বসছে মোবাইল টাওয়ার। বিজয়নগরে। নিজস্ব চিত্র
দেশে যখন শুরু হচ্ছে ৫জি পরিষেবা, তখন সাবেক ২জি পরিষেবার সূচনা নিয়ে জোর হইচই! অবাক হতে বাধ্য বাকি দেশ। শহরের মানুষ লকডাউন বলতে বোঝেন ভিডিয়ো কনফারেন্স কল, ওয়েবিনার, হোম-ডেলিভারি। কিন্তু অরুণাচলপ্রদেশে চাংলাং জেলার বিজয়নগর ছয় দশক ধরে তো লকডাউনের সঙ্গেই ঘর করছে! সেখান থেকে সবচেয়ে কাছের টাউন মিয়াও, ১৫৭ কিলোমিটার দূরে। বাকি তিন দিক মায়ানমারের পাহাড়-জঙ্গল। মিয়াও যেতে হেঁটে পার করতে হয় আটটা পাহাড়।
ভোটকেন্দ্র কত দুর্গম হতে পারে— তার খবর পড়তে ভালবাসেন মানুষ। তাই প্রতি বার নির্বাচনের সময় বিজয়নগর একবার করে খবরে আসে। গত বার ভোটের পরে টানা বৃষ্টিতে ভোটকর্মীদের ফেরাতে পারেনি চপার। তাই ২৩ দিন পরে, পায়ে হেঁটে আটটা পাহাড় পার করে স্ট্রং-রুমে ইভিএম পৌঁছে দিয়েছিলেন পুলিশ ও ভোটকর্মীরা।
এহেন বিজয়নগরে ১ অগস্ট থেকে চালু হয়েছে বিএসএলএনের ২জি মোবাইল পরিষেবা। বায়ুসেনা সব সরঞ্জাম বহন করে নিয়ে গিয়েছে। সরঞ্জাম নেওয়ার অনুমতি পেতে ও আবহাওয়া অনুকূল হওয়ার অপেক্ষায় যোরহাটে বিএসএনএলের দলটিকে ১ মাস অপেক্ষা করতে হয়। অবশেষে দেশের মোবাইল মানচিত্রে ঠাঁই পেল বিজয়নগরের নাম।
১৬টি গ্রাম আর ৪৪০০ জনসংখ্যার বিজয়নগরের পত্তনের পিছনে পরোক্ষ কারণ চিন। ১৯৬০-এক দশকে সেনাবাহিনী খবর পায় অরুণাচলের পূর্ব সীমান্ত পার করে ঢোকার চেষ্টা করছে চিনা সেনা। সেই পাহাড় পাহারা দিতেই মেজর জেনারেল এ এস গুরাইয়ার নেতৃত্বে আসাম রাইফেলস দুই দফায় বাহিনী পাঠায়। ৫০০০ ফুট উচ্চতায় গড়ে ওঠে এয়ারফিল্ড। গুরাইয়া নিজের ছেলে বিজয়ের নামে সেই অ্যাডভান্সড ল্যান্ডিং গ্রাউন্ড ও আশপাশের এলাকার নাম রাখেন বিজয়নগর। তৈরি হতে থাকে সেনা বসতি। অনেক দিন বন্ধ থাকার পরে সেই বিমান ঘাঁটি ফের গত বছর চালু হয়েছে। সৌজন্যে আবারও চিনা আগ্রাসনের আশঙ্কা।
অবসর নেওয়া জওয়ান ও তাঁদের পরিবারগুলিকে নিয়ে বাড়তে থাকে বিজয়নগরের জনসংখ্যা। বিজয়নগরের পুরুষরা বংশানুক্রমে আসাম রাইফেলসের জওয়ান হিসেবে কাজ করে আসছেন।
আগে যখন কোনও বিমান আসত, তখনই একমাত্র নুন, চিনির স্বাদ পেতেন এখানকার মানুষ। এখনও সেখানে এক কেজি চিনি ও নুনের দাম দুই থেকে আড়াইশো টাকা। কারণ, হপ্তাখানেক পায়ে হেঁটে সে সব আনতে হয়। স্থানীয় এক রাইফেলম্যান জানালেন, তিনি দশম শ্রেণির পরীক্ষা দিতে প্রথম বার সাত দিন হেঁটে মিয়াও গিয়েছিলেন। তখনই প্রথম গাড়ি, বৈদ্যুতিক আলো, টিভি দেখেছিলেন।
আরও পড়ুন: পাক মানচিত্রে জুড়ল কাশ্মীর, গুজরাত
দশ বছর বিজয়নগরে কোনও চিকিৎসক ছিল না। ২০১৭ সালে সেখানে কাজে যোগ দেন এক নবীন ডাক্তার। গুমলাট মিয়াও। দেখেন হাসপাতাল নামেই আছে। সেখানে ওষুধ, বিদ্যুৎ কিচ্ছু নেই। যেমন বিজয়নগরে স্কুল থাকলেও নেই কোনও শিক্ষক।
বিএসএনএলের এসডিই কর্মা সেরিং বলছিলেন, “এমন একটা জায়গার মানুষের কাছে ২জি পরিষেবার মোবাইল হাতে আসা হল ঐতিহাসিক ঘটনা। আট দিনের পথের দূরত্ব মাত্র ১০টা বোতাম ঘুচিয়ে দিতে পারছে— এই রূপকথার মূল্য বোঝার সাধ্য নেই দেশের বাকি অংশের।”
আরও পড়ুন: ফ্যাভিপিরাভিয়ারের ট্যাবলেট ৩৫ টাকায়