প্রতীকী ছবি।
দিনে আট ঘণ্টা পর্যন্ত কাজের নিয়ম স্বীকৃত সারা বিশ্বে। তাতে সিলমোহর আছে বিশ্ব শ্রম সংস্থারও। কিন্তু নতুন মজুরি বিধির খসড়া নিয়মে কেন্দ্র দিনে ন’ঘণ্টা কাজের কথা বলায় বিতর্ক মাথাচাড়া দিচ্ছে। ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে ন্যূনতম মজুরির অঙ্ক নিয়েও। খসড়া নিয়মে বিচ্যুতির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে সঙ্ঘ পরিবারের ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ (বিএমএস)-সহ ট্রেড ইউনিয়নগুলি।
যে মজুরি বিধির জন্য সংসদে বিল পাশ হয়েছে, এখন তার নিয়মকানুন তৈরি করছে কেন্দ্র। তারই খসড়া প্রস্তাব আপলোড করা হয়েছে শ্রম মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে। যাতে সে সম্পর্কে মতামত দিতে পারে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ। সেখানেই লেখা রয়েছে, ‘‘যত ঘণ্টা মিলে একটি কাজের দিন গণ্য হবে... তা হল ন’ঘণ্টা।’’
প্রশ্ন উঠছে, তার মানে কি চুপিসারে কর্মীদের কাজের সময় বাড়িয়ে দিচ্ছে কেন্দ্র? যাতে ঘণ্টা-পিছু মজুরির অঙ্ক কমে? যাতে ওভারটাইমের গুনতি শুরু হয় আরও পর থেকে? কর্মী সংগঠন সিটু-র সাধারণ সম্পাদক তপন সেনের মতে, প্রথমত এটি অনৈতিক। তার উপরে ন্যূনতম মজুরি বিধির নিয়মে এই বিষয়টি থাকারই কথা নয়। তা থাকা উচিত কর্মক্ষেত্রের সমস্যা ইত্যাদি সংক্রান্ত বিধিতে। কিন্তু সরকার তা মানছে কই? ন্যূনতম বেতন হিসেবের প্রসঙ্গেও তাঁর অভিযোগ, ইচ্ছে করে ধোঁয়াশা রাখা হচ্ছে এই ক্ষেত্রে। সরকার জানিয়েছে, ২,৭০০ ক্যালোরি, ১০% এইচআরএ ইত্যাদির হিসেব কষে ওই মজুরির অঙ্ক বার করা হবে। ২০১৮ সালেও এই কথাই ঠিক হয়েছিল। কিন্তু কোন বছরের জিনিসপত্রের দামের ভিত্তিতে ওই হিসেব কষা হবে, স্পষ্ট করা হয়নি সেই বিষয়টিই। মন্ত্রক নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ ছিল, ওই হিসেব হোক ২০১২ সালের দামের ভিত্তিতে। কিন্তু হঠাৎ এত পুরনো বছরের ভিত্তিতে কেন এই হিসেব হবে, তার যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা নেই বলে তাঁর দাবি।
আরও পড়ুন: দেশে ফিরেই দূষণ নিয়ে বৈঠক মোদীর
বিএমএসের সাধারণ সম্পাদক ব্রিজেশ উপাধ্যায় বলেন, ‘‘খসড়া নিয়মে অনেক বিচ্যুতি রয়েছে, যার সংশোধন প্রয়োজন।’’ তাঁর মতে, কাজের সময় হওয়া উচিত দিনে ছ’ঘণ্টা। কিন্তু খসড়ায় বিষয়টি স্পষ্ট নয়। ন্যূনতম মজুরি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এআইটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক অমরজিৎ কৌর প্রায় একই উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘বেশ কিছু খামতি শোধরানো দরকার।’’ খসড়া নিয়মে মজুরির সংজ্ঞা নির্ধারণ নিয়ে সমস্যা রয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, দৈনিক কাজের সময় নিয়ে সম্প্রতি একটি পরীক্ষা হয়েছিল জাপানে। সপ্তাহে পাঁচ দিনের বদলে চার দিন অফিস খোলা রেখেছিল মাইক্রোসফট। দেখা যায়, উৎপাদনশীলতা বেড়ে গিয়েছে ৪০%!