মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (বাঁ দিকে) এবং রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস (ডান দিকে)। ফাইল চিত্র।
বিরোধী বৈঠক ছিল কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে হটাতে জোট গঠনের লক্ষ্যে। কিন্তু সেই মঞ্চ থেকে বাংলার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে লক্ষ্য করে রাজনৈতিক আক্রমণ করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরোধী বৈঠকের পরে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে তুলে আনলেন ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন আর ‘মর্জিমাফিক উপাচার্য নিয়োগ’ প্রসঙ্গ।
তবে মমতার ওই উষ্মাকে অস্বাভাবিক বলে তৃণমূলের নেতারা মনে করছেন না। তাঁদের মতে, রাজ্যপাল কেন্দ্রীয় সরকারেরই প্রতিনিধি বা প্রতিভূ। ফলে তাঁর কার্যকলাপ কেন্দ্রীয় সরকারের ‘মদতপুষ্ট’ এটা বলাই যেতে পারে। ফলে তাঁকে আক্রমণ আর কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ একই কথা।
শুক্রবার পটনায় বিরোধী জোট গঠনের লক্ষ্যে বৈঠকের পরে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা সরাসরি অভিযোগ করেন, বাংলায় রাজভবন থেকে ‘সমান্তরাল সরকার’ চালানো হচ্ছে। কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপির অঙ্গুলিহেলনেই রাজ্যপাল চলছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতার অনুরোধ উপেক্ষা করে গত মঙ্গলবার রাজভবনে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন করে বোস। সেই প্রসঙ্গ তুলে মমতা বলেন, ‘‘আমরা পশ্চিমবঙ্গে থেকেও কোনও ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’-এর কথা শুনিনি! উনি তা পালন করে ফেললেন!’’ নাম না করে রাজ্যপাল বোসের বিরুদ্ধে ‘মর্জিমাফিক’ উপাচার্য নিয়োগেরও অভিযোগ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। নাম না করে রাজ্যপাল বোসের বিরুদ্ধে ‘মর্জিমাফিক’ উপাচার্য নিয়োগেরও অভিযোগ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী।
ইডি-সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে কাজে লাগিয়ে বিজেপি তাঁকে বিপাকে ফেলতে চাইছে বলেও অভিযোগ করেন মমতা। সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘এখন ওরা (বিজেপি) অনেক আইনজীবীকে দিয়ে মামলা করে। আমাদের বিরুদ্ধে সিবিআই নয়তো ইডি তদন্ত শুরু হয়। পঞ্চায়েত ভোট নিয়েও সিবিআই তদন্তের নির্দেশ হয়!’’ প্রসঙ্গত, হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থীর নথি বিকৃতিকাণ্ডে বৃহস্পতিবার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ (শুক্রবার অবশ্য ডিভিশন বেঞ্চ তা স্থগিত করেছে)। সেই প্রসঙ্গেই এই মন্তব্য করেন মমতা।
১০০ দিনের কাজের প্রকল্প-সহ বিভিন্ন খাতে পশ্চিমবঙ্গের প্রাপ্য টাকা নরেন্দ্র মোদী সরকার আটকে রেখেছে বলেও অভিযোগ করেন মমতা। বিজেপি সরকারের আমলে দেশের আর্থিক সঙ্কট, মহিলা এবং দলিতদের উপর অত্যাচার, ইতিহাসবিকৃতি নিয়ে সতর্কবাণী শুনিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘পরের বার (২০২৪-এর লোকসভা ভোটে) বিজেপি ক্ষমতায় ফিরে এলে দেশে আর ভোটই হবে না।’’
আগামী বছরের লোকসভা ভোটে বিজেপিকে হারানো জন্য ‘ঐক্য’ যে বিরোধী শিবিরের বড় অস্ত্র, তা স্পষ্ট হয়েছে মমতার বক্তব্যে। শুক্রের বৈঠকের ‘নির্যাস’ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে চার সূত্রের কথা বলেছেন তিনি। তার প্রথমটি হল, ‘আমরা ঐক্যবদ্ধ’। দ্বিতীয়টি, ‘আমরা একজোট হয়ে লড়ব’। বস্তুত, সেই ‘ঐক্য’ জোরদার করার বার্তাও দিয়েছেন মমতা। কেন তিনি পটনায় বৈঠক ডাকতে বলেছিলেন, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘‘আমরা আগে দিল্লিতে কয়েক বার বৈঠক করেছি। কিন্তু তা সফল হয়নি। তাই আমি পটনায় বৈঠক ডাকতে বলেছিলাম। কেন বলেছিলাম, সেই ব্যাখ্যায় এখন যাচ্ছি না।’’
মমতা ওই ব্যাখ্যা না-দেওয়াকে কংগ্রেসের প্রতি ‘বার্তা’ বলেই ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। কারণ, মমতা জানিয়েছিলেন, তিনি বিরোধী বৈঠকের জন্য পটনার কথা বলেছিলেন একটি ‘ঐতিহাসিক’ কারণে। জয়প্রকাশ নারায়ণ বিহার থেকেই ইন্দিরা গান্ধী বিরোধী আন্দোলন শুরু করেছিলেন। যা শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছিল। কিন্তু যৌথ সাংবাদিক সেই ব্যাখ্যা দিলে অদূরে বসা রাহুল গান্ধীকে ‘বিড়ম্বনা’য় ফেলা হত। সেটা মমতা চাননি। তিনি ‘সংযম’ দেখিয়েছেন। অন্তত তৃণমূলের একাধিক সূত্রের তেমনই বক্তব্য। আসলে মমতার ‘সুপারিশ’ মেনেই দিল্লির বদলে বিহারে বৈঠকের আয়োজন করেন নীতীশ। ২৪ এপ্রিল আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদের পুত্র তথা বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বীকে সঙ্গে নিয়ে নবান্নে গিয়ে মমতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন নীতীশ। তখনই জয়প্রকাশ সত্তরের দশকের আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে তৃণমূল নেত্রী বলেছিলেন, “নীতীশজিকে অনুরোধ করছি, আপনি পটনায় একটা বিরোধী বৈঠক ডাকুন।” ১৯৭৭ সালের লোকসভা ভোটের আগে জয়প্রকাশের উদ্যোগে বিহার থেকেই কংগ্রেস বিরোধী জোট গড়ে তোলার উদ্যোগের সূচনা হয়েছিল। তবে শুক্রবার মমতা বিহার থেকে ‘ইতিহাস সৃষ্টিকারী আন্দোলনের ইতিহাসের’ কথা জানালেও জয়প্রকাশের নামোচ্চারণ করেননি।