ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’-এর কারণে উপকূলে জলোচ্ছ্বাস। ছবি: পিটিআই।
গুজরাত এবং পাকিস্তানের মধ্যবর্তী উপকূলের উপর দিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নাগাদ ১৫০ কিমি বেগে বইবে ঝড়। ওই সময় ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’ স্থলভাগে প্রবেশ করবে এবং উত্তর দিকে অগ্রসর হবে বলে জানিয়েছে মৌসম ভবন। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গুজরাত-সহ দেশের পশ্চিম উপকূলে ইতিমধ্যে সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠেছে। শুরু হয়েছে ভারী বৃষ্টি। উপকূল এলাকাগুলিতে বহু ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বেশ কিছু এলাকায় লাল সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অফিস।
‘বিপর্যয়’-এর জেরে গুজরাতের উপকূল এলাকায় অনেক ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গুজরাতগামী অথবা গুজরাত থেকে রওনা দেওয়ার কথা ছিল এমন ৯৫টি ট্রেন বাতিল হয়েছে। বেশ কিছু ট্রেনের গতিপথ সংক্ষিপ্ত করেছে পশ্চিম রেল। এর ফলে যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। গুজরাতে ঝড়ের তাণ্ডবে ব্যাহত হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থাও। গত দু’দিনে উপকূল এলাকা থেকে ৩৭ হাজারের বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গুজরাতের উপকূলে মোতায়েন করা হয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ১৭টি দল এবং রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ১২টি দল। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন তাঁরা।
মৌসম ভবন জানিয়েছে, ‘বিপর্যয়ের’ জেরে গুজরাতের কচ্ছ, দ্বারকা, পোরবন্দর, জামনগর, মোরবি, জুনাগড় এবং রাজকোটে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। ওই এলাকার কাঁচা বাড়িগুলি মূলত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে পাকা বাড়িতেও। ইতিমধ্যে এলাকায় অনেক বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গিয়েছে ঝোড়ো হাওয়ার দাপটে। ফলে বিদ্যুৎ পরিষেবা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে। উপড়ে গিয়েছে বহু গাছও।
সৌরাষ্ট্র, দ্বারকা এবং কচ্ছে লাল সতর্কতা জারি করেছে মৌসম ভবন। তারা জানিয়েছে, আরব সাগরে এই মুহূর্তে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রূপে অবস্থান করছে ‘বিপর্যয়’। মঙ্গলবার সকালে তার কিছুটা শক্তিক্ষয় হয়েছিল। তাই অতি প্রবল থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে এই ঝড়। ‘বিপর্যয়’ ক্রমে উত্তর এবং উত্তর-পূর্ব দিকে এগোবে এবং গুজরাতের মান্ডবী এবং পাকিস্তানের করাচির কাছে জখৌ বন্দরের উপর দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করবে। তখন হাওয়ার গতিবেগ থাকবে ১২৫-১৩৫ কিলোমিটার। তা ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্তও পৌঁছতে পারে।
এই ঘূর্ণিঝড়ের জেরে আটটি রাজ্যে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। গুজরাত ছাড়াও সতর্কতা জারি হয়েছে কেরল, তামিলনাড়ু, রাজস্থান, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, গোয়া, দমন ও দিউ, লক্ষদ্বীপ এবং দাদর ও নগরহাভেলিতে। মঙ্গলবার থেকেই মুম্বইয়ে ‘বিপর্যয়ের’ কারণে জলোচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছে। উত্তাল হয়ে উঠেছে সমুদ্র। মৎস্যজীবীদের আপাতত সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
১৯৬৫ সালের পর থেকে জুন মাসে এই নিয়ে গুজরাতে তৃতীয় বার ঘূর্ণিঝড়ের ভ্রুকুটি। ‘বিপর্যয়ের’ কারণে কচ্ছ, পোরবন্দর, দ্বারকা, গির সোমনাথের মতো এলাকায় দু’দিনের জন্য স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। বহু ত্রাণশিবির এবং কন্ট্রোলরুম খুলেছে সরকার। ‘বিপর্যয়’-এর মোকাবিলায় প্রশাসনের তরফে কী রকম প্রস্তুতি রয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে সোমবার বৈঠক করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পরে তিনি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র পটেলের সঙ্গেও ফোনে যোগাযোগ করেন। ‘বিপর্যয়’ মোকাবিলায় কেন্দ্রের তরফে প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ঘূর্ণিঝড়ের গতিবিধির দিকে সর্বক্ষণ নজর রাখা হয়েছে।