সেই সোনালি হনুমান। ফাইল চিত্র
একাকিত্ব ছিলই। তার উপরে পর্যটক ও ভক্তদের ভালবাসার অত্যাচার। খাওয়ার কথা ঘাসপাতা। কিন্তু নিত্যদিন খেত মানুষের দেওয়া কেক-বিস্কুট-ভাজাভুজি। হজম হয়নি সে সব। গত কাল মারা গিয়েছে উমানন্দ দ্বীপের একমাত্র সোনালি হনুমানটি। শিবরাত্রির সময়ে এই ঘটনায় মনমরা দ্বীপের পুজারি থেকে ভক্ত, দোকানি থেকে নৌকাচালক সকলেই।
গুয়াহাটিতে, ব্রহ্মপুত্রের মধ্যে থাকা পাহাড়ি দ্বীপ উমানন্দ। সেখানে আছে শিবের মন্দির। কথিত আছে, কামাখ্যায় দেবীর পুজোর পরে উমানন্দে ভৈরবকেও পুজো করতে হয়। বহু বছর আগে এক নেপালি দম্পতি মন্দিরে এক জোড়া সোনালি হনুমান দান করেছিলেন। সেই থেকেই বংশবিস্তার করে তারা। অতি বিপন্ন প্রজাতির সোনালি হনুমানের অন্যতম প্রধান আবাস হয়ে উঠেছিল উমানন্দ। কিন্তু চার দিকে জল থাকা দ্বীপের সীমিত পরিসরে আবদ্ধ থাকা সোনালি হনুমানদের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। কমতে থাকে তাদের সংখ্যা। ২০১১ সালে দ্বীপ থেকে তিনটি হনুমানকে ধরে চিড়িয়াখানায় আনা হয়। কিন্তু দ্বীপে থাকা একটি সোনালি হনুমান কিছুতেই ধরা দেয়নি। দ্বীপের পুজারি ও অন্যরাও হনুমান ধরা নিয়ে আপত্তি জানান। ফলে সে থেকে যায় উমানন্দে।
ভক্ত ও পর্যটকদের কাছে সোনালি হনুমানটি ছিল উমানন্দের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। কিন্তু সেই ভালবাসাই কাল হল। পশু বিশেষজ্ঞদের মতে, অতি বিপন্ন প্রজাতির সোনালি হনুমানেরা সাধারণত পাতা খায়। কিন্তু ভক্তেরা প্রতিদিন তাকে কেক-বিস্কুট ও বিভিন্ন ধরনের খাবার দিতেন। সে সব খেয়ে হনুমানটির পরিপাক ক্রিয়ায় জটিলতা দেখা দেয়। সেই সঙ্গে বদ্ধ দ্বীপে সঙ্গীহীন থাকার ফলে ক্রমে হতাশা ও একাকিত্ব গ্রাস করে তাকে। সব মিলিয়েই অসুস্থ হয়ে পড়া সোনালি হনুমানটি গত কাল মারা যায়।
আরও পড়ুন: ট্রাম্প-বিরোধী বিক্ষোভ আজ দিল্লি, কলকাতায়
চিড়িয়াখানার ডিএফও তেজস মারিস্বামী জানান, হনুমানের দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য হস্তান্তর করেননি মন্দির কর্তৃপক্ষ। এ দিকে চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসা তিনটি সোনালি হনুমানের মধ্যে দু’টি মারা গিয়েছে। তৃতীয়টির টিউমার হয়েছিল। সফল অস্ত্রোপচারের পরে সুস্থ আছে। এ ছাড়া, কোকরাঝাড় থেকে উদ্ধার করা পুরুষ ও স্ত্রী সোনালি হনুমানের শাবক জন্মেছে চিড়িয়াখানায়। সে-ও ভাল আছে। বর্তমানে চিড়িয়াখানায় আছে তিনটি পুরুষ ও তিনটি স্ত্রী সোনালি হনুমান। আরও একটি শাবক আগামী মাসে জন্মাতে চলেছে।