বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। —ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের আগে তাঁর বাসভবনে একটি চা-চক্রের আয়োজন করা হয়েছে। রবিবার সকাল সকাল সেই চা-চক্রে যোগ দিতে গেলেন বাংলার শান্তনু ঠাকুর। তিনি গাড়িতে ওঠার পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতেই যাচ্ছেন। সূত্রের খবর, রবিবার সন্ধ্যায় মোদীর সঙ্গে শপথ নিতে চলেছেন আরও কয়েক জন মন্ত্রী। কয়েক জন পূর্ণমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়েই মোদী শপথ নেবেন বলে মনে করা হচ্ছে। চা-চক্রে ডাক পাওয়ায় অনেকের ধারণা, শান্তনু কোনও পূর্ণমন্ত্রীর পদ পেতে পারেন। যদি তা হয়, তবে বাংলা থেকে এই প্রথম কেউ মোদীর মন্ত্রিসভায় পূর্ণমন্ত্রী হবেন। এখনও অবশ্য কোনও তরফে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু জানানো হয়নি।
রবিবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দিল্লিতে মোদীর বাসভবনে চা-চক্র শুরু হয়েছে। সেখানে বেশ কয়েক জন আমন্ত্রণ পেয়েছেন। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে ফোন করে এই চা-চক্রের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বাছাই করা কয়েক জনকেই। অনেকে বলছেন, যাঁরা সকালের এই বৈঠকে যোগ দিয়েছেন, তাঁরাই মোদীর সঙ্গে সন্ধ্যায় মন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন। বৈঠকে শান্তনুর যোগ দেওয়া নিয়ে তাই জল্পনা আরও জোরদার হয়েছে।
রবিবার সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তৃতীয় বারের জন্য শপথ নেবেন মোদী। তবে এ বার তিনি এনডিএ-র শরিকদের উপর কিছুটা নির্ভরশীল। তাই তাঁর মন্ত্রিসভাতেও শরিক দলগুলির একাধিক প্রতিনিধি থাকবেন। ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ইতিমধ্যে দিল্লি পৌঁছে গিয়েছেন এনডিএ-র সকল জয়ী প্রার্থী। রয়েছেন বাংলা থেকে জেতা ১২ জনও। সকলকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে রাষ্ট্রপতি ভবনে পৌঁছে যেতে বলা হয়েছে বলে খবর সূত্রের। প্রত্যেকের জন্য আসন নির্দিষ্ট করা রয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমসিঙ্ঘে, মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জুর মতো রাষ্ট্রনেতারা ইতিমধ্যে দিল্লিতে পৌঁছে গিয়েছেন। অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিরাও আমন্ত্রিত হিসাবে থাকছেন মোদীর শপথগ্রহণের অনুষ্ঠানে। রাতে নৈশভোজের আয়োজনও করা হয়েছে।
২০১৪ সালে মোদী যখন প্রথম বার প্রধানমন্ত্রী হলেন, বাংলা থেকে দু’জনকে প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছিল। তাঁর মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয় এবং সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। পরের বার অর্থাৎ, ২০১৯ সালে মোদী বাবুলের সঙ্গে মন্ত্রী করলেন দেবশ্রী চৌধুরীকে। তার পর ২০২১ সালের জুলাই মাসে এই দু’জনকেই মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মন্ত্রিত্ব পেয়েছিলেন বাংলার চার জন। বনগাঁর শান্তনুকে ওই সময়েই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল জাহাজ প্রতিমন্ত্রী হিসাবে। এ ছাড়া, নিশীথ প্রামাণিক, জন বার্লা এবং সুভাষ সরকারও মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে বার্লাকে এ বার লোকসভা ভোটে টিকিট দেওয়া হয়নি। নিশীথ এবং সুভাষ হেরে গিয়েছেন। মন্ত্রীদের মধ্যে জিতেছেন কেবল শান্তনু। তারই পুরস্কার কি পেতে চলেছেন পূর্ণমন্ত্রীর পদের মাধ্যমে? গুঞ্জন তেমনই। যদিও এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়নি এখনও।
মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখেও শান্তনুকে মন্ত্রিসভায় জায়গা দেওয়া হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলার মতুয়া অধ্যুষিত দুই এলাকাতেই এ বারও বিজেপি জিতেছে। বনগাঁয় শান্তনুর পাশাপাশি রানাঘাটে জিতেছেন জগন্নাথ সরকার। কিন্তু মতুয়াদের মধ্যে শান্তনুর জনপ্রিয়তা এবং গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। তা ছাড়া, সিএএ কার্যকর করা নিয়ে একাধিক বার বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে শান্তনুর মনোমালিন্য হয়েছে। বিজেপির অন্দরে গুঞ্জন, ওই মনোমালিন্য দূর করতেও পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে মতুয়া সঙ্ঘাধিপতিকে।
বাংলা কয়েক জন প্রতিমন্ত্রীও পেতে পারে বলে গুঞ্জন। সে ক্ষেত্রে, তমলুক থেকে জেতা হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, আলিপুরদুয়ারের জয়ী প্রার্থী মনোজ টিগ্গার নামও উঠে আসছে। সব জল্পনার উত্তর মিলবে মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ঘোষিত হলে।