ফাইল চিত্র।
‘প্রকৃত সমালোচকের’ অভাব বোধ করছেন নরেন্দ্র মোদী!
প্রধানমন্ত্রিত্বের সাত বছরে একটি বারও সাংবাদিক বৈঠক করেননি তিনি। নিন্দুকদের অভিযোগ, কোনও কালেই সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না তিনি। সে কারণে অপ্রিয় প্রশ্ন শুনে সাক্ষাৎকার বন্ধ করে উঠেও গিয়েছেন। বিরোধীদের কটাক্ষ, অপ্রিয় প্রশ্ন বা সমালোচনা শোনার ভয়েই গত সাত বছরে একটি বারও সাংবাদিক সম্মেলন করেননি মোদী। তার বদলে কিছু ‘ঘনিষ্ঠ’ সংবাদমাধ্যমে বসে বাছাই করা নির্বিষ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। সেই মোদী এ দিন দাবি করলেন, তিনি প্রকৃত সমালোচকের অভাব বোধ করছেন। আজ একটি পত্রিকার সাক্ষাৎকারে তাঁর দাবি, তিনি সমালোচনাকে বিশেষ গুরুত্ব দেন, সম্মান করেন সমালোচকদের। তবে আজকের দিনে খুব কমই প্রকৃত সমালোচক রয়েছেন। কারণ অধিকাংশ মানুষই কেবল অভিযোগ করেই দায় সারেন।
৭ অক্টোবর প্রশাসক হিসাবে কুড়ি বছর পূর্ণ হবে নরেন্দ্র মোদীর। বিরোধীদের অভিযোগ, রাজনৈতিক জীবনে কোনও দিন সমালোচনা খোলা মনে নিতে পারেননি মোদী। তাই কেশুভাই পটেল বা প্রবীণ তোগাড়িয়ার মতো নেতারা মোদীর বিরুদ্ধে সরব হতেই তাঁদের ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। মোদীর বিরুদ্ধে মুখ খুলে দল ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন যশবন্ত সিনহা, শত্রুঘ্ন সিংহ বা অরুণ শৌরির মতো প্রবীণ নেতারা। মোদীর প্রধানমন্ত্রী পদ প্রার্থী হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলায় দলে অপাংক্তেয় করে দেওয়া হয়েছে লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলী মনোহর জোশীর মতো শীর্ষ নেতাদেরও। সেই মোদী আজ সমালোচনাকে পছন্দ করেন বলায় তাই প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে।
মোদীর দাবি, সমালোচনা তাঁর ব্যক্তিগত উন্নতিতে সাহায্য করে। তিনি খোলা মনে সমালোচকদের সম্মানও করেন। যদিও তাঁর মতে, আজকের দিনে প্রকৃত সমালোচকদের সংখ্যা অল্প, কারণ অধিকাংশই কেবল অভিযোগ তুলতে ব্যস্ত। যা শুনে বিরোধীদের প্রশ্ন, সমালোচনা যখন শুনতে পছন্দ করেন, তখন বিরোধী ও সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের মুখোমুখি কেন হন না প্রধানমন্ত্রী!
সামনেই উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে নির্বাচন। কিন্তু গত প্রায় এক বছর ধরে কৃষি আইনের বিরোধিতায় সরব কৃষকদের একাংশ। যা রীতিমতো চিন্তায় ফেলেছে বিজেপিকে। কৃষি আইনকে কেন্দ্র করে সরকার যে অস্বস্তিতে, এ দিন তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে মোদীর কথাতেও। আন্দোলনরত কৃষকদের গোড়া থেকেই সমর্থন করছে কংগ্রেস, তৃণমূল, এসপি, বিএসপি-র মতো দলগুলি। আজ বিরোধীদের ওই ভূমিকার সমালোচনা করে মোদী বলেন, ‘‘যাঁরা কৃষি আইনের বিরোধিতা করছেন, তাঁদের দেখলেই অসততার ছবিটি স্পষ্ট হয়ে যেতে বাধ্য। কারণ এঁরাই এক সময়ে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিলেন, ক্ষমতায় এলে তাঁরাও ওই আইনই আনবেন।’’ মোদীর দাবি, তাঁর সরকার ছোট কৃষকদের আয় বাড়াতে বদ্ধপরিকর। বিরোধীরা পাল্টা বলছেন, ‘বন্ধু’ ব্যবসায়ীদের এক তরফা ভাবে সুবিধা করে দিতেই তাড়াহুড়ো করে কৃষি আইন চালু করা হয়েছে। যার ধাক্কায় দাম বাড়ছে ভোজ্য তেল থেকে শুরু করে সব কিছুরই। অথচ চাষিরা উপযুক্ত দাম পাচ্ছেন না, উল্টে জনতার পকেটে টান পড়ছে।
মোদীর বক্তব্য, কৃষি আইনের যে বিষয়গুলি নিয়ে সমস্যা রয়েছে, সরকার তা নিয়ে আলোচনা করতে রাজি। মোদীর দাবি, শুধু কৃষি আইন নয়, একই ধরনের রাজনৈতিক ধোঁকাবাজি আধার, জিএসটি এমনকি সেনাকে শক্তিশালী করার প্রশ্নেও দেখা গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘বিরোধীরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছেন, তা যখন পূরণ করা হয়, তখন তার বিরোধিতা করা হয়। রাজনৈতিক দলগুলি নতুন সংসদ ভবন গড়ার দাবি করেন, আর বাস্তবে যখন তা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তখন তার বিরোধিতা করা হয়। এই করে দলগুলি নিজেদের উপহাসের পাত্রে পরিণত করেছে।’’