গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
উচ্চশিক্ষার জন্য যেখানে অনেকেই ২-৩ লক্ষ টাকা খরচ করেন, কিন্তু মধ্যপ্রদেশের তিন গ্রামে ডাকাতিতে ‘স্নাতক’ হওয়ার জন্য লাখ লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না সেখানকার বাসিন্দারা। যেখানে প্রথাগত শিক্ষা নয়, তার বদলে দেওয়া হয় অপরাধের নানা রকম শিক্ষা। বিভিন্ন রকম অপরাধের ‘কোর্স’ও করানো হয় রীতিমতো।
ভোপাল থেকে ১১৭ কিলোমিটার দূরে রয়েছে রায়গড় জেলায় রয়েছে অপরাধের সেই আঁতুড়ঘর। কাডিয়া, গুলখেড়ি এবং হুলখেড়ি— এই তিনটি গ্রামই ওই রাজ্যের অপরাধীদের ‘জন্মস্থান’ বলে মনে করা হয়। পুলিশ এবং রাজ্য প্রশাসনও এই তিন গ্রামের সম্পর্কে জানে। কিন্তু অপরাধীদের এই গ্রামে ঢোকাই তাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। স্থানীয় সূত্রে খবর, ছেলেমেয়েদের বয়স ১২-১৩ হলেই শিক্ষার জন্য অভিভাবকেরা অপরাধের ‘গুরু’দের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের ‘স্কুলে’ সন্তানদের ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করেন। তবে এ ক্ষেত্রেও কোন ‘গুরু’ কোন অপরাধে দক্ষ, তা যাচাই করে তার পর সেই ‘স্কুলে’ই পাঠান অভিভাবকেরা।
অপরাধের এই ‘স্কুলগুলিতে’ ভর্তি হতে গেলে আবার মোটা অঙ্কের টাকাও খরচ করতে হয়। ঠিক যেমন প্রথাগত শিক্ষার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধাপ রয়েছে, অপরাধের এই ‘স্কুলগুলি’তেও নানা রকম কোর্স করানো হয়। অপরাধে সন্তানদের ‘উচ্চশিক্ষা’ দিতে চাইলে তার জন্য অভিভাবকদের খরচ করতে হয় ২-৩ লক্ষ টাকা। অপরাধের প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু হয় ‘স্কুল’। ছোট ছোট অপরাধে হাতপাকানো, তার পর সেই পরীক্ষায় পাশ করলে পরের ধাপে উত্তীর্ণ হতে পারে ‘পড়ুয়ারা’!
পকেটমারি, জনবহুল এবং ভিড় জায়গায় ব্যাগ ছিনতাই, পুলিশের হাত থেকে পালানো, পুলিশের মার সহ্য করেও মুখ না খোলা— ইত্যাদি নানা রকম ‘কোর্স’ করানো হয় এই সব ‘স্কুলে’। এক বছরের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বিভিন্ন অপরাধে। প্রশিক্ষণ শেষে পাকাপোক্ত অপরাধী হিসাবে নিজেকে ‘গুরু’র কাছে প্রমাণ করতে পারলে সেই অপরাধীর পরিবারকে ‘দক্ষিণা’ হিসাবে ৩-৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হয় ‘স্কুলের’ তরফে।
রাজ্য পুলিশের অতিরিক্ত ডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জয়দীপ প্রসাদ জানিয়েছেন, এই তিন গ্রামের দুষ্কৃতীরা এতটাই দক্ষ যে, গয়নার দোকানে ঢুকেই তারা বুঝে যায় কোন গয়নার দাম কত! দুষ্কৃতীদের বেশির ভাগই নাবালক এবং নাবালিকা। শুধু তা-ই নয়, এই গ্রামগুলি থেকে অপরাধীদের ভাড়া করেও নিয়ে যাওয়া হয়। সেই সময় অপরাধীর নিলাম হয়। নিলামে এক এক সময় এক এক জন অপরাধীর দাম ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ওঠে।