নয়া নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-বিরোধী প্রতিবাদ শাহিন বাগে। ফাইল চিত্র।
রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদের অধিকার বড়, না কি মানুষের ভোগান্তির কথাও ভাবতে হবে?
শাহিন বাগের নয়া নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-বিরোধী প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে এই প্রশ্ন উঠেছিল। সুপ্রিম কোর্ট আজ রায় দিল, প্রতিবাদের নামে সাধারণ মানুষের ব্যবহারের রাস্তা বা এলাকা অনির্দিষ্ট কালের জন্য অবরোধ করে রাখা যাবে না। প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হতে হবে নির্দিষ্ট এলাকায়।
বিচারপতি সঞ্জয় কিষেণ কউল, বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু ও বিচারপতি কৃষ্ণ মুরারীর বেঞ্চ বলেছে, ‘গণতন্ত্র ও মতভেদ হাতে হাত ধরে চলে। কিন্তু মতভেদ জানিয়ে বিক্ষোভ নির্দিষ্ট এলাকায় করতে হবে। আমাদের এই ফয়সালা করতে কোনও দ্বিধা নেই যে, এ ভাবে রাস্তা অবরোধ মেনে নেওয়া যায় না। তা সে শাহিন বাগ হোক বা অন্য কোথাও। প্রশাসনকে ওই সব এলাকা অবরোধমুক্ত করতে পদক্ষেপ করতেই হবে।’ প্রতিবাদের জন্য যে কোনও সময় কিছু মানুষ কোথাও জড়ো হতে পারেন— এই যুক্তিও খারিজ করে দিয়েছে আদালত।
আরও পড়ুন:পুজো কী ভাবে, নির্দেশিকা প্রকাশ
আইনজীবীদের মতে, বিক্ষোভ-প্রতিবাদের প্রশ্নে গোটা দেশেই এই রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে। একইসঙ্গে নির্দিষ্ট এলাকায় প্রতিবাদ করলে সরকারের টনক নড়বে কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। ‘অভিমানী’ শাহিন বাগ আজ সে কথাই উগরে দিয়েছে। সিএএ-এনআরসি বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা শাহিন কওসরের কথায়, “রায়কে সম্মান জানিয়েও প্রশ্ন, অত আন্দোলনের পরেও আমাদের কথা কেউ শুনতে চাননি। সাধারণ মানুষের অসুবিধা হোক, তা আমরা চাইনি। কিন্তু আমরা এ দেশে আর থাকতে পারব না— সেই আতঙ্কের কোনও মূল্য নেই?”
আরও পড়ুন: কৃষক আন্দোলনে ধুন্ধুমার সিরসায়
আন্দোলনে শামিল প্রকাশ দেবীরও বক্তব্য, “আন্দোলনের জন্য বন্ধ ছিল জাতীয় সড়কের ১৫০ মিটার। সমান্তরাল ও বিকল্প রাস্তা বন্ধ রেখেছিল পুলিশই। আদালতের রায়কে সম্মান জানিয়েও প্রশ্ন জাগে, রাস্তা দিয়ে যাতায়াত বন্ধ হওয়াই শুধু অসুবিধা? ‘ভুল আইনে’ কারও দেশ ‘ছিনতাই হয়ে যাওয়া’ অনেক বড় অন্যায় নয়?”
২০১৯-এর ডিসেম্বরে শাহিন বাগে দিল্লি ও নয়ডার সংযোগকারী একটি রাস্তা অবরোধ করে সিএএ-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল। রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ চলতে পারে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মামলা হয়। আজ সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ‘মনে রাখতে হবে, ব্রিটিশ জমানায় প্রতিবাদের সঙ্গে গণতন্ত্রে বিরুদ্ধ মত প্রকাশের ধরনের তুলনা চলে না।’
প্রশাসন সঠিক সময়ে পদক্ষেপ করেনি বলেও বুঝিয়ে দিয়েছেন বিচারপতিরা। তাঁরা রায়ে বলেছেন, আদালত কোনও কাজের আইনি দিক বিচার করে। প্রশাসনকে বন্দুক চালানোর জন্য কাঁধ জোগানো আদালতের কাজ নয়। যথেষ্ট সময় কেটে গেলেও প্রশাসনের তরফে কোনও পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী আজ বলেন, “আদালত যেমন মানুষের ভোগান্তির কথা বলেছে, তেমনই প্রতিবাদের অধিকারের কথাও বলেছে। তা হলে সিএএ-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের নামে ইউএপিএ, দেশদ্রোহিতার মামলা হল কেন!” বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের রায় কংগ্রেস-আপ-বামেদের ষড়যন্ত্র ফাঁস করে দিয়েছে। তাঁরা শাহিন বাগে উস্কানি দিয়েছিলেন। তা থেকেই দিল্লিতে হিংসা ছড়ায়, ৫০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।”