এ ভাবেই ভেঙে পড়ল নয়ডার যমজ অট্টালিকা। ছবি: পিটিআই।
ঠিক ন’সেকেন্ডেই শেষ হল নয়ডার জোড়া অট্টালিকা সিয়ান আর অ্যাপেক্স। ঠিক দুুপুর আড়াইটেয় বাজে সাইরেন। তার ন’ সেকেন্ডের মধ্যেই ভেঙে পড়তে দেখা গেল নয়ডার যমজ অট্টালিকাকে। দু’টি প্রাসাদোপম ইমারত মুহূর্তে এসে মিশল মাটিতে।
‘‘আমরা প্রস্তুত’’, বললেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। বিস্ফোরণ ঘটানোর কয়েক মুহূর্ত আগে বললেন, ‘‘আশা করি কিছু ভুল হবে না।’’
দূষণ নিয়ন্ত্রণে এমারেল্ড কোর্ট চত্বরে আনা হয়েছে ১১টি স্মগ গান। যমজ অট্টালিকার সামনে দু’টি রাখা হয়েছে। বাকি ন’টি স্মগ গান মোতায়েন করা হয়েছে ওই এলাকার আশপাশে।
ছবি: পিটিআই
নয়ডার ৯৩এ সেক্টরে এমারেল্ড কোর্টের যমজ অট্টালিকার চারপাশে মোতায়েন করা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। ৫৬০ জন পুলিশকর্মী, রিজার্ভ ফোর্সের ১০০ জন এবং জরুরি বাহিনীর চারটি দল।
নয়ডার ‘এমারেল্ড কোর্ট’ প্রকল্পেই তৈরি হয়েছিল ৪০ তলা উঁচু দু’টি অট্টালিকা। যা উচ্চতায় কুতুব মিনারকেও ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু ওই জোড়া অট্টালিকা নিয়ে প্রথম থেকেই শুরু হয় বিতর্ক। ‘সবুজ পান্না’র নামে তৈরি হয়েছিল যে আবাসন, অভিযোগ ওঠে, সেই আবাসন চত্বরের সবুজ ধ্বংস করেই এই টাওয়ার মাথা তুলতে চলেছে। যা নিয়ে তীব্র আপত্তি জানান, নয়ডার ওই এলাকার বাসিন্দারা।
ফাইল চিত্র।
এমারেল্ড কোর্টে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আবাসনগুলির মাঝখানে মাথা তুলে দাঁড়ানো দুই যমজ অট্টালিকার নাম, ‘অ্যাপেক্স’ এবং ‘সিয়ান’। তবে ২০০০ সালে যখন ‘এমারেল্ড কোর্ট’ আবাসন তৈরির ভাবনাচিন্তা শুরু হল, তখন এদের কথা ভাবা হয়নি। তখন কথা ছিল, গ্রেটার নয়ডার এই এলাকায় ১৪টি আবাসন ভবন তৈরি হবে। যার প্রত্যেকটি হবে ন’তলা উচ্চতার। কিন্তু ২০১২ সালে হঠাৎই বদলে যায় পরিকল্পনা।
‘এমারেল্ড কোর্ট’ নির্মাণের দায়িত্বে ছিল সুপারটেক নামে একটি সংস্থা। তারাই ২০১২ সালে ঘোষণা করে পরিকল্পনা বদলের কথা। বদল হওয়া পরিকল্পনা অনুযায়ী ‘এমারেল্ড কোর্ট’-এ ১৪টির বদলে ১৫টি আবাসন ভবন হবে। ন’তলার বদলে উচ্চতা হবে ১১ তলা। আর হবে নতুন দু’টি গগনচুম্বী অট্টালিকা যার উচ্চতা কুতুব মিনারকেও ছাড়াবে।
ফাইল চিত্র।
বিতর্কের কারণ, নির্মাণ সংস্থা সুপারটেকের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে না পারা। ‘এমারেল্ড কোর্ট’-এর প্রথম পরিকল্পনায় নির্মাণকারী সংস্থাটি জানিয়েছিল, আবাসনগুলির লাগোয়া একটি বিস্তৃত সবুজালি থাকবে। থাকবে বড় গাছগাছালি। যা পরিকল্পনামাফিক তৈরি করবে সুপারটেক। ২০০৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত খাতাকলমে সেই পরিকল্পনার কথা বলাও ছিল। কিন্তু তার পর যখন নতুন দু’টি অট্টালিকা তৈরির পরিকল্পনা করা হয়, দেখা যায়, ওই সবুজালির জায়গাতেই তৈরি হতে চলেছে অতিরিক্ত আকাশছোঁওয়া ভবন দু’টি। যা নির্মাণ সংক্রান্ত প্রশাসনিক আরও বহু আইন ভেঙেছিল বলে পরে জানা যায়।
‘সিয়ান’ আর ‘অ্যাপেক্স’ মাথা তোলার পর তা নিয়ে আপত্তি তোলেন ‘এমারেল্ড কোর্ট’-এর বাসিন্দারাই। তাঁরা অভিযোগ করেন অট্টালিকা দু’টি ভেঙে দেওয়া হোক, কেন না সেগুলি তৈরি হয়েছে বেআইনি ভাবে। এ ব্যাপারে এলাহাবাদ হাই কোর্টে আপিল করেন তাঁরা। যা হাই কোর্টে মঞ্জুর হয়। ২০১৪ সালে ‘অ্যাপেক্স’ এবং ‘সিয়ান’ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয় এলাহাবাদ হাই কোর্ট।
ফাইল চিত্র।
এলাহাবাদ হাই কোর্টের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যায় সুপারটেক। প্রায় সাত বছর ধরে মামলা চলার পর ২০২১ সালে দেশের শীর্ষ আদালতও টাওয়ার দু’টি ভেঙে ফেলার নির্দেশ বহাল রাখে। নির্মাণ সংস্থা সেই রায়কে পুনর্বিবেচনা করতে বলে। এমনকি ‘এমারেল্ড কোর্ট’-এর অন্য বাসিন্দাদের নিরাপত্তার প্রসঙ্গও উত্থাপন করে আদালতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট পুরনো রায়ই বজায় রাখে।