ছোট্ট এক আদিবাসী গ্রাম। দূরবীন নিয়ে খুঁজে বার করতে হয় সাক্ষরদের। এমন একটা পরিবেশে থেকে দারিদ্রতা জয় করে অদম্য মনোবলের জোরে কলেজের প্রফেসর হলেন ইনি।
ওই আদিবাসী গ্রামের প্রথম এবং এখনও পর্যন্ত একমাত্র পিএইচডি ডিগ্রিধারী তিনি। তাঁর নাম এন রঙ্গস্বামী।
কেরলের আট্টাপাদির এক আদিবাসী গ্রামের বাসিন্দা তিনি। বাবা-মা, ভাই-বোন মিলিয়ে বড় সংসার। কিন্তু পরিবারের রোজগেরে বলতে ওই বাবা-মাই।
তাও ঠিকা শ্রমিকের কাজ। অনটনের সংসারে সেই উপার্জনে ঠিক মতো খাওয়াই জুটত না। সব ভাইবোনকে স্কুলে পাঠানোর ভাবনা আর বাবা-মার মাথায় আসবে কী করে!
তবে রঙ্গস্বামী স্কুলে পড়তেন। পড়াশোনার প্রতি তাঁর তীব্র ইচ্ছা দেখেই তাঁকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন বাবা-মা।
কিন্তু সেটাই বা আর কত দিন! রঙ্গস্বামী যখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়েন, পরিবারের আর্থিক অবস্থা এতটাই ভেঙে পড়েছিল যে, পুরো পরিবার নিয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যেতে বাধ্য হন তাঁরা।
পড়াশোনাও ছাড়তে হয় রঙ্গস্বামীকে। মনে মনে খুব ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু মুখ ফুটে পরিবারের কাউকেই সে কথা বলেননি।
শেষে তাঁর মনের অবস্থা বুঝতে পেরে তাঁর দুই দাদা রামাচন্দ্র এবং রামনকুট্টি তাঁকে ফের স্কুলে ভর্তি করে দেন। তাঁরা দু’জনেই ভাইয়ের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়ে নেন।
সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন ফের আর এক অভিশাপ নেমে আসে তাঁর জীবনে। বাবা মারা যান। পরিবারের আর্থিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। এই অবস্থায় পড়াশোনা আর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন কি না বুঝতে পারছিলেন না।
কিন্তু সে সময় পরিবার ভীষণ ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছিল তাঁর। স্কুল পাশ করার পর পালাক্কড় ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে হিন্দি নিয়ে স্নাতক হন। যদিও ইচ্ছা ছিল ইংরাজি নিয়ে পড়াশোনা করার। কিন্তু আর হয়ে ওঠেনি।
কলেজে ছুটির পর বিকেল পাঁচটা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত একটি দোকানে কাজ করতে শুরু করেছিলেন। এই ভাবে কিছুটা পড়াশোনার খরচ তুলতেন। ৭০০ টাকা করে মাইনে পেতেন তিনি।
স্নাতক, তার পর স্নাতকোত্তর পাশ করার পর ইউজিসি-নেটও উত্তীর্ণ হয়ে যান তিনি। ২০১৫ সালে নবীনা নামে এক মহিলাকে বিয়ে করেন তিনি। এখন তিনি আট্টাপাদির রাজীব গাঁধী কলেজ অব আর্টস-এর প্রফেসর।