ল্যান্সনায়েক চন্দ্রশেখর (বামদিকে)। লোহার পাতে লেখা যে ক্রমিক সংখ্যার মাধ্যমে চন্দ্রশেখরের দেহাবশেষকে শনাক্ত করা হয়।
স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে যখন দেশের বীর শহীদ এবং স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মরণ করা হচ্ছে, তখন ৩৮ বছর পরে এক শহিদের দেহাবশেষ পাওয়া গেল সিয়াচেন হিমবাহের একটি বাঙ্কার থেকে। দেহাবশেষটি ল্যান্সনায়েক পদমর্যাদার সেনা জওয়ান চন্দ্রশেখরের, যিনি ১৯৮৪ সালের ‘অপারেশন মেঘদূত’-এ অংশগ্রহণ করেছিলেন। বাঙ্কারে থাকা লোহার পাতে লেখা ক্রমিক সংখ্যা দেখে দেহাবশেষটি চিহ্নিত করা হয়।
ল্যান্সনায়েকের বাড়ি উত্তরাখণ্ডের হলদোয়ানিতে। তাঁর ৬৫ বছরের স্ত্রী এবং দুই মেয়ে রয়েছেন। খুব শীঘ্রই তাঁর দেহাবশেষ হলদোয়ানিতে নিয়ে আসা হবে বলে সেনা সূত্রে খবর মিলেছে। সেখানেই তাঁর পরিবার এবং অন্যান্যরা ল্যান্সনায়েককে শেষশ্রদ্ধা জানাবেন।
সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে ১৯৮৪ সালের অপারেশন মেঘদূত ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অভিযান। এই অভিযানের মাধ্যমে সিয়াচেন হিমবাহের উপর নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব স্থাপন করেছিল ভারত। চিন ও পাকিস্তান সীমান্তের উপর নজরদারি করার জন্য পূর্ব কারাকোরাম রেঞ্জের এই হিমবাহটির বিশেষ কৌশলগত গুরুত্ব আছে।
মেঘদূত অভিযানে ল্যান্সনায়েক চন্দ্রশেখর সেনাবাহিনীর যে দলে ছিলেন, সেই দলের প্রধান দায়িত্ব ছিল পাক সামরিক বাহিনীর হাত থেকে হিমবাহের পয়েন্ট ৫৯৬৫ অঞ্চলকে উদ্ধার করা। রাতে যখন এই দলটি ওই অঞ্চল থেকে পাক বাহিনীকে হঠিয়ে দেওয়ার পর রুটিন টহল দিচ্ছিল, তখন তুষারধসে ১৯ জন সদস্য নিহত হন। এঁদের মধ্যে ১৪ জনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা গেলও পাঁচজনকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। চন্দ্রশেখর এই নিখোঁজদেরই একজন। গ্রীষ্মকালে বরফ গললে প্রতি বছরই সিয়াচেন অঞ্চলে রুটিন তল্লাশি চালায় সেনা। তল্লাশি অভিযান চালানোর সময়েই বাঙ্কারটি খুঁজে পাওয়া যায়।
ল্যান্সনায়েকের স্ত্রী জানিয়েছেন, এতদিন তাঁরা চন্দ্রশেখর ফিরবেন এই আশায় দিন কাটিয়েছেন। বাবার নিরুদ্দেশ হওয়ার সময় মৃত ল্যান্সনায়েকের দুই মেয়েই খুব ছোট। তাই পুরনো স্মৃতি তাঁদের মনে খুব একটা নেই। তবু মায়ের মুখে বাবার কথা শুনে বড় হওয়া দুই কন্যা তাঁদের শহিদ বাবাকে যথাযোগ্য মর্যাদায় শেষশ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে চান।