সিপিএমের সঙ্গে একমঞ্চে যাওয়া ‘কৌশলগত ভুল’ বলে মনে করছে প্রদেশ কংগ্রেস।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) বিরোধিতায় বাংলায় শাসক তৃণমূল এবং বিরোধী বাম ও কংগ্রেস একসঙ্গে প্রতিবাদে যাচ্ছে না, সেই প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে। একই বিষয়ে কেরলে শাসক বামেদের সঙ্গে একমঞ্চে গিয়েও এ বার ভিন্ন সুর উঠে এল বিরোধী কংগ্রেস শিবির থেকে। স্বয়ং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি দলের হাইকম্যান্ডকে চিঠি লিখে জানালেন, প্রতিবাদের বিষয় একই হলেও সিপিএমের সঙ্গে একমঞ্চে যাওয়া ‘কৌশলগত ভুল’। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে এর ফলে বিজপির মেরুকরণ করতে আরও সুবিধা হবে বলে তাঁর আশঙ্কা।
নাগরিকত্ব আইন, এনপিআর এবং এনআরসি-র প্রতিবাদে তিরুঅনন্তপুরমের ‘রক্তসাক্ষী মণ্ডপম’ (শহিদ স্মারক) চত্বরে সত্যাগ্রহ অবস্থানে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে একমঞ্চে শামিল হয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা রমেশ চেন্নিথালা। কংগ্রেসের অন্য নেতারা থাকলেও কেরল প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মুল্লাপল্লি রামচন্দ্রন ওই কর্মসূচিতে ছিলেন না। প্রদেশ কংগ্রেসের অন্দরে তাঁর আপত্তির কথা জানানোর পাশাপাশি এআইসিসি-কেও গোটা বিষয়টি অবহিত করেছেন রামচন্দ্রন। তাঁর মতে, প্রতিবাদ করার জন্য সিপিএমের সঙ্গে একত্রে অবস্থানে গিয়ে কংগ্রেস প্রকারান্তরে আন্দোলনের নেতৃত্ব বিজয়নের হাতে তুলে দিয়েছে! রাজনীতিতে এমন ‘কৌশলগত ভুল’ অনেক সময় বড় বিপদ ডেকে আনে।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির যুক্তি, কয়েক মাস লোকসভা নির্বাচনে তাঁদের সঙ্গেই বামেদের মূল লড়াই হয়েছে। দেড় বছরের মধ্যে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ ক্ষমতায় ফেরার লক্ষ্যে লড়াই করছে। এই সময়ে নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদের নামে বামেদের হাত ধরায় ইউডিএফ এবং এলডিএফ-কে এক করে দেখিয়ে বিজেপি ফায়দা তোলার চেষ্টা করবে। তার চেয়ে পৃথক ভাবে প্রতিবাদ-আন্দোলন করলে বাম ও কংগ্রেস, দুই শিবিরের কর্মী-সমর্থকেরাই উজ্জীবিত থাকবেন। একই কারণ দেখিয়ে ইউডিএফের শরিক আরএসপি ধর্নায় যোগ দেয়নি।
রামচন্দ্রনের আরও বক্তব্য, ‘‘কেরলে সংশোধিত বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (ইউএপিএ) প্রয়োগের বিরুদ্ধে এত প্রতিবাদ হচ্ছে। যে দুই ছাত্রকে ওই কালা আইনে বিজয়নের সরকার গ্রেফতার করেছে, তাঁরাও ঘটনাচক্রে মুসলিম। তার পরেও একসঙ্গে প্রতিবাদে সম্পূর্ণ ভুল বার্তা যাবে।’’
চেন্নিথালার যুক্তি ছিল, জাতীয় স্বার্থে রাজনৈতিক পার্থক্য সরিয়ে রেখে বামেদের সঙ্গে যৌথ প্রতিবাদ হোক। তবে দলের অন্দরে পাল্টা প্রশ্ন উঠে যাওয়ায় তিনি আর প্রকাশ্যে এই নিয়ে মুখ খোলেননি। এআইসিসি-র পরামর্শে কেরলের প্রতি জেলায় কংগ্রেস এখন নিজস্ব প্রতিবাদ কর্মসূচি নিচ্ছে। রাজ্যের এক কংগ্রেস নেতার কথায়, ‘‘বিরোধী পরিসর কোনও ভাবেই বিজেপির কাছে হাতছাড়া করা যাবে না। তার জন্য বাড়তি কর্মসূচিও আমাদের নিতে হবে।’’