Amit Shah

Abhishek Banerjee: ‘কয়লা বা গরু কেলেঙ্কারি আসলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কেলেঙ্কারি’, শাহকে কটাক্ষ অভিষেকের

শাহের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে অভিষেকের যুক্তি, কোলিয়ারিতে কয়লা চুরি রোখার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআইএসএফের। ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু পাচার রোখার দায়িত্বে থাকে বিএসএফ। দুই-ই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২২ ০৫:০৬
Share:

সরাসরি অমিত শাহকেই নিশানা করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

দিল্লির এ পি জে আব্দুল কালাম রোডে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) নতুন সদর দফতর ‘প্রবর্তন ভবন’। আর কৃষ্ণ মেনন মার্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সরকারি বাসভবন। দু’য়ের মধ্যে দূরত্ব মেরেকেটে দু’কিলোমিটার। সোমবার বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা— টানা সাড়ে আট ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পরে ইডি-র দফতর থেকে বেরিয়ে সরাসরি অমিত শাহকেই নিশানা করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগ, ‘কয়লা কেলেঙ্কারি’ বা ‘গরু কেলেঙ্কারি’ আসলে ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কেলেঙ্কারি’ (হোম মিনিস্টার্স স্ক্যাম)।

Advertisement

শাহের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে অভিষেকের যুক্তি, কোলিয়ারিতে কয়লা চুরি রোখার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআইএসএফের। ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু পাচার রোখার দায়িত্বে থাকে বিএসএফ। দুই-ই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে।

তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় বাহিনীর দায় রাজ্য সরকার, বিরোধী দলের নেতাদের উপরে চাপানো হচ্ছে। ভয় দেখিয়ে, জোর করে বিরোধী দলের নেতাদের একঘরে করে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের অবশ্য দাবি, ‘‘রাজ্যের সহযোগিতা ছাড়া একা কেন্দ্রীয় বাহিনীর পক্ষে গরু পাচার, কয়লা চুরি রোখা সম্ভব নয়।’’

Advertisement

অভিষেক মনে করিয়েছেন, তাঁকে ভবানীপুর উপনির্বাচনের সময়ে ডাকা হয়েছিল। এ বারও রাজ্যে উপনির্বাচনের সময়ে ডাকা হয়েছে। তাঁর মন্তব্য, ‘‘লাভ হবে না। আমি অন্য মেটিরিয়াল। সবাই মেরুদণ্ডহীন নয়। বিজেপি একুশে বাংলায় গোহারা হেরে প্রতিশোধ নিতে চাইছে। চব্বিশেও হারবে।’’ আগের বার দিল্লিতে জিজ্ঞাসাবাদের শেষে বেরিয়ে কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ করেছিলেন অভিষেক। এ বার তা করেননি।

এ দিন অভিষেককে ডেকে পাঠানোর পরে মঙ্গলবার তাঁর স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও ইডি-র সদর দফতরে ডেকে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু অভিষেক আজ জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রুজিরা দিল্লিতে ইডি-র দফতরে হাজিরা দিতে পারবেন না। কারণ, তাঁদের আড়াই বছরের ছোট ছেলেকে ছেড়ে আসা সম্ভব নয়। বিশেষত যেখানে বাড়িতে এই মুহূর্তে কোনও পরিচারিকা নেই। রুজিরাও মঙ্গলবার সকালে ই-মেলে আসতে না পারার কথা জানিয়ে দেবেন।

আজ ইডি-র মুখোমুখি হলেও, কিন্তু অভিষেক ও রুজিরা সুপ্রিম কোর্টে মামলাও দায়ের করেছেন দিল্লি হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে। দিল্লিতে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদের বিরোধিতা করে অভিষেক-রুজিরা দিল্লি হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন। দশ দিন আগে হাই কোর্ট তাঁদের আর্জি খারিজ করে দেওয়ার পরে ইডি নতুন করে তাঁদের সমন পাঠায়। সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা মামলায় অভিষেকদের বক্তব্য, তাঁরা কলকাতায় ইডি-র দফতরে যেতে রাজি। কিন্তু তাঁদের যেন বারবার দিল্লিতে ডেকে পাঠানো না হয়। কয়লা পাচার কেলেঙ্কারির অভিযোগ পশ্চিমবঙ্গে। তদন্তও সেখানে চলছে। ইডি এ ভাবে দেশের যে কোনও জায়গা থেকে কাউকে দিল্লিতে ডেকে পাঠাতে পারে কি না, তা নিয়েও সুপ্রিম কোর্টের সামনে প্রশ্ন তুলেছেন অভিষেকরা। আজ এই মামলার শুনানি হয়নি। কারণ, প্রধান বিচারপতির সামনে কোনও মামলারই উল্লেখ করার অনুমতি ছিল না।

অভিষেকের অভিযোগ, কলকাতায় তাঁদের বাড়ি থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ইডি-র দফতর থাকলেও, তাঁকে ১৫০০ কিলোমিটার দূরে দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হচ্ছে শুধুমাত্র হেনস্থা করার জন্য। তবে তিনি এবং রুজিরা কলকাতায় ইডি-র দফতরে তদন্তকারীদের মুখোমুখি হতে তৈরি। অভিষেকের বক্তব্য, তিনি তদন্তকারী অফিসারদের যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর, নথি দিয়েছেন। ব্যাঙ্ক, আয়কর রিটার্ন-সহ আরও কিছু নথি চাওয়া হয়েছে। যা পরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

সিবিআই, ইডি-র অভিযোগ ছিল, কয়লা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা বিনয় মিশ্রের সঙ্গে অভিষেকের যোগাযোগ ছিল। কয়লা কেলেঙ্কারির টাকা প্রভাবশালীদের কাছে পৌঁছে যেত। ইডি সূত্রের খবর, আজও অভিষেককে তাঁদের বিদেশের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, বিনয়ের সঙ্গে যোগাযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে।

অভিষেক জিজ্ঞাসাবাদের পরে বেরিয়ে জানান, তাঁর সঙ্গে তদন্তকারী অফিসারদের কী কথা হয়েছে, তা নিয়ে তিনি মুখ খুলবেন না। তবে তাঁর লুকোনোর কিছু নেই। তাঁর চোখের অস্ত্রোপচার হয়েছে। আর একটি অস্ত্রোপচার হবে। ডাক্তারদের বিশ্রামের পরামর্শ উপেক্ষা করেও তিনি তদন্তকারীদের সামনে এসেছেন। দোষী প্রমাণিত হলে, তিনি ফাঁসিতে যেতেও রাজি। কিন্তু বাস্তব হল, বিরোধীদের ভয় দেখিয়ে, দাবিয়ে রাখতেই রাজনৈতিক স্বার্থে সিবিআই, ইডি-কে কাজে লাগানো হচ্ছে। শমীকের পাল্টা বক্তব্য, “কেন্দ্র মোটেই সিবিআই এবং ইডি-কে বিরোধীদের দমনের জন্য অন্যায় ভাবে ব্যবহার করছে না। কারও এমন মনে হলে, তিনি আদালতে যেতে পারেন।”

অভিষেক ফের রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও অন্যান্য বিজেপি নেতাদের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে বলেছেন, যাঁদের বিরুদ্ধে সারদা, নারদ, রোজ ভ্যালি কাণ্ডে জনসমক্ষে প্রমাণ রয়েছে, তাঁদের গ্রেফতার তো দূরের কথা, সিবিআই-ইডি ডেকেও পাঠাচ্ছে না। যাঁদের কাগজে মুড়ে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে, যাঁদের শ্রীঘরে থাকার কথা, তাঁদের করদাতাদের অর্থে জ়েড ক্যাটেগরির সিআরপিএফের নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। অভিষেক বলেন, ‘‘আমি তৃণমূল করি বলে চোর, বাকিরা সাধু! বিজেপিতে গেলে, ওয়াশিং মেশিনের মতো সব দোষ মুছে যাবে। এই দ্বিচারিতা, ধাপ্পাবাজি বেশি দিন চলতে পারে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement