—ফাইল চিত্র।
এই নিয়ে দ্বিতীয় বার। ২১ বছর পরে ফের কংগ্রেসের শীর্ষপদ থেকে সরে দাঁড়াতে চাইলেন সনিয়া গাঁধী।
১৯৯৯ সালে সনিয়া গাঁধীর ‘বিদেশিনি’ পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন কংগ্রেসের তিন নেতা। শরদ পওয়ার, পূর্ণ অ্যাজিটক সাংমা ও তারিক আনোয়ার। বিদেশিনি পরিচয় তুলে সনিয়াকে কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে আটকানোটাই তাঁদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বলে মনে করা হয়। সোমবার কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটিতে সনিয়া গাঁধী শুরুতেই জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি আর অন্তর্বর্তী সভানেত্রী থাকতে চান না। দল নতুন সভাপতি বেছে নিক। ইতিহাস বলে, ঠিক একই ভাবে ১৯৯৯-এর ১৭ মে-ও সনিয়া কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটিতে ঢুকে পদত্যাগপত্র দিয়েছিলেন।
এ বারের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের আগে ২৩ জন কংগ্রেস নেতা দলের পরিচালনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। ১৯৯৯-এ সনিয়া-সহ দলের নেতাদের চিঠি পাঠিয়ে পওয়ার-সাংমা-তারিক বলেছিলেন— দেশের রাষ্ট্রপতি-উপরাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী পদে বিদেশি কোনও বংশোদ্ভূতের বসা অনুচিত। তার পরেই কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে ঢুকে ইস্তফা দিয়ে সনিয়া বলেছিলেন, এই বৈঠকের প্রেক্ষাপট সকলেই জানেন। তাঁর কাছেও পওয়ার-সাংমা-তারিকের চিঠি এসেছে। সেই চিঠিটি তাঁর বিষয়েই লেখা। তাই তিনি দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছেন। বৈঠক থেকেও চলে যাচ্ছেন। এর পরে প্রণব মুখোপাধ্যায় বৈঠক পরিচালনা করতে পারেন বলেও তিনি জানিয়ে দেন। এ দিন ওয়ার্কিং কমিটিতে যেমন কংগ্রেস নেতারা সনিয়াকেই অন্তর্বর্তী সভানেত্রী পদে থেকে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন, তেমনই ১৯৯৯-তেও কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি ঐকমত্য হয়ে তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। দলের নেতাদের অনুরোধে সনিয়া ইস্তফা ফিরিয়ে নেন। সনিয়া কংগ্রেসে সভানেত্রীর পদে থেকে গেলেও পওয়ার-সাংমা-তারিকরা দল ছেড়ে এনসিপি গঠন করেন।
আরও পড়ুন: হাজারে কাজ মাত্র একের! মোদীকে নিশানা রাহুলের
আরও পড়ুন: তৃণমূল থেকে রত্না অপসারিত? ধন্দ জিইয়ে থাকায় ধোঁয়াশা কাননেও
কংগ্রেস নেতারা বলছেন, পওয়ার-সাংমাদের বিদ্রোহের মাত্র এক বছর আগে সনিয়া কংগ্রেস নেতাদের অনুরোধেই দলের সভানেত্রীর দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রেও লোকসভা ভোটে হারের পরে রাহুল গাঁধীর পদত্যাগের জেরে সনিয়া দলের নেতাদের অনুরোধেই অসুস্থ শরীরে ফের অন্তর্বর্তী সভানেত্রীর দায়িত্ব নিতে রাজি হন। রাহুলের পদত্যাগের পরে যখন এআইসিসি নেতারা সব রাজ্যের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন, তখন সকলেই বলেছিলেন, সনিয়াই এই দুর্দিনে দলকে এককাট্টা রাখতে পারেন।
প্রবীণ কংগ্রেস নেতাদের মতে, ১৯৯৯ সালের ওই ঘটনার পরে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে সনিয়ার পায়ের নীচের জমিই শক্ত হয়েছিল। সব থেকে দীর্ঘ সময় কংগ্রেস সভানেত্রীর পদে থেকেছেন তিনি। প্রণব মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘দ্য কোয়ালিশন ইয়ার্স’ বইয়ে লিখেছিলেন, ‘কংগ্রেস পার্টিকে মজবুত করতে সনিয়ার ইতিবাচক অবদান সমকালীন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বিশ্লেষণে যথেষ্ট গুরুত্ব পায়নি।’ এ বারেও মনমোহন সিংহ ও এ কে অ্যান্টনির মতো কংগ্রেস নেতারা তাঁকে সভানেত্রীর পদে থেকে যেতে অনুরোধ করার পরে সনিয়ার অবস্থান ফের দলের মধ্যে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে গেল বলে কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন।