আজই দায়িত্ব হাতে নিয়েছেন উদ্ধব। ছবি: পিটিআই।
মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেই মুম্বইয়ের আরে কলোনিতে বিতর্কিত মেট্রো কারশেড নির্মাণে স্থগিতাদেশ দিলেন উদ্ধব ঠাকরে। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত সেখানে গাছের একটি পাতাও কাটা যাবে না বলে জানিয়ে দিলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার শপথ নেওয়ার পর শুক্রবার সকালে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করে উদ্ধব। এ দিন সাংবাদিক বৈঠক ডেকে উদ্ধব বলেন, ‘‘আরে কলোনিতে কারশেড তৈরির কাজ আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছি। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত সেখানে গাছের একটি পাতাও কাটা যাবে না। বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখতে হবে। তবে কারশেড তৈরির কাজ বন্ধ থাকলেও, মেট্রোর কাজ চলবে।’’ রাজ্যের নয়া মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব মুম্বইকে বাঁচাতে চেষ্টায় কোনও ত্রুটি রাখবেন না বলেও জানান। তিনি বলেন, ‘‘রাতারাতি আরে কলোনিতে গাছ কেটে ফেলা হয়েছিল বলে কাগজে পড়েছিলাম। তা একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না। আমিই মুম্বইয়ে জন্ম নেওয়া প্রথম মুখ্যমন্ত্রী। এই শহরকে বাঁচাতে যা দরকার পড়বে, করব।’’
তাঁর এই ঘোষণায় আপাতত স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন মুম্বইয়ের পরিবেশকর্মীরা। বিধানসভা নির্বাচনের ঢের আগে থেকেই ওই অঞ্চলে গাছ কাটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন তাঁরা। সেই সময় তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন উদ্ধব-পুত্র আদিত্য। ক্ষমতায় এলে এর একটা বিহিত করে ছাড়বেন বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। তার পরেই এই সিদ্ধান্ত।
আরও পড়ুন: পতন অব্যাহত, দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার আরও কমে দাঁড়াল ৪.৫ শতাংশে, ছ’বছরে সর্বনিম্ন
তবে নয়া মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তে ইতিমধ্যেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন উদ্ধবের পূর্বসুরি দেবেন্দ্র ফডণবীস। এ দিন টুইটারে তিনি লেখেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও মেট্রো কারশেড নির্মাণে স্থগিতাদেশ দিল রাজ্য সরকার। এতেই বোঝা যায়, মুম্বইয়ের পরিকাঠামো সংক্রান্ত প্রকল্পগুলি সম্পর্কে একেবারেই সিরিয়াস নয় এই সরকার। এতে সধারণ মানুষই নাকাল হবেন।’’ জাপানের জিকা সংস্থা মু্ম্বইয়ের মেট্রো প্রকল্পে ১৫ হাজার কোটি টাকা ঢেলেছে। এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিলে ভবিষ্যতে বিনিয়োগকারীরা অনুৎসাহিত হয়ে পড়বেন বলেও জানান প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস।
ফডণবীসের টুইট।
আরও পড়ুন: চাষি বেচছেন ৮ টাকায়, আমরা ১২০ টাকায় কিনছি, পেঁয়াজের এত লাভ কার পকেটে যাচ্ছে?
প্রায় ৫ লক্ষ সবুজ গাছপালায় ঢাকা ১ হাজার ২৮০ হেক্টর আয়তনের আরে মায়ানগরীর ফুসফুস হিসাবে পরিচিত। দেবেন্দ্র ফডণবীসের সরকার ওই এলাকাতেই মেট্রো রেলের কারশেড ডিপো গড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই নিয়ে গত দু’বছর ধরে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং মহারাষ্ট্র সরকারের মধ্যে টানাপড়েন চলছিল। মামলা গিয়ে পৌঁছয় সুপ্রিম কোর্ট এবং জাতীয় পরিবেশ আদালত (ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনাল)-এও। তার মধ্যেই সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পরিবেশকর্মী এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে বম্বে হাইকোর্টে চারটি আবেদনও জমা পড়ে। তাতে গাছ কাটা বন্ধের আর্জি জানানোর পাশাপাশি, আরে কলোনির ওই এলাকাকে ‘সংরক্ষিত বনাঞ্চল’ ঘোষণার দাবি জানানো হয়। সেই আর্জি যদিও খারিজ করে দেয় বম্বে হাইকোর্ট। তার পরেই জোরকদমে গাছ কাটানো শুরু করেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। দু’দিনে ২ হাজার ১৪১ গাছ কাটা হয়। তার পর, গত ৭ অক্টোবর আরে অরণ্যের গাছ গাটার উপর স্থগিতাদেশ জারি করে সুপ্রিম কোর্ট।