নীতীশ কুমার। —ফাইল চিত্র।
জল্পনা ছিল। বৃহস্পতিবার রাত বাড়তে সেই জল্পনা আরও তীব্র হল। বিভিন্ন সূত্র থেকে দাবি করা হল, লোকসভা নির্বাচনের আগে আবার এনডিএতেই যোগ দিচ্ছেন নীতীশ কুমার। আর সেই যোগদান সময়ের অপেক্ষা। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে নাকি আসনরফাও হয়ে গিয়েছে বিজেপি এবং নীতীশের জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ)-এর। সূত্রের খবর, আসন্ন লোকসভা ভোটে বিহারে বিজেপি এবং জেডিইউ ক’টি আসনে লড়বে, সেই নিয়ে সমঝোতার পরেই বিরোধীদের জোট ‘ইন্ডিয়া’ ছেড়ে এনডিএতে যাচ্ছেন নীতীশ। গত দু’দিনে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়াল জানিয়েছেন, যথাক্রমে বাংলা এবং পঞ্জাবে একাই লড়বে তাঁদের দল। এমতাবস্থায় ইন্ডিয়া ছাড়ার পথে নীতীশও।
৪ ফেব্রুয়ারি বিহারের বেটিয়াতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভা রয়েছে। সেই সভামঞ্চে নাকি দেখা যেতে পারে নীতীশকে। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে পটনায় নিজের দলের সকল বিধায়ককে ডেকে পাঠিয়েছেন নীতীশ। সেখানে বসেই পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। নীতীশ এনডিএতে যোগ দিলে দু’টি সম্ভাবনা খোলা থাকবে। এক, বিধানসভা ভেঙে লোকসভা ভোটের সঙ্গেই বিহারে আবারও বিধানসভা নির্বাচন করানো। নয়তো, নীতীশকেই মুখ্যমন্ত্রী পদে রেখে দেওয়া। বিহারে বিধানসভায় মোট আসন সংখ্যা ২৪৩। ম্যাজিক ফিগার ১২২। আরজেডির রয়েছে ৭৯টি আসন। জেডিইউয়ের হাতে রয়েছে ৪৫টি আসন। বিজেপির রয়েছে ৮২টি আসন। বিজেপির হাত ধরলে অনায়াসেই ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছে যেতে পারে নীতীশের দল।
যদিও সূত্রের খবর বার বার ‘দলবদলু’ নীতীশকে আবার এনডিএতে ফেরাতে আগ্রহী নয় বিহার বিজেপির নেতারা। কিন্তু শীর্ষনেতৃত্ব এ বিষয়ে অনেকটাই নমনীয়। মূলত তাঁদের ইচ্ছাতেই আবারও এনডিএতে ফেরার পথ মসৃণ হতে চলেছে নীতীশের। শীর্ষনেতৃত্বের তরফে রাজ্যনেতাদের নীতীশের বিরুদ্ধে কুমন্তব্য করতেও বারণ করা হয়েছে বলে খবর। রাজ্য বিজেপি নেতা সম্রাট চৌধুরীকে ইতিমধ্যে দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়েছেন শীর্ষনেতৃত্ব। সঙ্গে রয়েছেন বিহার বিজেপির প্রবীণ নেতা সুশীল মোদী। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাতে তাঁদের সঙ্গে দেখা করার কথা বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডা এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের।
২০১৩ সাল থেকে এই নিয়ে পাঁচ বার শিবির বদলালেন ৭২ বছরের নীতীশ। শেষ বার, ২০২২ সালে এনডিএ ছেড়ে মহাজোটে যোগ দেন তিনি। লালুর দল আরজেডির সঙ্গে সরকার গড়েন। তার দু’বছর আগেই মহাজোট ছেড়ে এনডিএ-তে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। এ বার ফের মহাজোট ছেড়ে এনডিএ-তে।
বুধবার বিহারের প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, অনগ্রসর (ওবিসি) নেতা কর্পূরী ঠাকুরের জন্মশতবর্ষ কর্মসূচিতে নীতীশের মন্তব্যের পর থেকেই কানাঘুষো শুরু হয়। ১৯৭৮ সালে জনতা পার্টির সরকারের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন কর্পূরী প্রথম বিহারে অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) জন্য সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। জন্মশতবর্ষে তাঁকে মরণোত্তর ভারতরত্ন দেওয়ার সিদ্ধান্তের জন্য নরেন্দ্র মোদী সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ প্রধান নীতীশ। পাশাপাশি তাঁর ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ মন্তব্য— ‘‘জেডিইউ নেতৃত্ব কর্পূরী ঠাকুরের দর্শন অনুসরণ করে চলেছেন। পরিবারের কোনও সদস্যকে আমরা রাজনৈতিক ক্ষমতার বৃত্তে নিয়ে আসি না।’’ কোনও ব্যক্তি বা সংগঠনের নাম না করলেও নীতীশের ওই মন্তব্যের নিশানা আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদ এবং তাঁর পরিবার বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের ধারণা।
এর পরেই মহাজোট শরিক আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদ যাদবের মেয়ে রোহিনী আচার্য নাম না করে একহাত নেন নীতীশকে। জেডিইউ নেতা কেসি ত্যাগী এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘বাচ্চাদের মন্তব্য নিয়ে আমরা মন্তব্য করি না।’’ বিজেপি যদিও দাবি করেছে, এই ঘটনায় লালুর মেয়ের নীতীশের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। সূত্রের খবর, তার মাঝে লালু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফোন করেন স্পিকার অবোধবিহারী চৌধুরীকে। ডেপুটি স্পিকার মহেশ্বর হাজারির রাজ্যের বাইরে যাওয়ার কথা ছিল। সেই সফর তিনি বাতিল করেন। শুক্রবার গোয়া সফরে যাওয়ার কথা ছিল বিহারের রাজ্যপালের। সেই সফরও বাতিল করেছেন তিনি। তার পরেই জল্পনা, তবে কি নীতীশে মহাজোট-ত্যাগ এক প্রকার পাকাপাকি হয়েই গেল! আসনরফার আলোচনাও কি শেষ?