নীতীশ কুমার।
বুধবার সুপ্রিম কোর্ট সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুতে সিবিআই তদন্তের ছাড়পত্র দেওয়ার পরে একই সঙ্গে বিহার ও মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে ঝড় উঠেছে। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার দাবি করেছেন, তাঁরা সুশান্তের পরিবারকে ন্যায় পাইয়ে দিতে চাইছিলেন। সেই অবস্থান সঠিক বলে প্রমাণিত হল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিহারের নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদেরও একই দাবি।
রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের ধারণা, এই সিবিআই তদন্তকে ঘিরে বিহার নির্বাচনে ফায়দা তোলার চেষ্টা তো হবেই। সেই সঙ্গে শিবসেনার তরুণ তুর্কি, আদিত্য ঠাকরের ভাবমূর্তিতেও বিজেপি ফের কালি ছেটানোর চেষ্টা করবে। বিজেপি আগেই অভিযোগ তুলে রেখেছে যে, উদ্ধব ঠাকরে-পুত্র আদিত্য সুশান্তের মৃত্যুর আগের রাতে তাঁর ফ্ল্যাটে পার্টিতে হাজির ছিলেন।
বিজেপির পক্ষ থেকে আজ উদ্ধব ঠাকরে সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, এনসিপি নেতা অনিল দেশমুখ ও মুম্বইয়ের পুলিশ কমিশনার পরমবীর সিংহের ইস্তফা দাবি করা হয়েছে। এটা আসলে শিবসেনা ও এনসিপি-র মধ্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা বলেও মনে করছেন অনেকে।
বিহারের নীতীশ সরকার আগেই দাবি তুলেছিল, মহারাষ্ট্র সরকারের নির্দেশেই মুম্বই পুলিশ ঠিকমতো তদন্ত করছে না। এই যুক্তিতেই সুশান্তের মৃত্যু মুম্বইয়ে হলেও বিহার পুলিশ পটনায় এফআইআর দায়ের করে। সুপ্রিম কোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পরে বিজেপি নেতারা ফের বলছেন, আদিত্যর সঙ্গে সুশান্ত-মৃত্যুর যোগাযোগ ছিল বলেই মুম্বই পুলিশ তদন্তে ঢিলেমি করছিল। মহারাষ্ট্রের বিজেপি নেতা, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসের যুক্তি, মহারাষ্ট্র সরকারের এ বার আত্মসমীক্ষা করা উচিত কেন তারা তদন্ত ঠিক মতো করতে পারলেন না।
উদ্ধব সরকারের পক্ষে দাঁড়িয়ে কংগ্রেস নেতা শক্তিসিন গোহিলের যুক্তি, সুপ্রিম কোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিলেও রায়ে স্পষ্ট বলেছে, মুম্বই পুলিশ তদন্তে গাফিলতি করেনি। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হৃষীকেশ রায় তাঁর রায়ে জানান, দুই রাজ্যের পারস্পরিক দোষারোপও সিবিআই তদন্তের নির্দেশের অন্যতম কারণ। রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো নিয়ে এই চাপানউতোরে তদন্তই ব্যাহত হতে পারে।
মহারাষ্ট্রে শাসক জোটের নেতারা মনে করছেন, বিহারের ভোটে বিজেপি ও জেডি-ইউ এ বার ভূমিপুত্র সুশান্তের পরিবারকে ন্যায় পাইয়ে দেওয়ার প্রচার জোরদার করবে। অন্য দিকে মহারাষ্ট্রে শাসক জোটে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করবে। আদিত্যর বিরুদ্ধে সিবিআই জুজু দেখিয়ে উদ্ধবকে কংগ্রেস-এনসিপির জোট ভেঙে বিজেপির সঙ্গে সরকার গঠনের জন্য চাপও তৈরি করবে। কিন্তু ঠাকরে পরিবার তাতে মাথা নোয়াবে বলে শিবসেনা নেতারা মনে করছেন না।
বিজেপি বিধায়ক অতুল ভাটখলকর ৩১ জুলাই অভিযোগ তুলেছিলেন, সুশান্তের ফ্ল্যাটে ১৩ জুনের পার্টিতে এক তরুণ রাজনীতিক ছিলেন। এর পরেই বিজেপি নেতারা আদিত্যর দিকে ইঙ্গিত করতে শুরু করেন। আদিত্য এখন উদ্ধব-সরকারের মন্ত্রীও। চাপের মুখে তিনি বিবৃতি দিয়ে অভিযোগ অস্বীকার করেন। সুশান্তর বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীও দাবি করেছিলেন, বিহারের ভোটের জন্যই সুশান্তর মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে। আজ বিহার পুলিশের ডিজি গুপ্তেশ্বর পাণ্ডে বলেন, “বিহারের মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে মন্তব্য করার যোগ্যতা রিয়া চক্রবর্তীর নেই।” ডিজি-র এই মন্তব্যের প্রবল সমালোচনা হয়েছে।