আন্তর্জাতিক সংস্থার শীর্ষ পদে আবারও এক ভারত-সন্তান। সোমবার টুইটারের নতুন সিইও হলেন ভারতীয় যুবক পরাগ আগরওয়াল।
এর আগে দেশের মুখ আলো করেছেন পেপসিকোর ইন্দ্রা নুয়ি, মাইক্রোসফটে সত্য নাদেলা, গুগ্লের সুন্দর পিচাইরা। সোমবার, ২৯ নভেম্বরের পর থেকে পরাগের কথা ভেবে গর্ববোধ করছেন ভারতীয়রা।
কে পরাগ? কী ভাবেই বা তিনি বিশ্বমানের এক নেটমাধ্যম সংস্থা যা ওবামা থেকে ওমর আবদুল্লা পর্যন্ত সবাই ব্যবহার করেন, তার মাথায় বসলেন? প্রথিতযশা প্রতিষ্ঠাতাকে সরিয়ে কী করে হল তাঁর উত্তরণ? সে ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা অনেকেরই নেই।
আসলে পরাগ তাঁর সঙ্গে সমস্বরে উচ্চারিত হওয়া বাকি তিন খ্যাতনামী সত্য, সুন্দর বা ইন্দ্রার মতো পরিচিত নন। বিশ্বখ্যাত আন্তর্জাতিক সংস্থার হাল যখন এঁরা ধরেছিলেন, তখন এঁদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবহিত হয়ে গিয়েছেন অনেকেই। পরাগ সে দিক থেকে সামান্য পিছিয়ে। একটি জনপ্রিয় ইন্টারনেট তথ্যভান্ডারে পরাগের কথা কিছুটা বিস্তারিত ভাবে লেখা হয়েছে তাঁর সিইও হওয়ার ঘণ্টা কয়েক পরে। তবে সেখানে এখনও তাঁর জন্মদিনের তথ্যই নেই।
মুম্বইয়ের খারঘরে জন্ম। সম্ভবত ১৯৮১ সালে। সেই হিসেবে এখন ৪০ বছর বয়স পরাগের।
মুম্বইয়ের অ্যাটমিক এনার্জি সেন্ট্রাল স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। ছাত্র হিসেবে মেধাবী ছিলেন। স্কুল শেষ করে আইআইটিতে পড়ার সুযোগ পান পরাগ।
উল্লেখ্য, গুগ্লের ভারতীয় সিইও সুন্দরও আইআইটির ছাত্র ছিলেন। তিনি পড়াশোনা করেছেন আইআইটি খড়্গপুরে। পরাগ আইআইটি বম্বের ছাত্র। বি টেক করেছেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে।
বি টেক সম্পূর্ণ করার পর ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে যান পরাগ। সেখানে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে পিএইচডি করেন। এখানেও সুন্দরের সঙ্গে মিল তাঁর। সুন্দরও আইআইটি-র পর স্ট্যানফোর্ড থেকেই স্নাতকোত্তর পড়েছিলেন।
তবে উত্তরণের দিক থেকে পরাগ এগিয়ে। সুন্দর বা সত্য শীর্ষপদে বসার আগে বহু সংস্থা ঘুরেছেন। পরাগের ক্ষেত্রে টুইটারই তাঁর প্রথম পাকাপোক্ত চাকরি। তার আগে গবেষণা করতে করতে তিনি শিক্ষানবীশ হিসেবে কাজ করেছেন মাইক্রোসফট, ইয়াহু এবং এটি অ্যান্ড টি ল্যাবে।
২০১১ সালের অক্টোবরে স্ট্যানফোর্ডে পিএইচডি সম্পূর্ণ করার পরই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে টুইটারে যোগ দেন পরাগ। সেখান থেকে ঠিক সাড়ে ছ’বছরের মাথায় ২০১৮ সালের মার্চে তাঁকে চিফ টেকনোলজিকাল অফিসার বা সিটিও হিসেবে নিয়োগ করা হয়। যদিও অঘোষিত ভাবে ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকেই ওই পদ সামলাচ্ছিলেন তিনি।
সিটিও হিসেবে টুইটারে পরাগের কাজ প্রশংসা পায় কর্তৃপক্ষের। যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসির নজরে পড়েন তিনি। এমনকি নিজের ইস্তফা পত্রেও জ্যাক এই ভারত-সন্তানের কাজের, দায়িত্ববোধের এমনকি সৃষ্টিশীলতার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
জ্যাক জানিয়েছেন, টুইটার ছেড়ে যাওয়ার দুঃখ থাকলেও তিনি এটা ভেবে খুশি যে পরাগ টুইটারের দায়িত্ব নিচ্ছেন। জ্যাক স্পষ্টতই লিখেছেন, ‘বিগত বেশ কিছু দিন ধরেই পরাগ আমার অন্যতম পছন্দের সহকর্মী। সাম্প্রতিককালে পরাগ এমন বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা সংস্থাকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে। উনি এই সংস্থাটিকে বোঝেন। এই সংস্থার প্রয়োজনগুলোও বোঝেন। ওঁর বড়গুণ, উনি কৌতূহলী, যুক্তিবিদ, সৃষ্টিশীল, আত্মসচেতন এবং একইসঙ্গে বিনয়ী। নতুন সিইও-র উপর আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে।’
পরাগও প্রত্যুত্তরে জ্যাককে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। টুইটারে লিখেছেন, ‘জ্যাক, তোমার বন্ধুত্ব পেয়ে আমি ধন্য। একজন গুরু হিসেবে যে দায়িত্ব তুমি পালন করে চলেছ, তার জন্য কৃতজ্ঞতার শেষ নেই আমার।’
পরাগ বিবাহিত। তাঁর স্ত্রীর নাম বিনীতা আগরওয়াল। ২০১৬ সালে জয়পুরে বিয়ে করেন দু’জনে। বিনীতাও একটি আমেরিকান সংস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত।
দু’জনের এক পুত্র সন্তানও আছে। নাম অংশ আগরওয়াল। টুইটারে সেই নামের ব্যখ্যা করে পরাগ লিখেছিলেন, আশা করি বড় কিছুর অংশ হবে ও।
ইন্টারনেট সূত্রে পাওয়া তথ্য বলছে, টুইটারের নতুন সিইও-র সম্পদের পরিমাণ সাড়ে ১৫ লক্ষ ডলার। তবে পরাগের নেটমাধ্যমের ছবি, বিবরণ বলছে নেহাৎই সাধারণ জীবন কাটান নতুন টুইটার প্রধান।
তবে তাঁর জীবনে বিতর্কও আছে। টুইটারের সিইও হওয়ার পর পরাগের একটি পুরনো টুইট ভেসে উঠেছে। তাতে লেখা, ‘ওঁরা যদি মুসলিম এবং উগ্রপন্থীদের মধ্যে ফারাক করতে না পারে, তবে আমিই বা শ্বেতাঙ্গ আর বর্ণবিদ্বেষীদের মধ্যে তফাৎ করব কেন!’
টুইটটি ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে করেছিলেন পরাগ। তখন অবশ্য তিনি স্ট্যানফোর্ডের ছাত্র। টুইটারে যোগ দেননি। তবু সেই টুইটকে সামনে এনেই শুরু হয়েছে পরাগের সমালোচনা। অনেকে বলছেন, এমন মনোভাব নিয়ে ভারতীয় পরাগ বিভিন্ন দেশের মানুষকে নিয়ে তৈরি একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার নেতৃত্ব দেবেন কী করে! এমনকি ওই টুইটের প্রসঙ্গ টেনে পরাগের ইস্তফাও চেয়েছেন কেউ কেউ।
শেষ পর্যন্ত সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলা আর নেতৃত্ব দেওয়ার প্রশ্নে পরাগ কতদূর সফল হবেন, তা অবশ্য সময়ই বলবে।