মণিপুর হিংসার একটি ছবি। —ফাইল চিত্র।
মণিপুরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র জনতার গুলির লড়াইয়ে মৃত্যু হল তিন জনের। শুক্রবার রাতেই জানা গিয়েছিল, এই ঘটনায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর জখম অবস্থায় এক জনকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। শনিবার সকালে তাঁর মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। অন্য দিকে এই ঘটনায় গুরুতর জখম হয়ে চিকিৎসাধীন ৫০ জনেরও বেশি। আহতদের মধ্যে সেনার এক মেজর জেনারেলও রয়েছেন।
শুক্রবার সকালে সে রাজ্যের টেংনউপল জেলার পাল্লেল গ্রামে নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে শুরু করে এক দল উন্মত্ত জনতা। পাল্টা গুলি চালায় নিরাপত্তা বাহিনীও। সকাল ৬টা থেকে কিছু সময় অন্তর অন্তর এই গুলির লড়াই চলে। দুপুরের দিকে ওই এলাকায় আরও সেনা মোতায়েন করা হয়।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে প্রায় হাজার মানুষ অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। জানা যায়, তারা মেইতেই গোষ্ঠীর। মিছিল করে একটি জনজাতি অধ্যুষিত গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন তাঁরা। সেই সময় তাঁদের আটকায় নিরাপত্তা বাহিনী। অভিযোগ, বাধা পেয়েই গুলি চালাতে শুরু করে ওই জনতা। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশ জানিয়েছেন, তাদের প্রত্যেকের গায়ে সেনার জংলি পোশাক ছিল। আবার কুকিদের অভিযোগ, উন্মত্ত জনতা গুলি চালিয়ে এগোনোর চেষ্টা করলেও নিরাপত্তা বাহিনীর একাংশ তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা না করে সহায়তা করেছে।
উন্মত্ত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে নিরাপত্তা বাহিনী। আহত হন ৪৫ জন মহিলা। গত বুধবারেই সে রাজ্যের বিষ্ণুপুর জেলায় কার্ফু অমান্য করে, পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করে মেইতেইদের নাগরিক অধিকার সংগঠন কোকোমির সদস্যেরা। মিছিল আটকাতে এবং জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে রবার বুলেট ছোড়েন নিরাপত্তা আধিকারিকেরা। এই ঘটনায় বেশ কয়েক জন জখম হয়েছেন বলে জানা যায়।
প্রসঙ্গত, গত ৩ মে জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর কর্মসূচি ঘিরে মণিপুরে অশান্তির সূত্রপাত। মণিপুর হাই কোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এর পরেই জনজাতি সংগঠনগুলি তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই সংঘাতের সূচনা হয় সেখানে। মণিপুরের আদি বাসিন্দা হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেইতেই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কুকি, জ়ো-সহ কয়েকটি তফসিলি জনজাতি সম্প্রদায়ের (যাদের অধিকাংশই খ্রিস্টান) সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত প্রায় দু’শো জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘরছাড়ার সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার।