—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
মাধ্যমিক স্তরের যে কোনও শিক্ষক-শিক্ষিকাকে যে কোনও জেলায় রাজ্য বদলি করতে পারে। রাজ্য সরকারের এই ক্ষমতার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিল মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি। কিন্তু আজ সুপ্রিম কোর্ট সেই মামলা পত্রপাঠ খারিজ করে দিল।
গত বছর অক্টোবরে সুপ্রিম কোর্ট তার অন্তর্বর্তী নির্দেশে বলেছিল, রাজ্যে ২০১৭-র আগে নিযুক্ত স্কুল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আপাতত দূরের জেলায় বদলি করা যাবে না। আজ শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের মামলা খারিজ করে বিচারপতি জে কে মাহেশ্বরী ও বিচারপতি রাজেশ বিন্দলের বেঞ্চ রাজ্য সরকারের হাতে যত্রতত্র বদলির ক্ষমতা ফিরিয়ে দিল। এর জেরে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের একাংশের মধ্যে হতাশা ছড়িয়েছে। তাঁদের যুক্তি, যত্রতত্র বদলি করার ক্ষমতা থাকলে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে প্রশাসন এই ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারে। মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা অনিমেষ হালদার বলেন, ‘‘আমরা সুপ্রিম কোর্টে এই রায় পর্যালোচনা করার অনুরোধ জানিয়ে রিভিউ পিটিশন দায়ের করব। রাজ্য সরকারকেও আলোচনা ও আন্দোলনের মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করব। কারণ কোনও শিক্ষককে যদি বাড়ি থেকে বহু দূরে বদলি করে দেওয়া হয়, তা হলে তো তাঁর আসল পড়ানোর কাজেরই ক্ষতি হবে।’’
শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে দূর-দূরান্তে বদলির বিরুদ্ধে রাজ্যের মাধ্যমিক শিক্ষক ও কর্মচারী সমিতি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল। তাদের মূল অভিযোগ ছিল, ১৯৯৭ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশন আইনে ২০১৭ সালে ১০সি নতুন ধারা যোগ করে স্কুল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এক জেলা থেকে আর এক জেলায় বদলি করে দেওয়ার রাস্তা খোলা হয়েছে। ২০১৭-র আগে যাঁরা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন, তাঁদেরও বদলি করা হচ্ছে।
গত অক্টোবরে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, রাজ্যে ২০১৭-র আগে নিযুক্ত স্কুল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আপাতত দূরের জেলায় বদলি করা যাবে না। প্রয়োজনে কাছাকাছি স্কুলে বা জেলার মধ্যে বদল করা যাবে। তবে যাঁদের ইতিমধ্যেই বদলি করা হয়েছে, তাঁদের শীর্ষ আদালতের চূড়ান্ত রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। যাঁরা ২০১৭-র পরে নিযুক্ত হয়েছেন, সেই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের রাজ্য সরকার যত্রতত্র বদলি করতে পারবে।
কিন্তু আজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জে কে মাহেশ্বরী ও বিচারপতি রাজেশ বিন্দলের বেঞ্চ মামলা খারিজ করে জানিয়ে দেয়, সরকার নতুন নিয়ম তৈরি করলে শিক্ষকরা আপত্তি করতে পারেন না। শিক্ষকদের সংগঠন কেন মামলা করেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি মাহেশ্বরী। তিনি বলেন, কোনও শিক্ষক বা শিক্ষিকার অসুবিধা থাকলে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে মামলা করতে পারেন। জোটবদ্ধ হয়ে কেন মামলা দায়ের করা হয়েছে! সমিতির আইনজীবী প্রতীক ধর যুক্তি দিয়েছিলেন, ২০১৭-র নতুন নিয়ম যোগ হওয়ার আগে যাঁরা চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের নিয়োগকর্তা ছিল স্কুলের পরিচালন কমিটি। তাঁদের নিয়োগপত্রে কোথাও বদলির উল্লেখ ছিল না। কিন্তু বিচারপতিদের অভিমত, এখন স্কুল পরিচালন কমিটির বদলে মধ্য শিক্ষা পর্ষদ নিয়োগকর্তা হলে তা নিয়ে শিক্ষকদের আপত্তি তোলার অধিকার নেই।