National News

‘নিখোঁজ ডায়েরি করতেই নাজেহাল হয়েছি’, বললেন ধর্ষিতা চিকিৎসকের বাবা

হায়দরাবাদের অনতিদূরে মফস্‌সল এলাকা শামশাবাদের তন্দুপল্লি টোল প্লাজায় বুধবার রাতে ওই তরুণী চিকিৎসকের স্কুটারের পিছনের চাকা ফেটে যায়। বিপদে পড়ে তরুণী ফোন করেন তাঁর বোনকে। তরুণীর পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, রাত সওয়া ন’টা নাগাদ তরুণীর সঙ্গে শেষ বার কথা হয় তাঁর বোনের।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

হায়দরাবাদ শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৯ ১৩:৩৫
Share:

এখানেই তরুণীর দগ্ধ দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার। ছবি- টুইটারের সৌজন্যে।

তেলঙ্গানায় তরুণী চিকিৎসকের কোনও খবর না পেয়ে নিখোঁজ ডায়েরি করার জন্য তাঁর পরিবারকে এ-থানা থেকে ও-থানায় বেশ কিছু ক্ষণ ঘোরাঘুরি করতে হয়েছিল। ঘটনাস্থল এলাকায় পড়ে না বলে সব থানাই প্রথমে দায় এড়াতে চেয়েছিল। পুলিশকে দিয়ে নিখোঁজ ডায়েরি করানো যে কতটা দুরূহ, তা হাড়েহাড়ে টের পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওই তরুণী চিকিৎসকের বাবা। যদিও তেলঙ্গানার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শুক্রবার ওই ঘটনার দায় কার্যত চাপিয়ে দিয়েছিলেন তরুণী চিকিৎসকের উপরেই। প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘‘রাতে টোল প্লাজায় বিপদে পড়ে বোনকে ফোন না করে পুলিশে ডায়াল করেননি কেন ওই তরুণী?’’

Advertisement

বৃহস্পতিবার হায়দরাবাদের অদূরে একটি কালভার্টের নীচে তরুণী চিকিৎসকের দগ্ধ দেহ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানাচ্ছে, খুন করার আগে তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ চার জন ট্রাকচালককে গ্রেফতার করেছে।

হায়দরাবাদের অনতিদূরে মফস্‌সল এলাকা শামশাবাদের তন্দুপল্লি টোল প্লাজায় বুধবার রাতে ওই তরুণী চিকিৎসকের স্কুটারের পিছনের চাকা ফেটে যায়। বিপদে পড়ে তরুণী ফোন করেন তাঁর বোনকে। তরুণীর পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, রাত সওয়া ন’টা নাগাদ তরুণীর সঙ্গে শেষ বার কথা হয় তাঁর বোনের। তার পর তাঁর বোন ফোন করে দেখেন তরুণীর মোবাইল সুইচড্‌ অফ।

Advertisement

তরুণীর বাবা বলেছেন, ‘‘আমরা ভেবেছিলাম, হয়তো ওর ফোনের ব্যাটারির চার্জ ফুরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু রাত ১০টা বেজে যেতেই আমাদের দুশ্চিন্তা শুরু হয়। আর বসে থাকতে পারিনি বাড়িতে। ছুটে যাই টোল প্লাজায়। গিয়ে তন্নতন্ন করে খুঁজি ওকে। না পেয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হই। যাই কাছের একটি থানায়। সেই থানা জানায়, টোল প্লাজার এলাকাটি তাদের এলাকায় পড়ে না। তখন যাই আর একটি থানায়। তারাও একই কথা বলে। নিখোঁজ ডায়েরি করতে এই ভাবে আধ ঘণ্টা ধরে এক থানা থেকে অন্য থানায় ঘুরে বেড়াই। মেয়েকে খুঁজে পেতে আমি দু’জন কনস্টেবলেরও সাহায্য চেয়েছিলাম। কোনও থানাই ডায়েরি নিতে রাজি হচ্ছে না দেখে শেষমেশ রাত তিনটে নাগাদ আমি একাই রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে খুঁজতে শুরু করি মেয়েকে।’’

আরও পড়ুন- পুলিশে ফোন করেননি কেন? চিকিৎসক খুনে বিতর্কিত মন্তব্য মন্ত্রীর, নিন্দার ঝড়​

আরও পড়ুন- শহরে ফের গণধর্ষণ! কালীঘাট মন্দির চত্বর থেকে দুই কিশোরীকে ডেকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ​

এই ঘটনা নিয়ে গত কালই তেলঙ্গানার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহম্মদ মাহমুদ আলি অ-সংবেদশীল মন্তব্য করেছিলেন। প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘‘ঘটনার সময় তরুণী কেন অপৎকালীন নম্বরে ফোন করেননি?’’ মন্ত্রী রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করা তো দূর, বরং মর্মান্তিক পরিণতির জন্য ওই তরুণীকেই দায়ী করায় বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

তরুণী চিকিৎসকের বোন জানিয়েছেন, মোবাইল সুইচড্‌ অফ জেনেও প্রথমে ততটা দুশ্চিন্তা হয়নি। ভেবেছিলেন, ব্যাটারির চার্জ ফুরিয়ে গিয়েছে বলেই সেটা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দুশ্চিন্তা শুরু হয় রাত ১০টা বেজে যাওয়ার পর। তরুণীর বোনের কথায়, ‘‘রাত ১০টা বাজার পর মা আমাকে ফোন করেন। কাঁদতে থাকেন। আমি তখন অফিসে। মায়ের ফোন পাওয়ার পরেই এক সহকর্মীকে নিয়ে অফিসের একটি গাড়িতে চেপে আমি বোনের খোঁজে যাই টোল প্লাজায়। তন্নতন্ন করে খুঁজি গোটা এলাকা।’’

বৃহস্পতিবার তেলঙ্গানার ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়কের একটি কালভার্টের নীচ থেকে ওই তরুণী চিকিত্সকের আধপোড়া দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

তরুণীর বাবা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি চেয়েছেন। কোনও আইনজীবী যেন অভিযুক্ত চার ট্রাকচালকের হয়ে না লড়েন আদালতে, তারও আর্জি জানিয়েছেন তরুণীর বাবা।

কল্লরু গ্রামের একটি পশু হাসপাতালে কাজ করতেন তিনি। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ শামশাবাদ টোল প্লাজার কাছে নিজের স্কুটারটি পার্ক করে একটি ভাড়ার ট্যাক্সি নিয়ে গোচিবাওলিতে এক চর্ম চিকিত্সকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে দেখেন স্কুটারের পিছনের চাকা ফেটে গিয়েছে। রাত তখন ৯টা বেজে গিয়েছিল। তরুণী তাঁর বোনকে জানিয়েছিলেন দুই ট্রাকচালক স্কুটারটি সারাতে তাঁকে সাহায্য করবে বলছে। তখনই তাঁর বোন তরুণীকে ট্যাক্সি ধরে বাড়ি ফিরে আসার কথা বলেন।

পুলিশকে তরুণীর বোন জানিয়েছেন, ওটাই ছিল তাঁদের দু’জনের মধ্যে শেষ কথা।

যে মহিলার দেহ উদ্ধার হয়েছে তাঁকেও ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে কি না এবং তরুণী চিকিত্সকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার সঙ্গে এই ঘটনার কোনও যোগ আছে কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ইতিমধ্যেই তরুণী চিকিত্সককে গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় চার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে সাইবারাবাদ পুলিশ। ধৃতেরা হল মহম্মদ আরিফ, জল্লু শিবা, জল্লু নবীন এবং চিন্তকুন্ত চেন্নাকেশভুলু। চার জনই ট্রাকের কর্মী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement