মুম্বইয়ের বাসিন্দা শ্রিয়া নাহেতা। ২০১৭-তে তিনি তৈরি করেন এক অর্গ্যানিক চাষের সংস্থা।
অর্গ্যানিক ফার্মিংয়ের মাধ্যমে তৈরি শাক সব্জি-সহ বিভিন্ন দ্রব্য বিক্রি করে শ্রিয়ার সংস্থা। সেগুলি তৈরি করেন প্রায় ৫০ হাজার চাষি।
সংস্থার ওয়েবসাইট খুলে অর্ডার দিলেই বাড়িতে পৌঁছে যায় টাটকা ফল সব্জি। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের জনপ্রিয় সব্জি ও ফল পাওয়া যায় সেখানে।
এ ব্যাপারে শ্রিয়া বলেছেন, “স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রায় অর্গ্যানিক খাবারের ভূমিকা রয়েছে। সেই কথা মাথায় রেখেই আমাদের এই প্রচেষ্টা। সেই সঙ্গে চাষিদের লাভের অঙ্ক বাড়ানোও আমাদের লক্ষ্য।’’
লকডাউনের সময় বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতে যানবাহন সমস্যা হলেও অর্গ্যানিক সব্জির চাহিদা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। কোভিডের কারণে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার দিকে নজর দিচ্ছেন অনেকে।
সব্জি-ফল ছাড়াও বিভিন্ন মশলা, আচার, জ্যাম, ঘি, তেলও তৈরি করে শ্রিয়ার সংস্থা। ক্রেতার চাহিদা অনুসারে বানিয়েও দেয় সেগুলো।
কেউ, তেল ছাড়া আচার চাইলেন। তার জন্য তেলের বদলে অ্যাপল সিডার ভিনিগার দিয়ে বানিয়ে দেওয়া হল আচার। এই কাজে স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সাহায্য নেয় শ্রিয়ার সংস্থা।
দক্ষিণ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন শ্রিয়া। সেখানকার পড়াশোনা শেষ করে ২০১৫-তে দেশে ফেরেন তিনি।
কিন্তু এই অর্গ্যানিক ফার্মিংয়ের বিষয়টি তাঁর মাথায় আসে দিদির কাছে ঘুরতে গিয়ে।
তাঁর দিদির নাম অদিতি দুগার। অদিতির একটি রেস্তরাঁ আছে। রেস্তরাঁর খাবার বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ কৃষকদের থেকে সরাসরি সংগ্রহ করেন অদিতি।
সেখান থেকেই অর্গ্যানিক উপকরণ তৈরির কথা মাথায় আসে তাঁর। তার পর অর্গ্যানিক ফার্মিং তৈরির প্রক্রিয়া শেখা শুরু করেন।
এর দু’বছর পর শ্রিয়া সংস্থার ওয়েবসাইট লঞ্চ করেন। যদিও শুরুর দিকে নবাগতা শ্রিয়ার প্রচেষ্টাকে অনেকে পাত্তা দেননি।
শুরুর দিকে সব্জি সরবরাহ করতে অতিরিক্ত খরচও করতে হয়েছে তাঁকে। ধীরে ধীরে সব্জি-ফলের গুণগত মানে আকৃষ্ট হতে থাকেন ক্রেতারা।
কৃষকরাও দেখতে থাকেন এই চাষ করে বেশি লাভ হচ্ছে তাঁদের। ফলে তাঁরাও শ্রিয়ার সঙ্গে কাজ করতে উৎসাহী হয়ে পড়েন।
ক্ষতিকর রাসায়নিক সার ব্যবহারের জেরে কিছু কৃষকের শরীরে ক্ষতি হচ্ছিল। অর্গ্যানিক চাষের সুফল দেখেও তাঁরাও ওই সংস্থার সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করেন।
যেমন, পুণের কাছে একটি গ্রামে থাকেন আকাশ দোংরে। ক্ষতিকর কীটনাশক স্প্রে করে তাঁর চামড়ার মারাত্মক ক্ষতি হয়েছিল। কিন্তু অর্গ্যানিক চাষ শুরু করার পর সুস্থ আছেন তিনি।
লাভের ব্যাপারেও কৃষক কেন্দ্রীক নীতি মেনে চলেন। যার জেরে চলতি বাজারের থেকে ১০-১৫ শতাংশ বেশি টাকা পান কৃষকরা।
যদিও এর জন্য সংস্থার সব্জি ফলের দাম একটু হলেও বেশি। সেটাকে গুরুত্ব দেন না শ্রিয়া। কারণ তিনি জানেন, স্বাস্থয সচেতন ক্রেতারা দামের থেকে গুণগত মানকে বেশি গুরুত্ব দেন।