যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে আটকে পড়া প্রায় তেইশ হাজার ভারতীয়কে নিরাপদে বার করে আনার অভিযান, ‘অপারেশন গঙ্গা’ কার্যত শেষের মুখে। সূত্রের খবর, কিছু সংখ্যক নাগরিক এখনও আটকে রয়েছেন। তাঁদের জন্য এই মিশনের শেষ বিমান যাবে বৃহস্পতিবার।
বিদেশ মন্ত্রকের দাবি কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরের দৌত্য এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে ক্রমশ চাপ বাড়ানোর কৌশল নেওয়ায় প্রায় সব ভারতীয়কেই ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। মন্ত্রকের বক্তব্য, সবচেয়ে কঠিন ছিল মঙ্গলবার সুমি থেকে দশটি বাসে করে ৬৯৪ জন ভারতীয়কে পোল্টাভা শহরে নিয়ে যাওয়া।
মন্ত্রক সূত্রের খবর, ভারতীয় ছাত্রদের যুদ্ধক্ষেত্রে থেকে বার করে নিয়ে যাওয়ার জন্য যুযুধান দুই পক্ষের (রাশিয়া এবং ইউক্রেন) মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় তৈরি করানো ছিল মারাত্মক কঠিন। এই ক্ষেত্রে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের দুই রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ফোনে কথা এবং তার পর যথাক্রমে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এবং বিদেশসচিবের সঙ্গে ওই দুই দেশের দৌত্য খুবই কাজে লেগেছে বলেই দাবি করছে সাউথ ব্লক। পাশাপাশি ইউক্রেনের ভারতীয় দূতাবাসও বিনিদ্র ভাবে কাজ করেছে।
সূত্রের খবর, রাশিয়ার পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে দু’টি পন্থার কথা বলা হয়েছিল। প্রথমটি উত্তর ইউক্রেনের কুর্স্ক হয়ে রাশিয়ার ভূখন্ডে পৌঁছনো এবং সেখান থেকে তাঁদের বার করে আনা। অন্যটি ইউক্রেনের পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে বার করা।
ভারত দু’দিকেই নিজেদের প্রতিনিধিদল রেখেছিল। কিন্তু ইউক্রেন জানায়, তারা নিজেদের ভূখণ্ডের মধ্যেই যা করার করতে চায়। এতদসত্ত্বেও সোমবার সুমি থেকে ভারতীয় ছাত্রদের ফিরিয়ে আনা যায়নি। কারণ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সংঘর্ষ বিরতিও হয়নি। চলছিল বোমাবর্ষণ। তার মধ্যে এতগুলি বাসকে সড়কপথে নিয়ে আসা বিপজ্জনক হত। তাই আরও এক দিন অপেক্ষা করে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর যোগাযোগ করেন ইউক্রেনের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে। অন্য দিকে রাশিয়ায় নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সরাসরি সে দেশের সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন। এই দৌত্যের পর, ইউক্রেন ভারতীয় ছাত্রদের সীমান্ত পর্যন্ত সামরিক পাহারা দিয়ে নিয়ে যেতে রাজি হয়। রাশিয়াও প্রতিশ্রুতি দেয়, ভারতীয় কনভয়ের উপর যাতে কোনও হামলা না হয় তা তারা নিশ্চিত করবে।
আজ কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে আক্রমণ শানিয়ে বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গয়াল বলেন, ‘‘উদ্ধারকার্য যখন চলছিল, তখন পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সুরে কথা বলছিলেন রাহুল গান্ধী। সঙ্কটের সময়ে একজন বিরোধী নেতার কাছ থেকে এমন বক্তব্য মোটেই কাম্য নয়।’’
গোড়া থেকেই কংগ্রেস শিবিরের অভিযোগ ছিল, অনেক দেরি করে ইউক্রেনে উদ্ধার কাজ শুরু করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ওই অভিযান শুরু হলে পড়ুয়াদের এ ভাবে প্রাণ হাতে করে ফিরতে হত না। আজ সেই অভিযোগের জবাবে পীযূষ বলেন, ‘‘মোদী সরকার গত ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্দেশিকা জারি করে ভারতীয় পড়ুয়াদের সে দেশ ছেড়ে চলে আসতে পরামর্শ দিয়েছিল। অধিকাংশ পড়ুয়া তা গ্রাহ্য করেননি। ইউক্রেনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিও পড়ুয়ারা যাতে চলে যেতে না পারে তার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছিল। ফলে পড়ুয়াদের ইউক্রেন ছাড়তে সমস্যা হয়।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী আজ বলেন, “ভারতের কত মানুষ ইউক্রেনে আটকে আর কত জনকে সরকার উদ্ধার করেছে, তা তথ্য দিয়ে জানাক কেন্দ্র।”
রাহুল গান্ধীর পাশাপাশি কেরল কংগ্রেস এবং তামিলনাড়ু সরকারের ভূমিকার সমালোচনাতেও সরব হন বিজেপি নেতৃত্ব। পীযূষ বলেন, ‘‘কেরলের কংগ্রেস অতীতের অপারেশন রাহতের ছবিকে এ বারের অপারেশনের ছবি বলে তুলে ধরে জনমানসকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিল। একই ভাবে তামিলনাড়ু সরকার তামিল পড়ুয়াদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে উদ্ধার করতে হবে বলে দাবি তোলে। পাশাপাশি তাদের রাজ্যের মন্ত্রীদের একটি দলকে ইউক্রেন সংলগ্ন দেশগুলিতে পাঠানোর প্রস্তাবও তারা দিয়েছিল। এতে অব্যবস্থা বাড়ার সম্পূর্ণ সম্ভাবনা ছিল বলে সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়া হয়।’’