ছবি: পিটিআই।
বিশাল পাথরের নীচ থেকে উঁকি মারছিল ছোট দু’টি হাত। একটি হাত আর একটি হাতকে ধরে রয়েছে। অনেকটা আগলানোর ধাঁচেই। পাথর সরাতেই বেরিয়ে এল থ্যাঁতলানো দু’টি দেহ। এক জনের বয়স ১১, অন্য জনের তিন। তারা দুই বোন।
সোমবার বিশাল ধস নেমে এসেছিল তাদের বাড়ির উপর। সন্ধ্যা তখন ৭টা। বাইরে অঝোরে বৃষ্টি। বারান্দায় তখন পড়ায় মগ্ন ছিল শ্রুতি। হঠাৎই ঘড়ঘড় একটা শব্দ শুনে ঘরের ভিতরে দৌড়ে গিয়েছিল সে। ভেবেছিল শব্দটা ঘরের ভিতর থেকে আসছে। শ্রুতির পাশেই বসেছিল তার বছর তিনেকের বোন জ্ঞানশ্রী। দিদিকে ঘরের দিকে ছুটে যেতে দেখে সেও পিছু নিয়েছিল।
শ্রুতির মা রান্নাঘরে ছিলেন। আওয়াজটা তিনিও শুনেছিলেন। কিন্তু ঠিক ঠাওর করতে পারেননি কিসের আওয়াজ ওটা। যখন বুঝতে পারলেন, তত ক্ষণে অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছিল। একেবারে বাড়ির ঘাড়ের কাছে নেমে এসেছিল বিশাল পাথরের চাঁই আর ধস। শ্রুতির মা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। ভেবেছিলেন মেয়েরা আওয়াজ শুনে ঘরের বাইরে বেরিয়ে পড়েছে। দুই মেয়েকে বাইরে দেখতে না পেয়ে তিনি ফের যখন ঘরে ঢুকতে যাবেন, বিশাল একটা পাথর এসে পড়ল গোটা বাড়িটার উপর। মুহূর্তে গুঁড়িয়ে গেল গোটা বাড়ি।
মেয়েদের না পেয়ে অসহায়ের মতো ছুটে বেড়াচ্ছিলেন শ্রুতির মা। কিন্তু তাঁর দুই মেয়ে যে সেই পাথরের নীচেই চাপা পড়ে রয়েছে সেটা কল্পনাও করতে পারেননি। এ দিকে বৃষ্টি ক্রমে বাড়ছিল। ধস নেমে আসায় আশপাশের লোকেরা তখন শ্রুতিদের বাড়িতে এসে জড়ো হয়েছেন উদ্ধারকাজে। খবর দেওয়া হয়েছিল উদ্ধারকারীদেরও। বেশ কয়েক ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পর যখন দুই মেয়ের কোনও হদিস পাননি, আশঙ্কায় বুক কেঁপে উঠেছিল তাঁর। আর সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়ে আরও কয়েক মিনিট পড়েই ধরা দিল।
বাড়ির ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে যখন খোঁজাখুঁজি করছিলেন উদ্ধারকারীরা, হঠাৎই সেই পাথরের নীচে ছোট দু’টি হাত নজরে আসে তাঁদের। একটি হাত, আর একটি হাতকে ধরে রয়েছে। পাথর সরাতেই বেরিয়ে এল শ্রুতি আর জ্ঞানশ্রী ক্ষতবিক্ষত দেহ। ঘটনাটি ঘটেছে কর্নাটকের দক্ষিণ কন্নড় জেলার সুব্রহ্মণ্য এলাকায়।
প্রবল বর্ষণে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে কর্নাটকের উত্তর কন্নড় এবং দক্ষিণ কন্নড় জেলায়।