জেলাশাসকের রোষের মুখে পুলিশ অফিসার। ছবি: সংগৃহীত।
জেলা প্রশাসনের শীর্ষকর্তার রোষের মুখে পড়তে হল পুলিশ অফিসারকে। শুধু ভর্ৎসনাই নয়, ওই কর্তা রীতিমতো আঙুল উঁচিয়ে পুলিশ অফিসারকে শাসিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠল।
উর্দিধারীর অসহায় ছবিটা ফের এক বার দেখা গেল তামিলনাড়ুর কাঞ্চিপুরম জেলায়। গত শুক্রবার সেখানকার বরদারাজা পেরুমল মন্দিরে দর্শনার্থীদের জমায়েত হয়েছিল। ওই মন্দিরে ভিআইপিদের জন্য নির্দিষ্ট গেট দিয়ে সাধারণ দর্শনার্থীকে কেন প্রবেশ করানো হয়েছে, তা নিয়েই বিবাদের সূত্রপাত। সেই ‘অপরাধ’-এ জেলাশাসকের রোষের মুখে পড়লেন এক পুলিশ ইনস্পেক্টর। মন্দিরের সামনে তাঁকে চড়া সুরে ধমকানো থেকে আঙুল উঁচিয়ে হুমকি দেওয়া— সবই করলেন কাঞ্চিপুরমের জেলাশাসক। গোটা ঘটনাটাই ধরা পড়েছে একটি ভিডিয়োতে।
ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, জেলাশাসক চিৎকার করতে করতে আঙুল উঁচিয়ে ওই পুলিশ ইনস্পেক্টরকে বলছেন, ‘‘আপনি কি এখানে চিটিং করতে এসেছেন? আমি আপনাকে শেষ করে দেব! কী চেকিং চলছে? পাস ছাড়াই কত লোক ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে! যখন ভিআইপিরা আসবেন, তাঁরা দাঁড়িয়ে থাকবেন? সিনিয়র আইপিএসরা, মন্ত্রীরা আসছেন... আপনি শেষ! আমি আপনাকে সাসপেন্ড করে দেব।’’
তামিলনাড়ুতে পুলিশ অফিসারকে শাসাচ্ছেন জেলাশাসক। দেখুন ভিডিয়ো
দৃশ্যতই অসহায় ওই পুলিশ ইনস্পেক্টর এর পর জেলাশাসককে থামানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁকে থামানো যায়নি। তিনি এ বার জেলা পুলিশের উদ্দেশে সুর চড়াতে থাকেন। বলেন, ‘‘আপনারা, পুলিশেরা অত্যন্ত অহঙ্কারী। ইনস্পেক্টর জেনারেল কোথায়? তাঁকে ডেকে আনুন। যা-ই হোক না কেন, তাঁকে সাসপেন্ড করে দিন!’’
আরও পড়ুন: থানায় ঢুকে পুলিশকে মার, ওসির ভূমিকায় অসন্তুষ্ট কমিশনার, অভিযুক্তদের ধরতে মাঠে গুন্ডা দমন শাখা
ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, জেলাশাসকের কাছে বার বার ক্ষমা চাইছেন ওই ইনস্পেক্টর। তবে তাতেও জেলাশাসকের রোষ কমানো যায়নি।
ঘটনার কথা জানাজানি হওয়ার পর ওই জেলাশাসক খানিকটা সুর নরম করেছেন। তাঁর দাবি, মন্দিরের ভিআইপি গেট দিয়ে নিয়ম ভেঙে বিনা পাসে বহু সাধারণ দর্শনার্থীকে ঢোকানো হচ্ছিল দেখে তিনি রেগে গিয়েছিলেন। তাঁর কথায়: ‘‘পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করেন জেলা আধিকারিকেরা। আমি কোনও ব্যক্তিবিশেষ বা পুলিশের বিরুদ্ধে নই।’’ তবে জেলাশাসকের এই মন্তব্যে সম্তুষ্ট নন পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা। এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁরা জানিয়েছেন, সে দিন জেলাশাসকের আচরণ মাত্রা ছাড়িয়েছিল।
আরও পড়ুন: ‘তসবির তেরি দিল মে...’ গেয়ে অন্য রানু উঠে এলেন সোশ্যাল মিডিয়ার চর্চায়
স্থানীয় সূত্রে খবর, বরদারাজা পেরুমল মন্দিরে মূল বিগ্রহকে জলে ডুবিয়ে রাখা হয়। প্রতি ৪০ বছর অন্তর এক বার তা দর্শনের সুযোগ পান ভক্তেরা। ফলে সে সময় ওই মন্দিরে বিপুল ভক্ত সমাবেশ হয়। কখনও কখনও সাধারণ দর্শনার্থীরা ১২ ঘণ্টা অপেক্ষার পরে বিগ্রহের দেখা পান। সেখানে ভিআইপিরা মাত্র আধ ঘণ্টাতেই বিগ্রহ দর্শনের সুযোগ পান। সে দিনের ঘটনায় ওই ইনস্পেক্টরের দাবি, এক বৃদ্ধ দম্পতিকে ভিআইপি গেট দিয়ে ঢোকার বন্দোবস্ত করে দিয়েছিলেন তিনি। সে কারণেই জেলাশাসকের রোষের মুখে পড়েন।