Manipur Clash

ইস্তফার পথে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী? একটু পরেই যাচ্ছেন রাজভবনে, জল্পনা বাড়ছে বীরেনকে ঘিরে

শুক্রবার দুপুরের দিকে মণিপুরের রাজ্যপাল অনুসুইয়া উইকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বীরেন। রাজ্য রাজনীতিতে গুঞ্জন, সে সময় নিজের ইস্তফাপত্র জমা দিতে পারেন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

ইম্ফল শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০২৩ ১৪:১০
Share:

মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

হিংসাবিধ্বস্ত মণিপুরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তাঁর উপরেই আস্থা রাখার ইঙ্গিত দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। যদিও বিরোধী দলগুলি মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের ইস্তফার দাবি জানিয়ে আসছে গত কয়েক দিন ধরেই। এই আবহেই পদত্যাগের জল্পনা উস্কে দিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীই। শুক্রবার দুপুরের দিকে মণিপুরের রাজ্যপাল অনুসুইয়া উইকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বীরেন। রাজ্য রাজনীতিতে গুঞ্জন, সে সময় নিজের ইস্তফাপত্র জমা দিতে পারেন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী। উত্তর-পূর্ব ভারতের অশান্ত এই রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হতে পারে, এমন জল্পনাও ছড়িয়ে পড়েছে।

Advertisement

পদত্যাগের জল্পনাকে আরও উস্কে দিয়ে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় এবং রাজভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখান বেশ কিছু বীরেন-সমর্থক। তাঁরা পদত্যাগ না করার আর্জি জানান বীরেনকে। যদিও এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত মুখে কুলুপ এঁটেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর ঘনিষ্ঠমহল থেকেও এই বিষয়ে স্পষ্টভাবে কিছু জানানো হয়নি।

গত মে মাস থেকে কুকি এবং মেইতেই জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধের কারণে উত্তপ্ত থেকেছে মণিপুর। এ ক্ষেত্রে বীরেনের সঙ্কট অবশ্য উভয়মুখী। বীরেন নিজে জাতিগত পরিচয়ে মেইতেই। কুকি-সহ জনজাতি গোষ্ঠীগুলির অভিযোগ, গোষ্ঠীহিংসার সময়ে বীরেনের সরকারের আচরণ পুরোপুরি পক্ষপাতদুষ্ট ছিল। জনজাতি অধ্যুষিত পাহাড় অঞ্চলগুলিতে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে মণিপুর সরকার অবহেলা করেছে বলে অভিযোগ তুলে ওই অঞ্চলে ‘পৃথক প্রশাসনের’ দাবি তুলেছে তারা। অন্য দিকে, রাজধানী ইম্ফল-সহ সমতল এলাকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেইদের অভিযোগ, মায়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে হামলা চালানো কুকি জঙ্গিদের মোকাবিলায় সময়োচিত পদক্ষেপ করা হয়নি। বিজেপির ইতিহাসে অবশ্য বীরেনের সাফল্য ‘ব্যতিক্রমী’। ২০১৬-র অক্টোবরে প্রদেশ কংগ্রেসের সহ-সভাপতি পদে ইস্তফা দিয়ে বিজেপিতে শামিল হওয়ার মাত্র ৫ মাসের মাথায় মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি।

Advertisement

গত রবিবারই বীরেনকে দিল্লিতে আলোচনার জন্য ডেকে পাঠিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বৈঠকের পর একটি টুইট করে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, রাজ্যের পরিস্থিতি সামলাতে ‘সক্ষম’ কেন্দ্রীয় সরকার এব‌ং রাজ্য সরকার। বীরেনের নেতৃত্বাধীন সরকার মণিপুরের জনগণের আস্থা হারিয়েছে— বিরোধী দলগুলির একাংশের তরফে বার বার এই অভিযোগ তোলা হয়। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করারও দাবি ওঠে। যদিও গত শনিবার সর্বদলীয় বৈঠকে রাজ্যে জরুরি অবস্থা জারির সম্ভাবনার বিষয়টি খারিজ করে দেন শাহ। বরং রাজ্যের বিজেপি সরকারের উপরেই আস্থা রাখার উপরে জোর দেন তিনি। রবিবারের বৈঠক প্রসঙ্গে বীরেন টুইটে লিখেছিলেন, “কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন, রাজ্যে শান্তিপ্রতিষ্ঠার উদ্দেশে আমরা যেন আমাদের কাজকে আরও শক্তিশালী করি।”

প্রসঙ্গত, মণিপুরে দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ধারাবাহিক হিংসায় নিহতের স‌ংখ্যা দেড়শো ছুঁতে চলছে। ঘরছাড়া প্রায় ৫০ হাজার মানুষ! গত শনিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে সর্বদল বৈঠক করলেও তার পরেও হিংসার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। গত ৩ মে মণিপুরের জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর বিক্ষোভ-মিছিল ঘিরে উত্তর-পূর্বের ওই রাজ্যে অশান্তির সূত্রপাত। মণিপুর হাই কোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এর পরেই জনজাতি সংগঠনগুলি তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই সংঘাতের সূচনা হয় সেখানে।

মণিপুরে যুযুধান মেইতেই এবং কুকি জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন সংগঠন ইতিমধ্যেই বিজেপি পরিচালিত রাজ্য সরকারের প্রতি প্রকাশ্যে অনাস্থা প্রকাশ করেছে। এমনকি কুকিরা পৃথক রাজ্যের দাবিও তুলেছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সেই দাবিতে ইন্ধন জুগিয়েছেন মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপির সহযোগী দল মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টের প্রধান জোরামথাঙ্গা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement