বিধান সৌধে কার্যালয়ের দখিন-দুয়ার দিয়ে ঢুকছেন কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া। ছবি: পিটিআই।
দরজাটা নাকি ‘অপয়া’। বেঙ্গালুরুর মূল প্রশাসনিক ভবন বিধান সৌধের চারতলায় মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়। তার দু’টি দরজা। একটি পশ্চিমমুখো, একটি দক্ষিণমুখো। এই দখিন-দুয়ার নিয়েই যত রটনা। কর্নাটকে সদ্য ক্ষমতায় আসা কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া অবশ্য এ সব সংস্কারকে প্রশ্রয় দিতে রাজি নন। আগেও যখন মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন, দরজা খুলে দিয়েছিলেন। এ বারও তাই-ই করলেন।
দরজা নিয়ে এই ছুৎমার্গ শুরু হয়েছে ১৯৯৮ সাল থেকে। মুখ্যমন্ত্রী তখন জনতা দলের জে এইচ পটেল। ওই বছরই ভোটে হেরে গেলেন তিনি। পড়বি তো পড়, দোষ পড়ল ওই দরজার ঘাড়ে। অপয়া দরজাই নাকি হারিয়ে দিয়েছে তাঁকে। কী সব যেন দোষ আছে বাস্তু মতে! বিদায়ী পটেল মনের দুঃখে দরজা বন্ধ করে দিয়ে গেলেন। সবাই জেনে গেল, ওই ‘অভিশপ্ত’ দরজা ব্যবহার করলে আর ভোটে জিততে হচ্ছে না! বিধান সৌধের কর্মী থেকে শুরু করে, নানা দলের মন্ত্রিমণ্ডলী মায় বিধায়কেরাও অনেকেই সেই থেকে তা-ই মনে করেন। গভীর ভাবে বিশ্বাসও করেন। অতএব বন্ধই থাকল সে দরজা, আরও প্রায় ১৫ বছর। ছ’জন মুখ্যমন্ত্রী এলেন-গেলেন। দরজা খোলার ঝুঁকি কেউ নিলেন না। এ প্রশ্নও কেউ করলেন না যে, অপয়া দরজা বন্ধ থাকার পরেও এত মুখ্যমন্ত্রী বদল কেন! কেউই তো থিতু হচ্ছেন না দীর্ঘ মেয়াদে! সেটা কার দোষ তবে?
২০১৩ সাল। প্রথম বার মুখ্যমন্ত্রী হলেন সিদ্দারামাইয়া। ‘কুসংস্কার’কে দরজা দেখিয়ে দিয়ে আদেশ করলেন, বন্ধ দরজা খোলো! নির্দেশ কার্যকর হল। ২০১৮-তে মসনদে কিন্তু ফেরা হল না সিদ্দারামাইয়ার। একক ভাবে সবচেয়ে বেশি আসন পেল বিজেপি। বি এস ইয়েদুরাপ্পার ১৪ দিনের মুখ্যমন্ত্রিত্বে ছেদ টেনে তবু কংগ্রেস-জেডিএস জোট ক্ষমতা পেল বটে, মুখ্যমন্ত্রী হলেন জেডিএস-এর এইচ ডি কুমারস্বামী। দরজাও ফের বন্ধ হল। কিন্তু তাতে কি গদি বাঁচল? দলবদলুদের নিয়ে দল ভারী করে পরের বছরই ফের ক্ষমতা দখল করে নিল বিজেপি। ইয়েদুরাপ্পা এ বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে সংখ্যাশাস্ত্র মেনে নামের বানান বদলে ফেললেন। ইয়েদুরাপ্পা, বাসবরাজ বোম্মাই— দু’দু’জন মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন এই মেয়াদে। দরজা বন্ধই থেকেছে।
তবে বন্ধ দরজার মাহাত্ম্য ২০২৩-এ বিজেপির ভরাডুবি ঠেকাতে পারেনি। ক্ষমতায় ফিরে এখন আবার দরজা খুললেন সিদ্দারামাইয়া। শনিবার অন্নভাগ্য যোজনা নিয়ে বৈঠকে বসার আগে হঠাৎই তাঁর চোখ পড়ল ওই দরজার দিকে। ‘‘দরজাটা বন্ধ কেন?’’ সকলেই জবাব দিলেন, ‘‘স্যার, বাস্তু!’’ লোকলস্কর নিয়ে তখনই দরজা খুলিয়ে ওই দরজা দিয়েই সিদ্দা ঢুকলেন অফিসে। বললেন, ‘‘স্বাস্থ্যকর মন, পরিচ্ছন্ন হৃদয় আর মানুষের জন্য দরদ যেখানে আছে, শুভ বাস্তু সেটাই।’’ টুইটারেও ছবি-সহ লিখলেন, ‘‘আলো-বাতাস খেলে যেখানে, তার চেয়ে ভাল বাস্তু আর কী আছে? কথা আর কাজ যদি স্বচ্ছ হয়, সবই শুভ হবে।’’ বৈঠক শেষে ওই দরজা দিয়েই বেরোলেন। শনিবার ইত্যাদি মানলেন না কিছুই।
২০১৬-তে একবার সিদ্দারামাইয়াও সংস্কার নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন অবশ্য। তাঁর সরকারি গাড়ির উপরে কাক বসেছিল। কিছুদিন পরে দেখা যায়, সিদ্দা গাড়ি বদল করেছেন। বিরোধীরা তখন সমস্বরে বলেছিলেন, কাক্কেশ্বরই পরিবর্তনের কারণ! সিদ্দারামাইয়া মানেননি তা। তাঁর বক্তব্য ছিল, গাড়িটা পুরনো হয়েছিল। বদল করতেই হত। তবে বায়সে যদি বা ভয় থাকে, দরজায় খিল দিতে যে তিনি রাজি নন, সেটা কিন্তু দু’দু’বারই দেখা গেল। পড়শি রাজ্য তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কেসিআর নাকি এ সব সংস্কার খুব মেনে চলেন। কোথায় বসে কোন কাজ করবেন, সব পাঁজিপুঁথি মেলানো। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই নিয়ে একবার খোঁচাও দিয়েছিলেন তাঁকে। এ বার দরজা খোলার জন্য সিদ্দারামাইয়াকে সাধুবাদ জানান কি না তিনি,সেটাই দেখার।