সাংবাদিক বৈঠকে ডেরেক ও’ব্রায়েন। ছবি: পিটিআই।
শীতকালীন অধিবেশনের শুরুতেই সাসপেন্ড করা হয়েছে তৃণমূলের দুই সাংসদ দোলা সেন এবং শান্তা ছেত্রীকে। কিন্তু তৃণমূলের দাবি, সাংসদেরা কোনও ভুল করেননি। বরং তাঁদের সাসপেনশন সিদ্ধান্তটিই ভুল। শাস্তি যদি কাউকে দিতে হয়, তবে তা বিজেপি-র ৯৫ জন সাংসদকে দেওয়া উচিত। মঙ্গলবার তৃণমূলের মুখপাত্র এবং রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের বক্তব্য, ওঁরা সংসদের বিধিভঙ্গ করেছিলেন বলেই বাদল অধিবেশন বানচাল হয়ে যায়। তৃণমূল জানিয়েছে, ওই বিজেপি সাংসদরাই বিরোধীদের প্রতিবাদ জানাতে বাধ্য করেছিলেন। যদিও সাসপেন্ড হওয়া সাংসদদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের প্রতি নজিরবিহীন ভাবে অশ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং দুর্ব্যবহার করেছেন। ইচ্ছাকৃত ভাবে সংসদের কাজে বাধাও দিয়েছেন।
বাদল অধিবেশনের শেষ দিনে সংসদে হইহট্টগোল করার জন্য শীতকালীন অধিবেশনে সাসপেন্ড করা হয়েছে তৃণমূলের দুই সাংসদকে। মঙ্গলবার তৃণমূল জানিয়েছে, সাসপেনশনের প্রতিবাদে বুধবার থেকে আগামী ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত দিনে আট ঘণ্টা করে ধরনায় বসবে তৃণমূল। একইসঙ্গে সংসদে বিজেপি-র ৯৫ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করার দাবিও তোলে তৃণমূল। ২৩ ডিসেম্বর শীতকালীন অধিবেশনের শেষ দিন। ডেরেক জানিয়েছেন, ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সোম থেকে শুক্রবার প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে ৬টা পর্যন্ত সংসদ চত্বরে গাঁধীমূর্তির পাদদেশে ধরনায় বসবেন তৃণমূলের দুই সাজাপ্রাপ্ত সাংসদ দোলা এবং শান্তা। ডেরেক জানিয়েছেন, বিরোধীদেরও আমন্ত্রণ জানানো হবে। তাঁরা যদি তৃণমূলের সাংসদদের প্রতি সমানুভূতি জানিয়ে ধরনায় উপস্থিত থাকতে চান, তবে তাঁরাও স্বাগত।
মঙ্গলবার সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে রাজ্যসভা থেকে ওয়াকআউট করেন তৃণমূলের সাংসদরা। কিন্তু পরে দোলা এবং শান্তাকে সঙ্গে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন ডেরেক। বৈঠকের মূল বক্তব্য ছিল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জমানায় আলোচনা বন্ধ হয়েছে সংসদে। বদলে একের পর এক বিল বিনা আলোচনাতেই পাশ হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে একটি পরিসংখ্যান দিয়ে ডেরেক বলেন, রাজ্যসভায় ১৫ মিনিটের আলোচনার পর ১৩টি বিল পাশ হয়েছে। লোকসভায় ১৫টি বিল পাশ হয়ে গিয়েছে মাত্র ৮ মিনিটের আলোচনায়। অথচ অধিবেশনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, সমস্ত বিষয়ে আলোচনার জন্য সরকার প্রস্তুত।
সাংবাদিক বৈঠকে ডেরেক বলেন, ‘‘আসলে মোদী আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ চান না অধিবেশন চলুক। গুজরাত মডেলেই সংসদ চালাচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু তৃণমূল চায় সংসদ চলুক।’’ তৃণমূলের বক্তব্য, সরকার সংসদে তাদের কাজের জবাব দিতে বাধ্য। অধিবেশন বয়কট করা হলে সেই জবাব তো চাওয়া যাবেই না, বরং বিনা আলোচনায় আরও বিল পাশ করানোর সুযোগ পেয়ে যাবে বিজেপি। তাই যা-ই হোক না কেন তারা অধিবেশন বয়কট করবে না।
মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে ডেরেককে প্রশ্ন করা হয়েছিল সর্বভারতীয় স্তরে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব তৈরি করা প্রসঙ্গে। তার জবাবে ডেরেক বলেছেন, ‘‘আমরা কারও বিরোধী নই। বরং তৃণমূল বিরোধী ঐক্যই চায়। এখন কে কোন সভায় হাজির থাকল, তা বিচার্য নয়। আমার বিশ্বাস, সমস্ত বিরোধী দলগুলিরই বক্তব্য এক। রণনীতি আলাদা হলেও তাদের উদ্দেশ্য এক। প্রত্যেকেই চায় বিজেপি-কে সরাতে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই বিরোধী দলগুলি কাজ করবে বলে বিশ্বাস তৃণমূলের।’’