Ram Mandir Inauguration

রামমন্দিরকে উপলক্ষ করে ধর্ম নিয়ে মোদীর আচরণ ‘উন্মাদের লক্ষণ’, সরব পুরীর শঙ্করাচার্য

ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে প্রকট ভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে রামমন্দিরের উদ্বোধন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে একাধিক বিরোধী দল।

Advertisement

মিলন হালদার

গঙ্গাসাগর শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ ০৫:১৬
Share:

—প্রতীকী ছবি।

অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধনকে ঘিরে দেশের সরকার তথা শাসক গোষ্ঠীর উন্মাদনার তীব্র সমালোচনায় সরব হলেন পুরীর শঙ্করাচার্য স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী। সরাসরিই তাঁর অভিযোগ, রামমন্দিরকে উপলক্ষ করে ধর্ম নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আচরণ ‘উন্মাদের লক্ষণ’। সেই সঙ্গে শঙ্করাচার্য ফের জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী ২২ জানুয়ারি রামমন্দিরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি যোগ দেবেন না।

Advertisement

ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে প্রকট ভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে রামমন্দিরের উদ্বোধন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে একাধিক বিরোধী দল। রামমন্দিরের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের উপস্থিতি ধর্মীয় একটি বিষয়কে রাষ্ট্রের মদতে অনুষ্ঠানে পরিণত করতে চলেছে, এই অভিযোগ ঘিরে বিতর্ক বেধেছে। চার শঙ্করাচার্যের বক্তব্য সেই বিতর্কে আরও ইন্ধন দিয়েছে। তবে গঙ্গাসাগরে এসে শনিবার পুরীর শঙ্করাচার্য রামমন্দিরের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ‘দাদাগিরি’র যে অভিযোগ তুলেছেন, তাতে বিষয়টি আরও অন্য মাত্রা পেয়েছে। বিরোধী দলগুলি যেমন শঙ্করাচার্যের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে, কেন্দ্রের শাসক বিজেপি তেমনই সতর্ক প্রতিক্রিয়া দিয়েছে।

রাম যথাস্থানে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় অবশ্য পুরীর শঙ্করাচার্য খুশি। তাঁর কথায়, ‘‘এটা জরুরি ছিল।’’ রামমন্দির নিয়ে চার শঙ্করাচার্যের মধ্যে কোনও মতভেদ নেই বলেও দাবি করেছেন তিনি। তবে কেন তিনি রামমন্দিরের অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না? শঙ্করাচার্যের অভিযোগ, শাস্ত্র সম্মত বিধি মেনে রামমন্দিরে রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না। ধর্মগুরু বলেন, ‘‘মূর্তি প্রতিষ্ঠা শাস্ত্রসম্মত বিধি দ্বারা করা উচিত। মন্দিরের সেবায়েত ছাড়া অন্য কেউ ভগবানের বেদীকে স্পর্শ করতে পারে না। এটাই সনাতন ধর্মের মর্যাদা।’’

Advertisement

অযোধ্যায় আগামী ২২ জানুয়ারি রামমন্দিরের উদ্বোধন করার কথা মোদীর। সেই উপলক্ষে ইতিমধ্যে অযোধ্যায় গিয়ে প্রস্তুতি দেখে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী। করেছেন রোড-শো। ধর্মের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর এই ভূমিকাকে ‘বাড়াবাড়ি’ হিসেবেই দেখছেন শঙ্করাচার্য। তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর নিজের সীমার মধ্যে থেকে কাজ করা উচিত। সংবিধান সম্মত বিধি-নিষেধ পালন করা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব। এই বিধিকে উপেক্ষা করে নিজের প্রচারের চেষ্টা করা উচিত নয়।’’ শঙ্করাচার্য আরও বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর নিজের সীমার মধ্যে থাকা উচিত। ধর্মের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা তাঁর উচিত নয়। সব ব্যাপারে দাদাগিরি করা এবং নেতৃত্ব দিতে যাওয়া প্রধানমন্ত্রীর কাজ নয়! এমন কাজ করা উন্মাদের লক্ষণ!’’ ধর্মগুরুর কটাক্ষ, ‘‘কেউ রামমন্দির উদ্বোধন করবেন, রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা করবেন, আমি কি সেখানে গিয়ে হাততালি দেব?’’ এই প্রসঙ্গে প্রণব মুখোপাধ্যায়, সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের প্রশংসা করেন শঙ্করাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘এঁরাও তো রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। কিন্তু এঁরা ধর্ম নিয়ে উন্মাদের মতো আচরণ করেননি।’’

রামমন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাচ্ছে না একাধিক রাজনৈতিক দল। সেই দলের নেতাদের হিন্দু-বিরোধী বলে দেগে দেওয়া হচ্ছে। এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে শঙ্করাচার্য হাসতে হাসতে বলেছেন, ‘‘আমিও তো যাচ্ছি না! আমি কি হিন্দু নই!’’

শঙ্করাচার্যের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘‘ধর্মকে যখন রাজনীতি এসে ছিনতাই করে নে।, তখন সেই ধর্মে বিশ্বাসী ব্যক্তিদেকই এগিয়ে এসে বলতে হয় ‘আমাদের নামে এই কাজ করবেন না’। পুরীর শঙ্করাচার্য সেই কাজ করেছেন, স্বাগত জানাচ্ছি। ধর্মের নাম করে রাজনীতি হচ্ছে, এই কারণেই আমরা সর্বপ্রথম জানিয়েছিলাম এর মধ্যে আমরা থাকব না। আশা করব, হনুমানগঢ়ী আখড়ার প্রধান, যিনি গঙ্গাসাগরে আশ্রমের দায়িত্বে, তিনিও শঙ্করাচার্যের মতোই অবস্থান স্পষ্ট করবেন।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর মতে, ‘‘আমরা গোড়া থেকেই বলে আসছি, ধর্ম আর ধর্মে নেই। পুরোটাই রাজনীতি হচ্ছে। ধর্ম মানতে হলে রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা কোনও পুরোহিত করতেন। কিন্তু পুরোটাই মোদী-যোগীরা হাতে নিয়েছেন।’’ আর রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের মন্তব্য, ‘‘শঙ্করাচার্য তো ঠিকই বলেছেন। ধর্ম যদি করতে হয়, ধর্মের রীতি মেনে করা উচিত। কিন্তু বিজেপি তো ধর্ম করে না। ধর্ম নিয়ে, রাজনীতি নিয়ে ব্যবসা করে!’’

অন্য দিকে, রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘শঙ্করাচার্য নিয়ে বিজেপি কোনও মন্তব্য করবে না। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তিনি সেই আমন্ত্রণে সেখানে যাবেন, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন। এই নিয়ে বিজেপির কিছু বলার নেই।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘কিন্তু পৃথিবীর প্রাচীনতম আন্দোলনকে তুঙ্গে পৌঁছে দিতে কাদের ভূমিকা ছিল, কাদের আত্মবলিদান ছিল, মানুষ জানে। কিন্তু ৬৭টা যুদ্ধ, সাড়ে তিন লক্ষ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে বিদেশি আক্রমণের চিহ্ন মুছে ভারতের আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার দিনে ধর্ম ও রাজনীতি আলাদা থাকতে পারে না!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement