সুপ্রিম কোর্ট। ফাইল চিত্র।
তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বাতিল হওয়া ৬৬এ ধারায় কোনও নাগরিকের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা যাবে না। আজ এই কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।
অনলাইনে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য পোস্ট করাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করে তিন বছরের কারাদণ্ডের নিদান ছিল তথ্যপ্রযুক্তি আইন (২০০০)-এর ৬৬এ ধারাটিতে। আইনজীবী শ্রেয়া সিঙ্ঘলের দায়ের করা জনস্বার্থ মামলায় ২০১৫ সালে ওই ধারাটিকে বাক্স্বাধীনতার বিরোধী ও অসাংবিধানিক বলে খারিজ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট।
সেই রায় কার্যকর করতে চেয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ় (পিইউসিএল)-এর রিট আবেদনের এ দিন শুনানি হয় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ইউ ইউ ললিত, বিচারপতি এস রবীন্দ্র ভট্ট এবং বিচারপতি অজয় রস্তোগির বেঞ্চে। কেন্দ্রের আইনজীবী জ়োহেব হুসেনের বক্তব্য শুনে কোর্ট জানায়, ৬৬এ ধারায় এখনও অভিযোগ দায়ের করা হচ্ছে, যা শ্রেয়া সিঙ্ঘল মামলার রায়ের পরিপন্থী। তাই এ দিন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে—
১) এ কথা নতুন করে বলার দরকার পড়ে না যে, ৬৬এ ধারাটি সংবিধান লঙ্ঘন করছে। এই ধারায় কোনও নাগরিকের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা যাবে না।
২) যে সমস্ত মামলায় ৬৬এ ধারায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে, সেই অভিযোগ এবং মামলার ওই অংশ বাতিল হয়ে যাবে।
৩) পুলিশ যাতে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬এ ধারা আর প্রয়োগ না করে, সব রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের ডিজি এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
৪) তথ্যপ্রযুক্তি আইন সংক্রান্ত কোনও সরকারি, আধা-সরকারি বা বেসরকারি প্রকাশনায় ৬৬এ ধারার উল্লেখ থাকলে সেখানে পাঠকদের যথেষ্ট অবহিত করতে হবে যে, ওই ধারাটি বাতিল হয়ে গিয়েছে।
বাতিল হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও ৬৬এ ধারা ব্যবহৃত হচ্ছে দেখে অতীতেও অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল সর্বোচ্চ আদালত। গত বছরও পিইউসিএল সর্বোচ্চ আদালতকে জানিয়েছিল যে, বাতিল হওয়ার পরেও ৬৬এ ধারায় ১৩০৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ২০২১-এর মার্চ পর্যন্ত ১১টি রাজ্যের জেলা আদালতে এমন ৭৪৫টি মামলা ছিল, যেখানে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৬৬এ ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বিচারপতি আর এফ নরিম্যানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বলেছিল, তারা স্তম্ভিত। তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছিলেন, আইনের বইয়ে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬এ ধারা এখনও রয়ে গিয়েছে। তবে সেটির খারিজ হয়ে যাওয়ার কথাও তারকাচিহ্নিত করে পাদটীকায় লেখা রয়েছে। কিন্তু ওই পাদটীকা কেউ পড়ে না। এর প্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ আদালতের আজকের নির্দেশ তাৎপর্যপূর্ণ।