার সম্প্রসারণের জন্য কমাতে হবে কর্পোরেট করের হার এবং আরও বাড়াতে হবে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ব্যয় বরাদ্দ, জানাচ্ছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
দেশে অর্থনৈতিক মন্দার কী কী কারণ, কী ভাবে ব্যবসা আরও সহজে শুরু করা ও তা চালিয়ে যাওয়া যাবে, সে ব্যাপারেও আলোকপাত করা হয়েছে এ বারের আর্থিক সমীক্ষায়।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ